দুঃস্থ, অসহায়দের দেবতার আসনে বসিয়ে পুজো। অভিনব ভাবে মানব পুজো অনুষ্ঠিত হলো দিনহাটায়।মাটির মূর্তি দিয়ে নয়। দেবতার আসনে বসানো হলো দুঃস্থ, অসহায় মানুষকে। তাদেরই পুজো করা হলো। শুধু পুজো নয় তাদের হাতে তুলে দেওয়া হলো শীতবস্ত্র ছাড়াও দুপুরের খাবার। দিনহাটার বয়েজ রিক্রিয়েশন ক্লাবের উদ্যোগে এই পুজো এ বছর দশম বর্ষ।
শনিবার দুঃস্থ অসহায় দুই শতাধিক মানুষকে দেবতার আসনে বসিয়ে পুজো করা হয়। দান নয়, মানব সেবাই ব্রত এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে গত কয়েক বছর ধরে এই পুজো করে আসছেন উদ্যোক্তারা।“দেবতা নেই মন্দিরে , খোঁজ তারে অন্তরে ” অভিনব এই ভাবনাকে সামনে রেখে এদিন এই পুজো বলে উদ্যোক্তারা জানান। যারা ভিক্ষাবৃত্তি করে কোন রকমে দিন কাটান অসহায় ওই মানুষ গুলিকে দেবতার আসনে বসিয়ে রিতীমত কপালে চন্দনের ফোঁটা,গলায় ফুলের মালা পড়িয়ে পুজো করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালের সুপার রঞ্জিত মন্ডল, দিনহাটা পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সাবির সাহা চৌধুরী, দিনহাটা ওকড়াবাড়ি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ দেব, মাতালহাট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত বর্মন, মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী, দিনহাটা শিক্ষক বিশ্বনাথ দেব, ক্লাবের উপদেষ্টা গোকুল সরকার, আজিজুল হক, গোপা পাল থেকে শুরু করে অনেকেই ।পুজোর উপকরনে কাঁসর,ঘন্টা,শঙ্খ থেকে উলুধবনি কোন কিছুরই খামতি ছিল না।
দুস্থ অসহায় মানুষগুলো এদিন মানব পুজোর মধ্য দিয়ে পুজো পেয়ে বেজায় খুশি। পুজো চলাকালীন এদের অনেকের চোখেই তখন আনন্দ অশ্রু। এদের খালেদা বেওয়া, মধ্যম বর্মন, সরস্বতী মোদক জানান আজকের এই পুজোর অনুষ্ঠান ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। সমাজে আমরা বঞ্চিত অবহেলিত। আজ আমাদেরকেই দেবীর আসনে বসিয়ে পুজো দিল ক্লাবের সদস্যরা।
এদিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রঞ্জিত মন্ডল, রানা গোস্বামী, সাবির সাহা চৌধুরী থেকে শুরু করে সকলেই অভিনব এই উদ্যগের প্রশংসা করেন ।সমাজে যত বেশী এধরনের অনুষ্ঠান হবে সমাজ তত বেশী এগিয়ে যাবে।একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় যে মানসিকতা আজকের সমাজে কিছুটা হলেও খামতি দেখা গেলেও এধরনের অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সেটা আরও বেশী আটুট করবে।সম্প্রীতির মেল বন্ধন তৈরী হবে।
পুজোর পর দুঃস্থ অসহায় এই মানুষ গুলির অনেকেই বলেন,“কঠিন এই পরিস্থিতিতে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে। সমাজে আমরা ব্রাত্য হলেও তাদের কে খুজে বের করে দেবতার আসনে বসিয়ে পুজো করা হয়। খাবারের পাশাপাশি শীতবস্ত্র দেওয়া হয়। খুব ভাল লাগছে।”
আরও পড়ুন – মহার্ঘ্যভাতা অবিলম্বে প্রদানের দাবি তুলে শিলিগুড়ি মহকুমা শাসকের দফতরে অভিযান
এই মানব পুজো এবছর দশম বর্ষ বলে সম্পাদক অর্ঘ্য কমল সরকার, উপদেষ্টা গোকুল সরকার জানান। অর্ঘ্য বলেন,“ মানুষের মধ্যেই দেবতা এই ভাবনাকে তুলে ধরতেই দুঃস্থ মানুষদের দেবতার আসনে বসিয়ে পুজো করা হয়। তাদের দুপুরের খাবার দেওয়া ছাড়াও শীত বস্ত্র তুলে দেওয়া হয়।” এ দিন এই পুজোর মধ্যে দিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের উপস্থিতি কে ঘিরে ক্লাব প্রাঙ্গণ তীর্থ ক্ষেত্র হয়ে উঠে বলে উদ্যোক্তাদের দাবি। পুজো চলাকালীন উপস্থিত সুস্থ অসহায় মানুষগুলো উলুধ্বনি দিয়ে সকলকে আর উৎসাহিত করেন।