সিএএ ( CAA ) বিজেপির ধাপ্পা। ভুলের পর ভুল ভুলেভরা নাগরিকত্ব বিল যা এখনো অসম্পূর্ণ। সিটিজেন আমেন্ডমেন্ড অ্যাক্ট বা সিএএ ( CAA ) আইন-২০১৯ হল বিজেপির ভুলের সংশোধন। ২০০৩ সালে প্রথম এই বিল এনেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এল কে আদবানি, তখন তিনি বলেছিলেন, ১৯৮৬ সালের পর যাদের জন্ম হয়েছে ওপার বাংলার সেই হিন্দু উদ্বাস্তুরা নাগরিক হতে পারবেন।
তখন কংগ্রেসের সাংসদ তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছিলেন ‘উদ্বাস্তু হিন্দুদের কথা ভাবুন। তাদের সমস্যা বাড়িয়ে কিছু করবেন না’। অর্থাৎ সেই আইনে যাদের বয়স চল্লিশ পার হয়েছে তারাও এই নাগরিক হবার আবেদন করতে পারবেন না। তার থেকে যারা আরো বয়স্ক বা প্রবীণ তারাই নাগরিক হবার জন্য আবেদন করতে পারবেন। কি সর্বনাশা ভাবুন। তার পরে যে লক্ষ লক্ষ শিশু জন্মেছে তাদের নাকরিকত্ব পাবার কোন সুযোগ নেই। তারা কাজকর্ম চাকরি বিকরির সুযোগ পাবেননা। পুলিশ কেন যে কেউ তাদের হয়রানি করতে ফারবে। তির সঙ্গে শুরু হল ‘ঘটি -বাঙ্গাল’ লড়াই।
আরও পড়ুন – মহার্ঘ্যভাতা অবিলম্বে প্রদানের দাবি তুলে শিলিগুড়ি মহকুমা শাসকের দফতরে অভিযান
উদ্বাস্তুদের জীবন আরো দুর্বিস। রাজ্যের বাইরে গেলে ধরা পড়া ও জেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে চলেছে।
বিজেপির আর একটা দুমুখো নীতি হচ্ছে ‘অনুপ্রবেশকারি’ নিয়ে কথায় আর আইনে দুরকম কথা । মুখে বলছেন হিন্দুরা অনুপ্রবেশকারি নয়। মুসলিমরা অনুপ্রবেশকারি। কিন্তু যে আইনটা করলেন সেখানে কিন্তু কোন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর কথার উল্লেখ নেই। তাই ফরটিন ফরেন অ্যাক্ট (১৪ ফরেন অ্যাক্ট)-এ গ্রেপ্তার হলেন বহু হিন্দু যারা বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত। পুলিশের কাছে দুই সম্প্রদায়ের জন্যই এই এক আইন। জেলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল হাজার হাজার হিন্দু গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেছেন।
এখনো কেউ কেউ জেলে আছেন। জেলের রেকর্ডে তার উল্লেখও আছে। মুখে এক কথা। আর লিখিত আইনে বা সরকারি নথিতে বলা হচ্ছে অন্যকথা। এই দুমুখো নীতি নিয়ে চলছে বিজেপি। আর এই ভুলগুলো নিয়ে যখন বিজেপিকে প্রচন্ড সমালোচনার মুখে পড়তে হল তারপর সংশোধন করতে হল। সেই সংশোধন মোদিজীর সরকার ২০১৪ তে ক্ষমতায় আসলেও এই বিলের কোন সংশোধন হল না। সংশোধন হল ২০১৯ -এ ক্ষমতা এসে। আইন পাশ হয়ে আগে সিএবি হল সিএএ ( CAA )।
ছিল নাগরিকত্ব বিল তাই এখন পাশ হয়ে আইনে পরিণত হয়ে এখন হয়েছে ‘সিএএ’। যদিও এখনো আইনের ধারা উপধারা সম্পূর্ণ তৈরি করা যায় নি। আমার ব্যাক্তি অভজ্ঞতা বলে ২০২৪ -এর নির্বাচনের আগে এইসব ধারা উপধারা সম্পূর্ণ হবেনা। সিএএ লাগুও ঠিকমত হবেনা। যদি আগামী লোকসভায় ক্ষমতায় আসতে পারে বিজেপি তবেই সি এ এ লাগু হবে।
শুধু সিএএ নিয়ে বিজেপির এতবার পাল্টি খাওয়া দেখে অনেকে উদ্বাস্তুরা বেশ সন্ধিহান। এই যে বিজেপি আগামী লোকসভা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরার মত সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে সিএএ র গান বাজাতে থাকবে। ১৯৫০ সালের আইনে কেন গুজরাটের হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হল? তার কারণ সিএএ আইন এখনো অসম্পূর্ণ। দেখুন ঠেলা। এরপর আরো একটা কারণ হল পঞ্চায়েত নির্বাচন। এই নির্বাচন মাত্র দুতিন মাস পরেই। তাই এত আগাম সিএএ নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে বিজেপি।