দেশী গরুর দুধ খাওয়াতে খামার গড়েছেন তরুন শুভব্রত শিকদার। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে রায়গঞ্জবাসীকে স্বাস্থ্যকর দেশী গরুর দুধ খাওয়ানোর প্রচেষ্টায় খামার গড়েছেন রায়গঞ্জের তরুন উদ্যোগপতি শুভব্রত শিকদার। তাঁর এই উদ্যোগে পারধা অঞ্চলে তৈরী হয়েছে এক ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা।
পারধা গ্রামের কৃষিজীবী সাধারণ মানুষ মুলত শাক, সবজি ও ফুলের চাষের ওপর নির্ভরশীল। সেখানেই শুভব্রত শিকদারের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে দেশী গরুর দুধকে প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করার এক প্রচেষ্টা। শুভব্রত বাবু বলেন, ‘লকডাউন চলাকালীন সময়ে গৃহবন্দী ছিলাম। এই পরিস্থিতিতে কিছু একটা করতে হবে, এই মানসিকতা নিয়ে নতুন কিছু কাজ করার ভাবনা চিন্তা শুরু করি। তখন ইমিউনিটি নিয়ে বহু মানুষ চিন্তিত ছিল। তাই ভেবে চিন্তে দেখলাম, স্বাভাবিক উপায়ে ইমিউনিটি বৃদ্ধি করতে গরুর দুধ হল সবচেয়ে উপকারী। তাই সাধারণ মানুষকে গরুর দুধ খাওয়ানোর প্রচেষ্টায় এই উদ্যোগে নেমে পড়ি।’
শুভব্রত বাবু জানান, তার গবাদি পশুর ফার্ম থেকে উৎপাদিত দুধ, ইতিমধ্যেই রায়গঞ্জ শহর ও শহরতলী এলাকায় ব্যাপক চাহিদা তৈরি করেছে। চাহিদা মত যোগান দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এদিন পড়ন্ত বিকেলে একপাল ভারতীয় শাহীওয়াল গরুর ফার্মে গিয়ে দেখা গেল, ফার্মের অন্যান্য কর্মচারীদের মত শুভব্রত বাবুও গবাদি পশুর পরিচর্যার কাজে হাত লাগিয়েছেন। লক্ষী, সুন্দরী সহ বিভিন্ন নামে ডাকছেন রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে আসা শাহীওয়াল গরুদের। উদ্যোগপতি বলেন, ‘এখন এখানে ৯ টা দুধ দেওয়া গরু এবং ৮ টা বাছুর রয়েছে। গরুগুলোর দুধ ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া ফ্রি করে আবারও ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় রাখা হয়।
তারপর প্রয়োজন মত বাজারে পৌঁছে দেওয়া হয়।’ তাঁর কথায়, ‘একটা ডেয়ারি ফার্ম তৈরি করতে সবমিলিয়ে ৩ বছর লাগে, তাই আমরা একেবারে প্রাথমিক স্তরে রয়েছি। আশা করি, রায়গঞ্জ শহরবাসী নিজেরা স্বাস্থ্য সচেতন হলে A টু প্রোটিন যুক্ত এই দুধ খাবে।’ ফার্মে কাজ করছিলেন পারধার বাসিন্দা মিলন কুমার সরকার। তিনি বলেন, ‘আমি ছয় মাস ধরে এখানে কাজ করছি। এই ফার্মের একেকটা গরু ১০/১২ কেজি করে দুধ দেয়। আমি সেই দুধ সংগ্রহের কাজ করি।এরপর অর্ডার অনুযায়ী বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।’
আরও পড়ুন – কমনওয়েলথে সবচেয়ে সফল ভারতীয় অ্যাথিলট কে?
এখানেই প্রথম দিন থেকে গরু দেখাশোনার কাজ করছেন কদম বর্মন। তিনি বলেন, ‘খড় এবং দানাদার খাদ্য খাওয়ানো হয়। এখানেই কিছু দানাদার খাদ্য খাবার তৈরিও করা হয়। উৎপাদিত দুধ স্থানীয় গ্রামবাসীরা খুব পছন্দ করছেন।’ নয়া জমানার এই প্রতিবেদককে খামার ঘুরিয়ে দেখানোর ফাঁকে শুভব্রত বাবু শোনাচ্ছিলেন তাঁর আগামী পরিকল্পনার কথা। ইতিমধ্যেই গরুর গোবর থেকে এখানে বায়ো গ্যাস তৈরি হচ্ছে। আগামী দিনে ফার্মের উপার্জন বৃদ্ধিতে গোবর থেকে ফুলের টব তৈরির পরিকল্পনা থাকছে।
এছাড়াও গবাদি পশুর প্রস্রাবকে প্রসেসিং করে কীটনাশক হিসাবে ব্যবহারের পরিকল্পনা থাকছে। ছোট আকারে চলছে জৈব কম্পোস্ট সার তৈরির কাজ। এসব পরিকল্পনা যদি সঠিকভাবে রূপায়িত হয়, তাহলে রায়গঞ্জ শহরবাসীর বৃহত্তর অংশ পাবে একেবারে খাঁটি গরুর দুধ। এই উদ্যোগ সফল করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা দেখা গেল শুভভ্রত বাবুর দৃপ্ত চোখে। সরকারি আধিকারিকেরাও এই শিল্পকে পাখির চোখ করে জেলায় এমন খামার তৈরির পরিকল্পনা শুরু করেছেন।