বন্ধুমহল আয়োজিত ‘ সুন্দরবন মেলা’ নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে। মেলা মানুষের স্বীয় সাংস্কৃতিকে আত্মস্থ করা, উপভোগ করার সুযোগ উপহার করে ও অন্যান্যদের কাছে তা তুলে ধরে অন্যান্যদেরও অনুভব করার এবং অনুধাবন করার সুযোগ এনে দেয়। আরও উপযোগী করে তোলে। যাতে বর্ণ ধর্ম সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলেই গ্রহণ করতে সমর্থ হন।
এমন একটি ঐতিহাসিক মেলা যা সুন্দরবনের মানুষের সংস্কৃতিকে আম জনতার কাছে উপস্থাপন করে চলেছে প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে। ক্যানিং বন্ধুমহল আয়োজিত ‘সুন্দরবন মেলা’ এবছর ৪৪বছরে পদার্পণ করল। মাঝের দুবছর কভিডের জন্য মেলা করা যায়নি। তবুও এতবছর ধরে চালানো কম কথা নয়। সামান্য কথাও নয়। এই দীর্ঘ পথ চলার পথে অনেক চড়াই উৎরাই পেরোতে হয়েছে।
সুন্দরবনের সিংহদুয়ার ক্যানিং। এটি জেলার শেষপ্রান্তে একটি মহকুমা সদর। ১৯৭৮-এ এই মেলা শুরু হয়েছিল। বলা চলে শুভারম্ভ। বহু বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়েই এই মেলা শুরু করা হয়েছিল। তৎকালীন শাকদলের একটি অংশের বিরুপতা ও বিরোধীতা প্রতিপদে বাধা বিপত্তির জন্ম দিয়েছিল। বন্ধ হতে বসেছিল এই মেলা। তার বিরুদ্ধে এই শহরের মানুষ একটি গনআন্দোলনের জন্ম দিয়েছিলেন। কেঁপে গিয়েছিল এই ক্ষুদ্র শহরতলি। সবধরনের, সব পেশার মানুষ, ছাত্র- যুব- মহিলা মেলার সমর্থনে মিছিল করেছিলেন, গনঅবস্থানেবসেছিলেন।
একদম কলকাতার ‘ সুশীল সমাজের আন্দোলন-এর আদলে সেই আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। একটি গ্রামিন মেলার জন্য এই ধরনের গন আন্দোলন হতে পারে তা ছিল ভাবনার অতীত। আজ সুশীল সমাজ বলে একটি শ্রেণী এখন বিভিন্ন গন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। সেদিন তেমন কেউ ছিলেন না। সাধারণ মানুষ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই নেতৃত্বের মধ্য দিয়েই জন্ম নিয়েছিল । রঞ্জিত দালাল ছিলেন বন্ধুমহল ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৬১ ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক স্মরজিত দালাল যিনি ‘জগদা’ নামেই সমধিক পরিচিত এবং জনপ্রিয়।
যার কথা বা নির্দেশ বাকি সদস্য সমর্থকদের কাছে বেদবাক্যের মত। সকলেই তা মেনে চলেন। মেনে চলেন ক্লাবের সব বয়সের মানুষ। এক সৎ ও সহৃদয় মানুষ জগদা। তার বন্ধু মলয় মজুমদার, সাব্বাস আলিরা এখনও সমানভাবে সক্রিয়। বড় ক্ষতি হয়ে গেছে আর এক বন্ধু রামজী প্রসাদ সাউয়ের অকাল প্রয়ান। যিনি ছিলেন খুব গুরুত্বপূর্ণ মেলা সংগঠক। এছাড়াও সাহসী প্রদীপ নাথ, রথীন শিকদার, শ্যামল দালাল, সঞ্জিত ওরফে চুনটা, মানব শিকদার ওরফে মানু, যারা সেসময় নিরলস লড়াই করে মেলা আয়োজনের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আমি সদস্য না হয়েও এই ক্লাবের কাছে সম্মান ভালোবাসা পেয়েছি প্রচুর। এবারের মেলার উদ্বোধন করবেন মাতলা অঞ্চল প্রধান উত্তম দাস, প্রধান অতিথি বিধায়ক শওকত মোল্লা। সঙ্গে থাকবেন এসডিও, আইসি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসকগণ। থাকছেন কবি সাহিত্যিক সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। মেলা সার্বিক অর্থেই সকলের মিলনের পবিত্র খোলা ময়দান।