বাহরিন-এর দুর্গাপুজো

বাহরিন-এর দুর্গাপুজো

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

বাহরিন-এর দুর্গাপুজো। বাহরিন-এর দুর্গাপুজোর ভাবনা শুরু হয় ১৯৮৫ সাল থেকে। সে বছর বিজয়া সমাবেশে একটি ছোট্ট মেয়ে দুর্গা সাজে। ১৯৮৮-তে কয়েকজন বাঙালি মিলে ভাবলো এখানে দুর্গা পুজো শুরু করলে কেমন হয়। তারপর ১৯৮৯-এ কিছু মানুষের সাহসে, কিছু মানুষের শঙ্কায় এই মুসলিম দেশে বাঙালির দুর্গাপূজা শুরু হয়। ১৯৮৯-৯০ সালে প্লাইউড-এ মায়ের কাটআউট বানানো হয়। ১৯৯৯-এ প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে দুর্গামূর্তি তৈরি হয়। বাহরিন-এরসেই প্রথম মুর্তিপূজা শুরু হয় বাঙালিদের হাত ধরে।

 

পরবর্তীকালে অন্যান্য প্রদেশের ভারতীয়রা তা অনুসরণ করেন। চার হাজার বছর পুরনো দিলমান সভ্যতায় মৃৎশিল্প বিখ্যাত ছিল। নব্বই দশকের গোড়া থেকে বাহরিনের কুমোরদের শিখিয়ে নিয়ে, তাদের হাতে তৈরি হতে লাগলো মায়ের পুজোর প্রদীপ, ধুনুচি, সহস্রপ্রদীপ। ঘটল দুই প্রাচীন সভ্যতার এক অদ্ভুত মেলবন্ধন। দেশভাগ, বিশ্বব্যাপী মন্দা, বেকারত্ব বাঙালির যৌথ পরিবারগুলোকে ভেঙে দিয়েছিল। আজ শতকরা ৯০ ভাগ বাঙালি যৌথ পরিবারের স্বাদ নেয় টিভি সিরিয়ালের মধ্যে দিয়ে। তবে কিছু ভাগ্যবান বাঙালি, যারা অন্যদেশে নিজেদের মতো করে একটা যৌথ পরিবার তৈরি করে নিয়েছি।

 

এই পরিবার কোনও বাড়ি নয়, একটা ক্লাবকে ঘিরে তৈরি। তাই এর বারান্দার রোদ্দুরে মা-কাকিমারা গল্প করে না বা ছাদে আচার কিংবা বড়ি শুকোয় না। ছোট্ট সদস্যরা ঠাকুমাকে ঘিরে গল্প শোনে না। এই পরিবারের ছোটরা বড় হয় একলা ঘরের কোণে, কম্পিউটার বা স্মার্টফোনকে সঙ্গী করে। আমাদের পরিবার আকার পায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে ঘিরে। তার মধ্যে দুর্গাপূজা সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান। স্কুল, কলেজ, অফিস ছুটি থাকুক বা না থাকুক, প্রতিদিনের তিথি ও যথাযথ নিয়ম মেনে হয় আমাদের পুজো। খুব সকালে পুজো হলে মেয়েরা রাত জেগে পুজোর আয়োজন করেন।

আরও পড়ুন – মহালয়ার আগে ধুলো ঝেড়ে রেডিও সারাচ্ছে বাঙালি

পুজোয় আগে সাধারণত থিমের অতটা চল থাকতো না। চোখ ধাঁধানো প্যান্ডেলও থাকে না। থাকে না মাথা দোলানো কাশফুল কিংবা শিউলির গন্ধ। আমাদের সদস্যরা নিজেদের সৌন্দর্য্যবোধ দিয়ে অনুষ্ঠান হলের পুজো মঞ্চ অপরূপভাবে সাজিয়ে নেন। ২০১৮-এ পুজো মণ্ডপের থিম ছিল বাঙালি-বিবাহেরআচার অনুষ্ঠান। আর ২০১৯-এর থিম- গ্রাম বাংলা। শিল্পী যামিনী রায়ের মাতৃমুখের ছবি, শিশুদের সহজ-পাঠের ছবি, গ্রামবাংলার কুঁড়েঘর, তুলসীমঞ্চ, তালপাতার পাখা, ইত্যাদি নানান উপাদানে আমরা তৈরি করেছিলাম পল্লীবাংলার প্রতিচ্ছবি।

 

ধুপ-ধুনোর ধোঁয়া, ঢাকের বাদ্দ্যি, কাঁসর-ঘন্টার শব্দে ফিরে আসে ফেলে আসা দিনগুলো। পুজোর ষষ্ঠী থেকে দশমী প্রত্যেকটা দিন আলাদা আলাদা করে উপভোগ করে এখানকার বাসীন্দারা। ষষ্ঠীর বোধন, সপ্তমীর অধিবাস, কলা বউ স্নান, অষ্টমীর অঞ্জলি, সন্ধিপুজোর ১০৮ পদ্ম আর প্রদীপ, নবমীর ধুনুচি নাচ আর দশমীরসিঁদুর খেলা – পুজোর কয়েকটা দিন মাতৃ-বন্দনায় মশগুল করে রাখে তাদের। যথাযথ নিয়ম, নিষ্ঠা, অপার ভক্তি আর প্রাণভরা ভালবাসা দিয়ে  মাকে আবাহন করে বলি: রূপং দেহি জয়ং দেহি/ যশো দেহি দ্বিষো জহি। দশমীর সিঁদুর খেলায় প্রত্যেক নারী ব্যক্তিত্বে, সৌন্দর্যে অসামান্য হয়ে ওঠেন।

 

এই একটা দিন আজকের পৃথিবীর ‘লুক ইংয়’ ভাবনাকে পিছনে রেখে প্রত্যেক নারী একজন মা এবং স্ত্রী হয়ে ওঠেন। মায়েরকাছে তাঁদের একমাত্র প্রার্থনা থাকে সারা বছর যেন তাঁদের স্বামী-সন্তানেরা ভালো থাকে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top