Deprecated: version_compare(): Passing null to parameter #2 ($version2) of type string is deprecated in /home/u517603494/domains/shinetv.in/public_html/wp-content/plugins/elementor/core/experiments/manager.php on line 170
পান্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি কিরিটি মুখোপাধ্যায়, এক অতি সাধারণ কিশো...

পান্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি কিরিটি মুখোপাধ্যায়, এক অতি সাধারণ কিশোরের ‘হার না মানার’ কাহিনী

পান্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি কিরিটি মুখোপাধ্যায়, এক অতি সাধারণ কিশোরের ‘হার না মানার’ কাহিনী

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

পান্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি কিরিটি মুখোপাধ্যায়, এক অতি সাধারণ কিশোরের ‘হার না মানার’ কাহিনী। আজ অবক্ষয়িত সমাজে হেরে যাওয়ার গল্প শুনতে শুনতে মানুষ ক্লান্ত। আজকের প্রতিবেদন এমন একজন মানুষকে নিয়ে যার জীবনটাই এক সংগ্রাম। কিন্তু, সে হেরে যায়নি। আজীবন কঠোর লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আজ তিনি পান্ডবেশ্বরের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। তিনি কিরিটি মুখোপাধ্যায়। কিরিটির বয়স যখন ‘ছয়’, তখন মারা গিয়েছেন তার পিতা বিজয় মুখোপাধ্যায়। ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে ‘মা’ পুষ্পরানী দেবীর লড়াই শুরু হল সেই তখন থেকেই।

 

পাড়ার গৃহশিক্ষক তাকে পড়াতেন ঠিকই, কিন্তু তার বিনিময়ে, বালকটিকে তার বাড়ির কাজ করে দিতে হত। পরিস্থিতি এতটাই বিমুখ ছিল তার, তিনি যখন ক্লাস সেভেনে পড়েন, স্কুলের প্রার্থনার লাইন থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কারণ, তার কাছে স্কুলের উপযুক্ত পোশাক ছিল না। ধার করে পোশাক জোগাড় করে স্কুলে যাওয়া, শেষমেশ পরিস্থিতির চাপে সে পড়াশোনা বেশিদিন চালাতে পারল না।

 

অভাবের সংসারের সভাবতই দাদা-বৌদির সাথে মনোমালিন্য, মা-ছেলে লোকের বাড়ি-বাড়ি কাজ করে দিন গুজরান করতে বাধ্য হয়ে পরেন। পরবর্তীতে, সংসারের হাল ধরতে সেই কিশোরটি ঢুকে পড়লো রাজমিস্ত্রির সঙ্গ দিতে লেবারের কাজে দৈনিক ‘দশ’ বা ‘এগারো’ টাকা মজুরীতে।

 

সময় আবরও তার বিমুখ। ছোট ছেলেটি একবস্তা সিমেন্ট দোতলায় পৌঁছাতে পারতো না। কিন্তু, দিনের শেষে পাওয়া যাবে ‘দশ’ টাকা। যার প্রয়োজন তখন ওই কিশোরের কাছে অনেক। বছরখানেক পর তার শরীর আর সাথ দিল না। অগত্যা, সেই কাজ তাকে ছেড়ে যেতে হল আসানসোলের নীলু উপাধ্যায়ের চায়ের দোকানে। মাসিক বেতন ২০০ টাকা। এক অন্তহীন সংগ্রাম। কিন্তু, চোখে ‘স্বপ্ন’ ছিল, সমাজের পরিবর্তন ও সময় বদলের। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক কিছুই বুঝতে শুরু করল শিশু থেকে কিশোর, কিশোর থেকে যৌবনে প্রবেশ করা কিরিটি মুখোপাধ্যায়।

 

সে বুঝল সমাজ পরিবর্তনে নিজের কোন ভুমিকা পালন করতে হলে, প্রবেশ করতে হবে ‘রাজনীতির আঙিনায়’। শুরু রাজনীতিতে প্রবেশ। জাতীয় কংগ্রেসে প্রবেশ করল কিরিটি মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেতা অমূল্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে। পাশাপাশি সে শুরু করল ‘টার্গেট স্কিম’-এর ব্যবসা এবং সঙ্গে দাদার লাইসেন্সে ইসিএল-এর ঠিকাদারীর কাজ। ১৯৯৮ সালে গঠিত হল ‘তৃণমূল কংগ্রেস’। যোগ দিলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে রাজনীতির জন্য তৃনমূল কংগ্রেসে। জন্ম লগ্নেই তৃনমূল কংগ্রেসে যোগ দেন কিরিটি মুখোপাধ্যায়। ২০০০ সালে তার জীবনে আসে তার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

আরও পড়ুন – পূজার দিনগুলিতে গোটা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় বাজবে না ডি.জে

তার হাত ধরেই আজও চলছে তার রাজনীতির সংগ্রাম। ২০০৪ সাল, উপনির্বাচনে তৎকালীন শাসকদল বামফ্রন্টের হাতে নিগৃহীত হন বুথ কর্মী কিরিটি মুখোপাধ্যায়। শুধু তাই নয় তৎকালীন শাসকদল তার ঠিকাদারী বন্ধ করে দেয় ও তাকে ধর্ষণের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়। কিন্তু, সমস্ত গ্রামের মানুষ ছিল কিরিটির সঙ্গে, সঙ্গে ছিল তার অজস্র বন্ধুরা। তাকে থামিয়ে দেওয়া যায় নি। ২০০৭ সালে তাকে ‘দল’ দায়িত্ব দেয় নবগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি পদের। অবশেষে ২০১১ সালে তার দল ‘তৃণমূল কংগ্রেস’ রাজ্যে ক্ষমতায় আসে। রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় মা-মাটি-মানুষের সরকার।

 

এনইআরজিএস প্রকল্পের কাজে তার দক্ষতা তাকে সমস্ত ব্লকে পরিচিত করে তোলে। এরমধ্যেই বিবাহ বন্ধনে বেঁধে যান কিরিটি। ২০১৩ সালে তৃনমূল দলের হয়ে তার স্ত্রীকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়। বিজয়ী হন কিরিটি জায়া। ২০১৮ সালে তাকে পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধক্ষ করা হয়। বর্তমানে কিরিটি মুখোপাধ্যায় পান্ডবেশ্বরের ব্লক সভাপতি। স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে এক সফল গৃহস্থ হয়েছে তাঁর।

 

একেই হয়ত বলে, জীবন এক অন্তহীন সিঁড়িভাঙ্গার গল্প। সেদিনের সেই অসহায় বালকটি অনেক কষ্ট এবং বিভিন্ন সময় জীবনের বিভিন্ন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে, কঠিন সিঁড়ি পার করে উঠে এসেছে অনেকটাই। সিঁড়ির ধাপে ধাপে হয়তো সে পেয়েছে অনেকের ভালবাসা, সাহায্য। কিন্তু, আসল সম্পদ ছিল তার ‘উদ্যম’। না হার মানার দৃঢ় বিশ্বাস। সে বলে, এখনও তার সিঁড়িভাঙা শেষ হয় নি। লড়াই জারী রয়েছে। সে ভোলেনি তার দারিদ্রতার দিনগুলি। তাই সে চায়, গ্রামের মানুষগুলোর জন্য পানীয় জল, রাস্তা, শিক্ষার ভালো ব্যাবস্থা। তাই তার সিঁড়িভাঙা এখন শেষ হয় নি।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top