নাগরের পাট শিল্প পার্কে থাকে গরু, বসে জলসা, হতাশ জেলাবাসী। উত্তর দিনাজপুর জেলার করনদিঘী ব্লকের নাগর নদীর তীরে বছর ২০ আগে, কয়েক বিঘা জমির ওপর শুরু হয়েছিল জুট পার্ক স্থাপনার কাজ। আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে সেই পাট মিল তৈরির আনুষ্ঠানিক সূচনা হলেও ভাগ্যের পরিহাসে আজও চালু হল না সেই জুট পার্ক।
পাট মিলের জন্য তৈরি হওয়া কংক্রিটের ৩টি বিশালাকার বিল্ডিংগুলি এখন পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ ব্যবহার করছেন একে গোয়ালঘর হিসেবে। আবারও কেউ ধানের গোলা হিসেবে একে ব্যবহার করছেন। উল্লেখ্য, রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীর উদ্যোগে কলকাতার একটি নামী জুট মিলের মালিক, সামান্য দামে জমি কিনে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলেন। প্রিয়বাবুর প্রয়াণের পর ওই কোম্পানি সব কিছু গুটিয়ে নেয়। অর্ধ সমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বিল্ডিংগুলি।
গ্রামের মানুষ নিজেদের ইচ্ছে মত ব্যবহার করছেন বিল্ডিংগুলি। একটি বিল্ডিংয়ে জাতীয় সড়ক নির্মাণকারী সংস্থার শ্রমিকেরা থাকছেন।এদিন সকালে জুট পার্কের নির্মিয়মান বিশালাকার বিল্ডিংয়ের ভেতরে গিয়ে দেখা গেল,৪ টি মোটর বাইক পড়ে রয়েছে।কোনো মানুষের দেখা নেই। এক কোণে রাখা রয়েছে ট্রাক্টর। চারিদিকে ধানের খড়ের ঢিপি।বিল্ডিংয়ে ঢুকতে দেখা গেল, একদিকে লেখা আছে মহিলা, অন্যদিকে লেখা আছে পুরুষ। যদিও কি কারনে পোস্টারগুলি সাঁটানো আছে প্রথমে বোঝা না গেলেও পরে জানা যায়, পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে কয়েকদিন আগে জালসা হয়েছে।
আরও পড়ুন – কর্মীদের চাঙ্গা করতে মাঠে উদয়ন
বিল্ডিংয়ের আরও ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল ছাঁদে ওঠার জন্য বড় বড় দুটি কংক্রিটের সিড়ি রয়েছে। বিশালাকার ছাঁদে দিন-রাত জমিয়ে যে আড্ডা হয় তা এক প্রকার নিশ্চিত হওয়া গেল। কিছুক্ষণ পড়েই একজনকে দেখা দুটো গরু নিয়ে ঢুকছেন। অচেনা মানুষদের দেখেই জিজ্ঞাসা আপনারা কে? সাংবাদিকের পরিচয় দিতেই উনি জানালেন তার নাম আনসার আলি। বাড়ি বিলাসপুর।
এখানে প্রতিদিন রাতে গরু রাখেন, সকাল হলেই গরুগুলি বের করে মাঠে দেন।আনসারি আলি জানান, আমার বাড়ি বিলাসপুরে। ফাঁকা জায়গা পড়ে আছে দেখে এখানে আমার গরু গুলোকে রাখি। রাতে এখানে রাখলেও সকালে বের করে নিয়ে যাই। পাশের আরেকটি অর্ধনির্মিত বিল্ডিংয়ে গিয়ে দেখা গেল,জাতীয় সড়ক নির্মাণকারী সংস্থার দুই শ্রমিক নিতাই হালদার ও বিট্টু হালদার বাইরে বিশ্রাম নিচ্ছেন।তাদের বাড়ি ফারাক্কায়। নিতাই জানায়, এই বিল্ডিং সম্পর্কে কিছু জানিনা। আমরা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এখানে আছি। কাজ শেষ হলে বেরিয়ে যাব।
এদিকে করনদিঘীর বিধায়ক গৌতম পাল ও রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী দুজনেই জানান, ওই পাট মিল তৈরির জন্য বেশ ভালো পরিমাণ ভর্তুকি নিয়ে জমি কিনেছিলেন কোলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থা। তারা কাজ সমাপ্ত না করে পালিয়ে গেছে। পাশাপাশি, তাদের জমির ওপর দিয়ে তৈরি হওয়া নতুন জাতীয় সড়ক থেকে বহু পরিমানে অর্থ পেয়েছেন।
ওরা আর ফিরবে বলে মনে হয় না। এরকম অবস্থায় ওই বেসরকারি কোম্পানির মালিককে ফোনে পাট শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সদ্য আমার বাবা তথা ওই শিল্পের প্রতিষ্ঠাতার প্রয়ান ঘটেছে। তাই কাগজপত্র বুঝে নিলে সবটা বলতে পারব। যদিও জেলা শিল্প দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, ইতিমধ্যেই ওই জায়গায় স্থাপিত হতে চলা পাট মিলটিকে অলাভজনক বলে চিহ্নিত করে কাগজ তৈরি হয়েছে বলে শুনেছি। এরকম অবস্থায়, বৃহৎ শিল্প হীন জেলায় এভাবে একটি সম্ভাবনার অঙ্কুরেই বিনাশ হওয়ায় আশাহত জেলাবাসী।