Deprecated: version_compare(): Passing null to parameter #2 ($version2) of type string is deprecated in /home/u517603494/domains/shinetv.in/public_html/wp-content/plugins/elementor/core/experiments/manager.php on line 129
শীতল পাটি বাংলার সুপ্রাচীন কুটির শিল্পের নাম

শীতল পাটি বাংলার সুপ্রাচীন কুটির শিল্পের নাম

শীতল পাটি বাংলার সুপ্রাচীন কুটির শিল্পের নাম

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

শীতল পাটি বাংলার সুপ্রাচীন কুটির শিল্পের নাম। শীতল পাটি বাংলার সুপ্রাচীন এক কুটির শিল্পের নাম। শীতল পাটি আমাদের সভ্যতা, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের অংশ। এছাড়া কোচবিহারের ধলুয়াবাড়ী পাটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যেরও অংশ। কোচবিহার ১ নং ব্লক এ অবস্থিত এই এলাকার বর্তমান জনসংখ্যা ১৩৭৬৪ যার মধ্যে পুরুষ রয়েছে ৭০৯৯ ও মহিলা ৬৭৪৫। বর্তমানে ওই এলাকার ৭৫.৮৪ শতাংশ শিক্ষিত। কোচবিহার জেলা আনন্দধারা সেল জানা গেছে বর্তমানে ২০০০ পরিবার এই পার্টি শিল্পের সাথে যুক্ত রয়েছে, যার আর্থিক 5 থেকে সাত কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে বলে জানা গেছে।

 

এক সময় সারাবিশ্বে ছিল শীতল পাটির খ্যাতি। আমাদের গৃহস্থালির নানা দরকারি জিনিসের মধ্যে বিশেষ স্থানজুড়ে আছে এ পাটি। গরমের সময় এ শীতল পাটির ঠাণ্ড পরশে শান্তি ও ক্লান্তি দূর করে। মানুষের জীবনযাত্রার এক অনন্য অনুষঙ্গ হচ্ছে শীতল পাটি। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার এ যুগে এসেও পাটির চাহিদা এতটুকু কমেনি।

শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় ফুটে উঠে বর্ণিল ফুল, ফল, পশুপাখি প্রিয়জনের অবয়ব এমনকি জ্যামিতিক গাণিতিক নকশাও। শীতল এ শীতল পাটিকে ঘিরে যুগে যুগে কত গান, কত কাব্য রচিত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।

 

“আসুক আসুক মেয়ের জামাই, কিছু চিন্তা নাইরে, আমার দরজায় বিছাই থুইছি , কামরাঙা পাটি নারে” পল্লীকবি জসিমউদদীন তাঁর নকশীকাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থে কামরাঙা নামক শীতল পাটির বর্ণনা এভাবেই দিয়েছেন। আগের দিনে যখন বিদ্যুৎ ছিল না, তখন কাঁথা বা তোশকের ওপর মিহি বেতের নকশি করা এক ধরনের পাটি ব্যবহার হতো। তাতে গা এলিয়ে দিলে শরীর বা মনে শীতল পরশ অনুভূত হতো। তাই বোধহয় নাম দেওয়া হয়েছিল শীতল পাটি। শীতল পরশের পাশাপাশি বর্ণিল নকশা সবাইকে মুগ্ধ করে।

 

পাটিপাতা চাষ পরিবেশবান্ধব, জলবায়ু সহায়ক। এই খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ ও পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে।

আমাদের দেশে পাটির রয়েছে নানা ধরনের নাম ও ব্যবহার। শুধু শয্যা বা বসার জন্য নয়; বিদ্যুতের পাখার অবর্তমানে অতীতে জমিদার বাড়ি ও সরকারি অফিস আদালতে শীতল পাটির মাদুর দিয়ে টানা পাখার ব্যবহার ছিল। আজকাল এ শীতল পাটি শুধু বিছানায় ব্যবহার হয় না, বরং রুচিসম্মত সাজসজ্জার উপকরণ, বাতির জন্য শেড, কার্পেটের বদলে নকশী মাদুর, খাওয়ার টেবিলে ছোট আকারের নকশী ম্যাট, চশমার খাপ, সুকেস, ব্যাগ, দেয়াল হ্যাঙ্গার ইত্যাদিতে শীতল পাটির বহুল চাহিদা রয়েছে। ফলে শীতল পাটি বহুদিন ধরে ব্যবহার প্রচলিত হওয়ায় এর দামও এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া শীতল পাটিকে চিত্তাকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন ডিজাইন ও মোটিভ ব্যবহার করা হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের উপকরণ হিসেবে শীতল পাটি ব্যবহার হয়ে আসছে বহুযুগ ধরে।

 

শীতল পাটির প্রধান উপাদান হলো মোরতা। এটি এক প্রকারের নলখাগড়া জাতীয় ঘাস। অঞ্চল ভেদে কোথাও মোরতাকে হারিযাতা গাছ, মোস্তাক আবার কোথাও পাটিগাছ বা পাইত্রা বলা হয়ে থাকে। এ গাছ ঝোঁপ-ঝাঁড়ে, জঙ্গলে, জলাশয়, রাস্তার ধারে, পাহাড়ের পদতলে আপনা আপনি জন্মে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, খুলনা ও সিলেট অঞ্চলে শীতল পাটি তৈরি হয়। তবে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে উন্নত ও উৎকৃষ্টমানের এবং সবচেয়ে বেশি শীতল পাটি তৈরি হয়। সিলেটের শীতল পাটির চাহিদা দেশে-বিদেশে প্রচুর। বিশেষত নিম্নাঞ্চলে মোরতা আগাছার মতোই প্রচুর পরিমাণে জন্মে। কোনো কোনো বাড়িতে বেড়ার বদলে পর্দার জন্য চারিদিকে ঘিরে মোরতা লাগানো হয়।

আরও পড়ুন – কর্মীদের চাঙ্গা করতে মাঠে উদয়ন

গরমে দেহ মন জুড়ায় যে শীতল পাটি তার পেছনে রয়েছে একদল নারী-পুরুষ-শিশুর দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম। মোরতা গাছ কেটে প্রথমে ছাঁটা হয়। তারপর প্রতিটি মোরতা বটি বা ছুরি দিয়ে লম্বালম্বি তিন ভাগে কেটে নিপুণ হাতে বেতি তৈরি করে ভাতের মাড়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। পরে ভাতের মাড় ও পানির মিশ্রণে সেগুলো সেদ্ধ করা হয়। সেদ্ধ বেত পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে শুরু হয় পাটি বোনার কাজ। মোরতার উপরিভাগ দিয়ে বানানো হয় মসৃণ এ শীতল পাটি।

 

অসম্ভব ধৈর্য আর চমৎকার নৈপুণ্যের সমাহারে সমৃদ্ধ একটি শিল্পকর্ম শীতল পাটি বুনন কাজ। দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে শীতল পাটি শিল্পের সঙ্গে জড়িত থেকে অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন। অনেকে এ পেশা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই এ পেশা হারিয়ে যাচ্ছে।

শীতল পাটি শিল্পের রাষ্ট্রপতি পুরুস্কার শ্রীমতি টগর রাণী দে বলেন, বংশগত পর্যায়ে আসেন শীতল পাটি তৈরি পেশায়। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমাদের বাপ-দাদা ও তার পূর্বপুরুষরা এ পেশায় জড়িত। আমরা সবাই এ পেশার ওপর নির্ভরশীল,তারা কেউ কেউ অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top