নেতাজির জীবনী সম্পর্কে কিছু তথ্য । নেতাজী সুভাষ বসু ছিলেন মুক্তিকামী জনগণের প্রাণসত্তা । নেতাজীর জীবন ছিলো ত্যাগে শুভ্র , গৌরিক দাসত্বের শৃঙ্খল মোচনে উৎসর্গীকৃত । নেতাজী ছিলেন ভারতবর্ষের সমগ্র মুক্তিপাগল জনগণের জাগ্রত আত্মার সোচ্চার কন্ঠ । শুধু ভারত নয় , সমস্ত পৃথিবীর সশস্ত্র আন্দোলনের ইতিহাসে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব ।
নেতাজী যেভাবে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রাম করেছিলেন , তা আজও আমাদের মনে বিস্ময়ের উদ্রেক করে । আজাদ হিন্দ ফৌজের সুদক্ষ পরিচালনা থেকে শুরু করে ব্রিটিশের চোখে ধুলো দিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া , সাবমেরিন যাত্রায় পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া , বারে বারে ছদ্মবেশ ধারণ করে ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়া সব কাজেই নেতাজী ছিলেন অগ্রগণ্য , এমনকি মহাত্মা গান্ধির মতো এক দেশবরেণ্য নেতার বিরুদ্ধে লড়াইতে নেমে জয়যুক্ত হয়েছিলেন ।
একসময় তরুণ সমাজের নয়নমণি ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু । নেতাজীর জীবনের শেষ দিকটা আমরা জানি না । অনেকে বলে থাকেন , বিমান দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে । অনেকে বলেন , শেষ পর্যন্ত তাকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে ব্রিটিশরা নিয়ে গিয়েছিলেন । আবার অনেকে বলেন , নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সাইবেরিয়াতে রুশদের হাতে বন্দি ছিলেন।
আমাদের কাছে নেতাজি সুভাষ মৃত্যুঞ্জয় । আমরা বিশ্বাস করি , এমন মহাত্মা মানুষের মৃত্যু নেই । দীর্ঘদিন ধরে তিনি আমাদের মনের মনিকোঠায় বেঁচে আছেন এক উজ্জ্বল দীপশিখা হয়ে । এবার নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামের এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজী হলেন এক উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র যিনি এই সংগ্রামে নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু নেতাজি নামে সমধিক পরিচিত। ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার জন্মবার্ষিকীকে জাতীয় পরাক্রম দিবস বলে ঘোষণা করেন। সুভাষচন্দ্র পরপর দুইবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত, কংগ্রেসের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা টীকা এবং বিরুদ্ধ-মত প্রকাশ করার জন্য তাকে পদত্যাগ করতে হয়। সুভাষচন্দ্র মনে করতেন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর অহিংসা এবং সত্যাগ্রহের নীতি ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। এই কারণে নেতাজী সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন।
সুভাষচন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের সত্বর ও পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে এগারো বার কারারুদ্ধ করে। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এর বিখ্যাত উক্তি “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।” দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পরেও তার মতাদর্শের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি; বরং এই যুদ্ধকে ব্রিটিশদের দুর্বলতাকে সুবিধা আদায়ের একটি সুযোগ হিসেবে দেখেন। যুদ্ধের সূচনালগ্নে তিনি লুকিয়ে ভারত ত্যাগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি ও জাপান ভ্রমণ করেন ভারতে ব্রিটিশদের আক্রমণ করার জন্য সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে।
জাপানিদের সহযোগিতায় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন এবং পরে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু নেতৃত্ব প্রদান করেন। এই বাহিনীর সৈনিকেরা ছিলেন মূলত ভারতীয় যুদ্ধবন্দি এবং ব্রিটিশ মালয়, সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে কর্মরত মজুর। জাপানের আর্থিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তায় তিনি নির্বাসিত আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্বদান করে ব্রিটিশ মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে ইম্ফল ও ব্রহ্মদেশে (বর্তমান মায়ানমার) যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নাৎসি ও অন্যান্য যুদ্ধবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের জন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ সুভাষচন্দ্রের সমালোচনা করেছেন; এমনকি কেউ কেউ তাকে নাৎসি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলে অভিযুক্ত করেছেন। তবে ভারতে অন্যান্যরা তার ইস্তাহারকে রিয়েলপোলিটিক (নৈতিক বা আদর্শভিত্তিক রাজনীতির বদলে ব্যবহারিক রাজনীতি)-এর নিদর্শন বলে উল্লেখ করে তার পথপ্রদর্শক সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শের প্রতি সহানুভূতি পোষণ করেছেন।
আরও পড়ুন – মানুষের হয়ে কথা বলতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে শতাব্দী
উল্লেখ্য, কংগ্রেস কমিটি যেখানে ভারতের অধিরাজ্য মর্যাদা বা ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের পক্ষে মত প্রদান করে, সেখানে সুভাষচন্দ্রই প্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে মত দেন। জওহরলাল নেহরুসহ অন্যান্য যুবনেতারা তাকে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজ মতবাদ গ্রহণে বাধ্য হয়। ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি ও তার জীবন রক্ষায় কংগ্রেস নেতাদের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ সুভাষচন্দ্র গান্ধী-আরউইন চুক্তি বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। তাকে কারারুদ্ধ করে ভারত থেকে নির্বাসিত করা হয়। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে নেতাজী ভারতে ফিরে এলে আবার তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। জীবনী সম্পর্কে জীবনী সম্পর্কে