মুখ্যমন্ত্রীর চোখের আলো প্রকল্পে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল দুই ভিক্ষুক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত চোখের আলো প্রকল্পে দৃষ্টি ফিরে পেল দৃষ্টিহীন এক পরিবারের দুই সদস্য।বাকী তিন সদস্যের অস্ত্রোপচারও হবে খুবই শীঘ্রই।তারা সবাই ভিক্ষুক।স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,মালদহ জেলার গাজোল থানার তুলসীডাঙ্গার বাসিন্দা বিশ্বনাথ সরকার(৫০)।সাত বছর বয়সে ট্রাইফয়েড হওয়ার ফলে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি।তাঁর স্ত্রী অর্চনা সরকারও (৩৮) প্রায় দৃষ্টিহীন।
তাদের ছেলে মেয়ে অমিত(২০),সুমিত(১৫),সোমা(১২) ও সোনালি(৪)। অমিত ছাড়া বাকী সকলেই দৃষ্টিশক্তিহীন।পথে ভিক্ষা করেই চলে তাদের সংসার। এমতাবস্থায় পরিবারের পক্ষে চোখের চিকিৎসা করা সম্ভব হয় নি।সেই অন্ধকার জীবনে আলো এনে দিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর‘চোখের আলো’প্রকল্প। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের চিকিৎসকের অস্ত্রোপচারে আপাতত সুমিত(১৫) ও সোমা(১২) সোমা ফিরে পাচ্ছে চোখের আলো। পরিবারের আরো তিন সদস্যের অস্ত্রোপচারও হবে খুবই শীঘ্রই।চোখের আলো প্রকল্পের মাধ্যমে দৃষ্টি ফিরে পেতেই খুশি এই পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়,বছর দুয়েক আগে গাজোলের এক চশমার ব্যবসায়ী প্রদীপ লাহা এই দৃষ্টিহীন পরিবারের পাঁচ সদস্যকে ভিক্ষা করতে দেখেন। এরপরই তিনি গাজোল ব্লকের হাতিমারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চক্ষু পরীক্ষক অজিত কুমার দাসের সাথে যোগাযোগ করেন।চক্ষু পরীক্ষক অজিত কুমার দাসের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় চিকিৎসা।অজিতবাবু তাদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় প্রচেষ্টা শুরু করেন। এই সময় রাজ্য সরকারের ‘চোখের আলো’প্রকল্পের সূচনা হয়।
আর এই দৃষ্টিহীনদের সেই প্রকল্পের আওতায় শুরু হয় চিকিৎসা। প্রতিকুলতা ছিল অনেক। কিন্তু মালদা মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক সুমন চ্যাটার্জীর তত্ত্বাবধানে শুরু হয় চিকিৎসা। তারই নেতৃত্বে গঠিত হয় মেডিক্যাল টিম।ঠিক হয় দুইটি পর্যায়ে এই পরিবারের পাঁচ সদস্যের অস্ত্রোপচার হবে। প্রথম পর্যায়ে সুমিত ও সোমার অস্ত্রোপচার হয় ২১নভেম্বর।চক্ষু চিকিৎসক সুমন চ্যাটার্জী সহ বিশ্বজিৎ কুমার,হাতিমারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চক্ষু পরীক্ষক অজিত কুমার দাস, কর্মী সুভম তেওয়ারীর সহযোগিতায় সফল হয় দৃষ্টিহীনদের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার লড়াই।
আরও পড়ুন – মহার্ঘ্যভাতা অবিলম্বে প্রদানের দাবি তুলে শিলিগুড়ি মহকুমা শাসকের দফতরে অভিযান
এই বিষয়ে পরিবারের কর্তা বিশ্বনাথ সরকার জানান, ‘যদিও আমি নিজেও দৃষ্টিহীন। নিজের দৃষ্টি ফিরে না পেলেও আপাতত আমার পরিবারের এক ছেলে এবং এক মেয়ে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ায় খুবই খুশি। এদেরকে এখন আমার পড়াশোনা করাবার ইচ্ছা রয়েছে। ডাক্তার বাবুরা জানিয়েছেন, পরিবারের অন্য সদস্যদের চোখের অস্ত্রপচার আরো কয়েকদিন পরে করবেন।”
তিনি এজন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে অজস্র ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি সুমিত ও সোমা দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ায় তারাও খুব আনন্দিত। এ প্রসঙ্গে গাজোল হাতিমারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চক্ষু চিকিৎসক, অজিত দাস জানিয়েছেন, দৃষ্টিহীন এই দরিদ্র পরিবারের দুইজনকে চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। বাকি তিনজনের চক্ষু অস্ত্রোপচার কয়েকদিন পরে হবে। এটা সম্ভব হয়েছে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর চোখের আলো প্রকল্পে ।