প্রধান শিক্ষকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ। চতুর্থ শ্রেণী উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের হাই স্কুল ভর্তির দাবিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখালো অভিভাবক-অভিভাবিকারা। শুক্রবার দিনহাটা শহরের গোপাল নগর হাই স্কুলে এই ঘটনাকে ঘিরে পরিস্থিতি প্রচন্ড উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিন খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে স্কুলে দুই একজন শিক্ষকের রোষের মুখে পড়তে হয় সাংবাদিকদের। এরপর মন্ত্রী উদয়ন গুহর হস্তক্ষেপে সাংবাদিকরা সেখান থেকে সরে আসে।
অভিভাবকদের অভিযোগ, গোপালনগর হাইস্কুল চত্বরে গোপালনগর প্রাইমারি স্কুল থাকা সত্ত্বেও সেই স্কুলের সিংহভাগ ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয়নি। সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক জয়ন্ত অধিকারী জানিয়েছেন, গোপালনগর হাই স্কুল চত্বরে যে প্রাইমারি স্কুল রয়েছে, সেই স্কুলের সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীকে ভর্তির জন্য অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনহাটা শহরে অবস্থিত গোপালনগর হাই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য ব্যাপক পরিমাণে ছাত্র-ছাত্রী আবেদন করে। গত ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে লটারির মাধ্যমে বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয়। কিন্তু গোপালনগর উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে যে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেই বিদ্যালয়ের সিংহভাগ ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হতে পারে নি। ভর্তির জন্য অভিভাবক- অভিভাবিকারা দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে প্রধান শিক্ষক এবং অন্যান্য সহকারী শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের সমস্যা মেটেনি। সেই কারণে এদিন অভিভাবক- অভিভাবিকারা জোটবদ্ধ হয়ে গোপালনগর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক- অভিভাবিকাদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকদের বচসা শুরু হয়। ফলে বিষয়টি নিয়ে প্রচন্ড উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক উত্তম বর্মন, পিংকি দাস, স্বপ্না সেন, শাকিলা বিবি, উদয় বর্মন প্রমুখরা বলেন, তাদের ছেলেমেয়েরা গোপালনগর হাই স্কুল চত্বরে যে প্রাইমারি স্কুলটি রয়েছে সেখানে পড়াশোনা করে থাকে। অথচ তাদের ভর্তি নেওয়া হয়নি। বারবার স্কুলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সমস্যা মেটেনি। ফলে তাদের পড়াশোনায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আমরা আমাদের ছেলে মেয়েদের সরকারি স্কুলে পড়ানোর জন্য চেষ্টা করলেও বর্তমান স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই আমাদের ছেলেমেয়েদের ভর্তি নিচ্ছে না। যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের ছেলে মেয়েরা ভর্তি হতে না পারে তাহলে বিষয়টি আমরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেউ জানাবো।
আমাদের অনেকেরই বাড়ীর শহরে হওয়া সত্ত্বেও সার্ভে করা হলেও আমাদের বাড়িতে পর্যন্ত যাওয়া হয়নি। নিজেদের ইচ্ছামত স্কুল কর্তৃপক্ষ বাইরে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করিয়েছে। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সরকারি আইন রয়েছে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা একই চত্বরে থাকা হাই স্কুলে ভর্তি হতে চাইলে তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে গোপালনগর স্কুল কর্তৃপক্ষ সেই নিয়ম মানছে না।
এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আক্কাস আলি বলেন, স্কুলের ধারণক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। লটারির মাধ্যমে স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। তবুও যাদের বাড়ি স্কুলের কাছাকাছি তাদেরকেও ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যে সমস্যাটি দেখা দিয়েছে তা শিক্ষা দপ্তরের ঊর্ধ্বতন ও কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে তারা যে নির্দেশ দেবেন সেই নির্দেশ মোতাবেক কাজ হবে।
আরও পড়ুন – জেলার সমস্ত স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ফেব্রুয়ারিতেই শেষ করার নির্দেশ
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বরাবরই গোপালনগর উচ্চ বিদ্যালয় মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর অন্যতম চাবিকাঠি শহরের বুকে যে সমস্ত বেসরকারি স্কুলগুলি রয়েছে সেই স্কুলের মেধা সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের কূলে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে এমনটাই অভিযোগ। শহরের অন্যান্য যে সমস্ত সরকারি স্কুলগুলি রয়েছে সেইসব স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ গোপালনগর উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমনটাই অভিযোগ উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে দিনহাটা শহরের বেসরকারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা নানা কৌশলে গোপালনগর হাই স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেলেও, ভর্তি সুযোগ পেলেও স্কুল চত্বরে অবস্থিত গোপালনগর প্রাইমারি স্কুলের একটা বড় অংশ ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত থেকেছেন এমনটাই অভিযোগ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের। এর বিরুদ্ধেই এদিন বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকরা।