রায়গঞ্জের খেজুর গুড় প্রসিদ্ধ ভিন রাজ্যেও। উত্তর দিনাজপুর জেলা কয়েকটি দ্রব্য উৎপাদনে প্রসিদ্ধ, তার মধ্যে অন্যতম হল তুলাইপাঞ্জি চাল, বিঘোরের বেগুন এবং খেজুর রসের পাটালি গুড়। রায়গঞ্জ থানার পোয়ালতোর গ্রামে বেশ কিছু পরিবার এখনও খেজুর রস পেড়ে, তাকে বিশাল চুল্লীতে ফুটিয়ে খেজুর গুড় তৈরি করে। গন্ধে ও স্বাদে এই গুড় অতুলনীয়। শহর ছাড়িয়ে এই গুড়ের প্রশংসা ও প্রসিদ্ধ এখন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু, এই গুড় তৈরি করতে যে পরিমাণ পরিশ্রম হয়, তার লাভ আগের থেকে কমেছে।
গুড় উৎপাদকেরা এমনটাই জানিয়েছেন।গুড় প্রস্ততকারক প্রফুল্ল সরকার জানান, যেদিন গুড় তৈরি হবে, তার দুদিন আগে থেকেই চলে প্রস্তুতি। যে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হবে, সেই গাছের ছাল কেটে রাখা হয়। ভোর থেকে শুরু হয় রস সংগ্রহের কাজ। এরপর সেই রস আগুনে ফুটিয়ে শুকিয়ে নেওয়া হয়। সময় লাগে কমপক্ষে ২/৩ ঘন্টা। এরপর সেই শুকিয়ে যাওয়া রসকে ঘাঁটিয়ে পাটালি গুড় প্রস্তুতির কাজ শেষ করা হয়।
নির্দিষ্ট ছাঁচে ঢেলে ঘন্টা পাঁচেক রাখলেই প্রস্তুত খেজুর গুড়। তবে যতটা পরিশ্রম, আজকাল ঠিক ততটা লাভ হয়না। কমেছে গাছের সংখ্যা, তাই ভেজাল দিয়ে কিছুটা আর্থিক ক্ষতি মিটিয়ে নেওয়া হয় বলে জানালেন গুড় প্রস্ততকারক প্রফুল্ল সরকার। তিনি খেজুর রস জ্বাল দিতে দিতে বলেন, আগে লাভ হত। কিন্তু এখন গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রস সংগ্রহ করতে বহুদূরে যেতে হয়।
আরও পড়ুন – ধূপগুড়িতে ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানাতে চলছে প্রস্তুতি
যাতায়াতে সময় লাগে বলে, রসের গুনগত মান নষ্ট হয়ে যায়। এদিন বেশ কিছু খেজুর গুড় প্রিয় মানুষকে দেখা গেল, সকাল থেকে এসে রস সংগ্রহ থেকে শুরু করে খেজুর গুড় তৈরি করে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। খাঁটি গুড় কিনতেই যে এখানে আসা, সেটা জানিয়ে দেন তারা। দূর্গাপুর এলাকার ব্যবসায়ী বিপুল সরকার বলেন, আমার দোকানে এই শীতের সময়ে, আসল খেজুর গুড় চেয়ে বহু মানুষ ফোন করেন। আমি সরাসরি এই পোয়ালতোড় থেকে গুড় এনে সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দিই।
খেজুর রসের উনুনে যখন আগুনের শিখা দাউদাউ করে উঠছে, তখন টগবগ করে ফুটতে থাকা রস থেকে ছড়িয়ে পড়ছিল সুগন্ধ। মন কাড়া সেই ম’ম’ গন্ধই আবারও পোয়ালতোরে টেনে আনছে নতুন নতুন খরিদদারকে। এভাবেই বছরের পর বছর জেলা বাসীর মন জয় করে চলেছে রায়গঞ্জের খেজুর গুড়।