কেন জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ‘জন গণ মন’-র একটি স্তবক গাওয়া হয়? জাতীয় সঙ্গীতের (National Anthem Jana Gana Mana) কথা উঠলেই যে কোনও দেশের মানুষের মনে আবেগের অন্ত থাকে না। দেশের ঐতিহ্য, দেশের সার্বভৌমত্ব, দেশের ঐক্যর প্রতীক হিসাবে গাওয়া হয় এই জাতীয় সঙ্গীত। ভারতে জাতীয় সঙ্গীত ‘জন গণ মন’ লেখা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ৫ স্তবকে ‘জন গণ মন’ লেখা হলেও জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয় মূলত প্রথম স্তবক। কিন্তু কেন? নিয়ম বলছে, মোট ৫২ সেকেন্ডের মধ্যে গাইতে হয় জাতীয় সঙ্গীত। তবে শুধু এই একটিই নিয়ম নয় রাষ্ট্রগান গাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে আরও অনেক নিয়মই। সংক্ষেপে এই গান গাওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলে তা শেষ করতে হয় ২০ সেকেন্ডের মধ্যে। সে ক্ষেত্রে প্রথম ও শেষ স্তবকের শেষের দুই দুই চার লাইন গাইতে হয়। নিয়ম এও বলছে এক মিনিটের বেশি সময় ধরে কখনই রাষ্ট্রগান বা জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যায় না।
১৯৪১ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এই গানের একটি আলাদা সংস্করণ নিয়ে আসেন। বাংলায় থেকে ‘হিন্দুস্তানি’ ভাষায় অনুবাদ হয় জন গণ মন। অনুবাদটি করেন আর্মি ক্যাপ্টেন আবিদ আলি, সুর দেন ক্যাপ্টেন রাম সিং। তারপর থেকেই এই গান গোটা ভারতেই আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে স্বীকৃতি পায় জন গণ মন-র প্রথম স্তবক। এখনও পর্যন্ত এই গানটি ইংরাজি-সহ ২২ ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
৫ স্তবকে রয়েছে পুরো জাতীয় সঙ্গীত
জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে,
গাহে তব জয়গাথা।
জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।
অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত, শুনি তব উদার বাণী
হিন্দু বৌদ্ধ শিখ জৈন পারসিক মুসলমান খৃস্টানী
পূরব পশ্চিম আসে তব সিংহাসন-পাশে
প্রেমহার হয় গাঁথা।
জনগণ-ঐক্য-বিধায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।
পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পন্থা, যুগ যুগ ধাবিত যাত্রী।
হে চিরসারথি, তব রথচক্রে মুখরিত পথ দিনরাত্রি।
দারুণ বিপ্লব-মাঝে তব শঙ্খধ্বনি বাজে
সঙ্কটদুঃখত্রাতা।
জনগণপথপরিচায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।
ঘোরতিমিরঘন নিবিড় নিশীথে পীড়িত মূর্ছিত দেশে
জাগ্রত ছিল তব অবিচল মঙ্গল নতনয়নে অনিমেষে।
দুঃস্বপ্নে আতঙ্কে রক্ষা করিলে অঙ্কে
স্নেহময়ী তুমি মাতা।
জনগণদুঃখত্রায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।
রাত্রি প্রভাতিল, উদিল রবিচ্ছবি পূর্ব-উদয়গিরিভালে –
গাহে বিহঙ্গম, পূণ্য সমীরণ নবজীবনরস ঢালে।
তব করুণারুণরাগে নিদ্রিত ভারত জাগে
তব চরণে নত মাথা।
জয় জয় জয় হে জয় রাজেশ্বর ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।
আরও পড়ুন – স্বাধীনতা দিবসে ‘সেলফি’ তুললে ১০,০০০ টাকা পুরস্কার, ঘোষণা কেন্দ্রের,
প্রসঙ্গত, ‘জন গণ মন’ প্রথমবার গাওয়া হয়েছিল ১৯১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর। কংগ্রেসের সভায় প্রথম এই গান গাওয়া হয়। ওইদিন সভায় হাজির ছিলেন সেই সময়ের কংগ্রেস সভাপতি বিষাণ নারায়ণ ধর এবং ভূপেন্দ্রনাথ বসু ও অম্বিকা চরণ মজুমদারের মতো বড় বড় নেতারা। অধিবেশন হয় কলকাতায়।