‘আজাদী কা অমৃত মহোৎসব’ উদযাপনে ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের মাধ্যমে ‘ঘাট পর হাট’ কর্মসূচি। গঙ্গা নদী ভারতের মানব সভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সভ্যতার আদি লগ্ন থেকেই এই গঙ্গার তীরের উর্বর মাটিতে কৃষিকাজের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে অতীত থেকে বর্তমানের কৃষি ভিত্তিক ভারতীয় সভ্যতা। যার মূল আধার এই গঙ্গাই। জীব বৈচিত্র ও পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রকে অক্ষুন্ন রাখতে এই গঙ্গার জুড়ি মেলা ভার। তাই ভারতীয় সভ্যতায় এই নদীকে মা গঙ্গা নামেই অভিহিত করা হয়েছে।
তবে সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর উন্নয়নের পথে নিত্যদিন কলুষিত হচ্ছে এই নদী। শিল্পের বজ্য পদার্থ থেকে নগর সভ্যতার সমস্ত জৈব বজ্য বহন করতে করতে পরিবেশ দূষণের শিকার হয়ে ওঠে মা গঙ্গা। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে গঙ্গা নদীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে নেওয়া হয় ‘নমামি গঙ্গে’ নামের বিশেষ প্রকল্প। এতে নদীর দূষণের মাত্রা কিছুটা হলেও সামাল দেওয়া সম্ভব হলেও মানুষের সচেতনতা বাড়ছে না সেই ভাবে। তাই আজও সুযোগ পেলেই জ্ঞানে বা অজ্ঞানে এই নদীকেই দূষিত করে চলেছে সাধারন মানুষ।
তাই এই নদীকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হাওড়ার গঙ্গা কমিটির উদ্যোগে সাঁকরাইল ব্লক এলাকাতে শুরু হলো বিশেষ পরিকল্পনা ‘ঘাট পর হাট’। এর মাধ্যমে এই অভিনব প্রক্রিয়ার মধ্যে একদিকে যেমন জন সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব হয়ে ওঠার এক অনন্য প্রচেষ্টাও সকলের সামনে তুলে ধরা হবে। দেশের যে সমস্ত রাজ্য দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত হয়েছে সেই সব রাজ্যের সরকারের একটি নির্দিষ্ট বিভাগ রয়েছে যারা কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করে। পাশাপাশি প্রতিটি জেলাতেও একইভাবে রয়েছে বিশেষ কমিটি। হাওড়া জেলার গঙ্গা কমিটির মাধ্যমে সাঁকরাইল ব্লকের রাজগঞ্জ এলাকার গঙ্গার পারে এই হাটে বহু মানুষের সমাগম হয়।
তাঁদের সামনে পরিবেশ সচেতনতা সহ বজ্য পদার্থ ব্যবস্থাপনা, নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করা ইত্যাদি বহু বিষয়কে সামনে আনা হয়। এতে জন সচেতনতা বৃদ্ধি পাক এটাই উদ্দেশ্য আয়োজক কমিটির। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী নলপুরের বাসিন্দা মিঠু বৈদ্য ও উমারানি পাল জানান, এখানে তাঁরা ছোট ছোট গাছের চারা নার্সারীর মাধ্যমে এনেছেন। নদীতে বজ্য ফেলা বন্ধ করে ও প্লাস্টিকের মতো ক্ষতিকর বস্তু যাতে নদীর জলে না মিশতে পারে তাঁর জন্য সচেতনতা প্রয়োজন। এখানে আসতে পেরে তাঁরা ভীষণ আনন্দিত।
আরও পড়ুন – উন্নততর স্বাস্থ্য পরিষেবায় কয়েকধাপ এগিয়ে গেলো শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজ
পাশাপাশি আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘আজাদী কা অমৃত মহোৎসব’ কর্মসূচির অন্তর্গত এই পরিকল্পনাটি দেশজুড়ে গত ১৫ অগাস্ট থেকে শুরু হয়ে ২ অক্টোবর অব্ধি চলবে। এখানে কুইজ প্রতিযোগিতা, বাউল সংগীত, পুতুল নাচের আসর বসানো হয়েছিল। এছাড়াও বাংলার হারিয়ে যাওয়া লোকশিল্প যাত্রাপালার মাধ্যমেও সকলের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনাতে রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় ও হাওড়া গঙ্গা কমিটির পরিচালনায় সাঁকরাইল ব্লক প্রশাসনের সহযোগিতায় ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর হাওড়ার রাজগঞ্জ এলাকার রথবাড়ির মাঠে অনুষ্ঠিত হলো।
তবে, ভারতের নদী মাতৃক সভ্যতায় গঙ্গা নদীর অবদান ভূগোলের পাতায় বিস্তারিত বর্ণিত থাকলেও আপামর রাজ্যবাসী সেই পাঠ নতুন করে তাঁদের জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে রুপায়িত না করতে পারলে শুধু কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের উদ্যোগ আদৌ সার্থক হবে না এটা নিশ্চিত। তাই দেশের সভ্যতার পাঠ রোমন্থণের মাধ্যমে গঙ্গাকে কবে ‘মা’ রূপে সন্মান দিয়ে এই নদীকে দূষিত হওয়া থেকে সচেতন হবে মানুষ, তাঁর উপরেই সাফল্য নির্ধারিত হবে ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের।