দুই ইকো ট্যুরিজম স্পটের উন্নয়ন বদলে দিতে পারে বানারহাটের পর্যটন

দুই ইকো ট্যুরিজম স্পটের উন্নয়ন বদলে দিতে পারে বানারহাটের পর্যটন। রেতির মত সুবিস্তৃত জঙ্গল, দুটি কুড়ি একটি পাতার প্রায় ২৩ টি চা বাগান, আংরাভাসা- সুখরেইতি নদীর মত বেশ কয়েকটি নদী থাকা সত্ত্বেও বানারহাট ডুয়ার্সের পর্যটন মানচিত্রে অনেকটাই পিছিয়ে। রাজ্যে তৃনমূল সরকার আসার পর নব গঠিত এই ব্লকের একদিকে ইন্দো-ভুটান সীমান্তে ভুটান পাহাড় পাদদেশে যেমন তৈরি করা হয় চামুর্চী ইকো পার্ক ও রিসোর্ট তেমনি মোরাঘাট জঙ্গল লাগোয়া গয়েরকাটায় তৈরি করা হয় মধুবনী নেচার পার্ক ও রিসোর্ট।

 

যদিও পরিকল্পনার অভাব ও নির্মাণ কাজের অসম্পূর্ণতার জেরে দুটি ইকো ট্যুরিজম স্পট সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে নি। যদিও সঠিক ভাবে সাজিয়ে তুলতে পারলে এই দুই ইকো ট্যুরিজম স্পট বানারহাটের পর্যটন মানচিত্র বদলে দিতে পারে বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে এলাকাবাসীরা। এতদিন ধূপগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির নিয়ন্ত্রনাধীন ছিল দুটি এই দুই ইকো ট্যুরিজম স্পট। সম্প্রতি বানারহাট পঞ্চায়েত সমিতি গঠন হওয়ার পর এবিষয়ে সাধারন মানুষের আশার পারদ ও চড়েছে অনেকটা। দুই ইকো ট্যুরিজম স্পটের উন্নয়ন সহ এলাকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের দাবি জানিয়েছে বানারহাটের মানুষ।

 

ভারত- ভুটান সীমান্তের ভুটান পাহাড়ের কোলে নৈসর্গিক পরিবেশে ২০১৬ সালে তৈরি করা হয় চামুর্চী ইকো পার্কের। সুখরেইতি নদীর ধারে চারিদিকে হিমেল শীতল পরিবেশের মাঝে তৈরি এই ইকো পার্ক আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। এখানে বর্তমানে চারটে ডিলাস্ক, দুটো স্টান্ডার্ড ও একটি ডরমেটরি রুম রয়েছে। তবে রিসোর্টে যেমন ইলেক্ট্রিক কানেকশনের সমস্যা রয়েছে, তেমনি রুম গুলি তে বর্ষার সময় ছাদ চুইয়ে জল পড়ার অভিযোগ রয়েছে। এই পার্কে সুবুজায়ন এর ওপর কাজ হয়নি ফলে বর্তমানে ধুধু মরুভূমির রূপ পেয়েছে পার্কটি। তবে এই পার্কের সবচেয়ে বর সমস্যা হচ্ছে পার্কের যাওয়ার বেহাল রাস্তা। পাথর বহনকারী ভারী ডাম্পার অত্যাধিক ভাবে চলার কারনে পার্ক যাওয়ার রাস্তা একেবারেই বেহাল হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি সুকৃতি নদীর ওপর সেতু না থানায় বর্ষার সময় প্রায় ৩ মাসের জন্য বন্ধ রাখতে হয় পার্কটি।

অন্যদিকে মধুবনী নেচার পার্ক ও রিসোর্টে পর্যটন দপ্তরের পক্ষে কোটি টাকা ব্যায়ে কাজ হলেও এই পার্কের নিম্নমানের কাজের জেরে বর্তমানে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে পার্কটি। কাজের মিম্ন মানের জেরে নির্মাণের মাত্র ৫ বছরের মধ্যে এই পার্ক ও রিসর্টের দেওয়াল থেকে শুরু করে মেঝে বেহাল অবস্থার রূপ নিয়েছে। পার্কে নৌকা বিহারের কাজ শুরু হলেও তা সম্পুর্ন রূপ পায়নি। হাতির হামলায় পার্কের প্রাচীর ভেঙে গেলেও তা মেরামত করা হয়নি।

আরও পড়ুন – দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার মেলা

গোর্খা ডেভলেপমেন্ট বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তথা চামুর্চীর স্থানীয় বাসিন্দা সন্দীপ ছেত্রী জানান, ‘ চামুর্চি ইকো পার্কের যাওয়ার রাস্তা বেহাল হওয়ার কারনে ও সেতুর অভাবে এই এলাকাটি এখনও সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। আমরা এই বিষয় গুলি বিভিন্ন মহলে জানিয়েছি। আশারাখি এগুলি নিয়ে দ্রুত কাজ করবে সরকার ’ একই কথা বলছেন বানারহাটের সমাজসেবী অনিমিতা চৌধুরী।

পর্যটন ব্যবসায়ীদের এসোশিয়েশন ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফোরাম এর সম্পাদক সায়ন চক্রবর্তী জানান, ‘ গত দুই বছরে করোনার জেরে পর্যটন ব্যবসা তলানিতে ঠেকেছে। ডুয়ার্সের একপ্রান্তে গরুমারা ও অপরপ্রান্তে জলদাপাড়া এই দুই পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যবর্তী এলাকায় মধুবনী ও চামুর্চী ইকো পার্ক অনেক সুন্দর পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হতে পারত। তবে প্রশাসনিক অদূরদর্শিতায় জেরে তা হয়নি। এই দুটি স্পট কে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলা প্রয়োজন। ’

বানারহাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সীমা চৌধুরী জানান, ‘ সবে সমিতি গঠিত হল। আমরা ব্লকের পর্যটন নিয়ে অবশ্যই কাজ করবো। চামুর্চি ও মধুবনী এই দুই স্পটের উন্নয়ন কিভাবে করা যায় তা আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’