ঘরের মেয়ের বিশ্বকাপ জয়ে আবেগে ভাসছে শহর শিলিগুড়ি। রিচাকে নাগকির সংবর্ধনা দিয়ে প্রাপ্য সম্মাননা দেবে শিলিগুড়ি পুরনিগম। সোমবার দিভভর শিলিগুড়ির ১৭নাম্বার ওয়ার্ডের ঘোষ বাড়ির সামনে যেন উৎসবের আমেজ! হবে নাই বা কেন! মহিলা ক্রিকেট অনূর্ধ্ব ১৯ টি২০বিশ্বকাপের ২২গজের লড়াইয়ে ইংল্যান্ডকে পরাস্ত করে জয় পতাকা ছিনিয়ে নিয়েছে ভারতের মহিলা ক্রিকেট টিম।
ক্যাপ্টেন শেফালী ভার্মার নেতৃত্বে মহিলা অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় দলে এদিন দূর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে ছাপ ফেলেছে বাংলার তিন কন্যা। তার মধ্যে স্ট্যাম্পিং করে দলকে প্রত্যাশিত জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে দিয়েছে শিলিগুড়ির ঘরের মেয়ে রিচা ঘোষ। আর তাইতো শিলিগুড়ি পুরনিগমের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিচা ঘোষের বসতবাড়িতে রবিবার রাত পেরোতেই উচ্ছ্বসিত ক্রীড়া প্রেমী থেকে আম সাধারন নাগরিকদের ঢল নামে।
শিলিগুড়ির মহানাগরীক গৌতম দেব এদিন যান রিচার বাড়িতে। রিচা বাড়িতে ফেরেনি তাতে কি, রত্নগর্ভা মায়ের হাতে মেয়ের কৃতিত্বের সংবর্ধনা তুলে দেন মেয়র। সকাল থেকে অফুরান শুভেচ্ছা বিনিময় পর্ব চলে। পৌঁছান ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার, কাউন্সিলর ও বোরো চেয়ারম্যান মিলি সিনহা, অন্যন্য কাউন্সিলরেরা।
দার্জিলিং জেলা তৃনমূলের তরফে জেলা সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ থালা ভর্তি মিষ্টি সাজিয়ে মা স্বপ্না ঘোষকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মিষ্টি মুখ করিয়ে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। শুধু অভিনন্দন নয় শিলিগুড়ি পুরো নিগমের বোর্ড বৈঠকেও এদিন মেয়র রিচা ঘোষকে এক বৃহত্তর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদানের ঘোষণা করেন। মেয়র গৌতম দেব বলেন- রিচা শিলিগুড়ি শহরে ফিরে এলেই একটা বড় করে দীনবন্ধু মঞ্চে তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দিতে চাই।
এই নাগরিক সংবর্ধনায় ঋদ্ধিমান সাহাকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং সংবর্ধনা জ্ঞাপন করতে চায় পুরনিগম। রিচার বাবার কলকাতায় রয়েছে তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। ওর মতো খেলোয়াড়দের সময় বাঁধা থাকে। রিচার সঙ্গে কথা বলে সময় নির্ধারণ করবো। তিনি জানান এর আগে ঋদ্ধিমান সাহাকে বঙ্গ রত্ন দেওয়ার উদ্যোগ আমি নিয়েছিলাম তবে ঋদ্ধির সময় ও ব্যস্ততার সঙ্গে তালমেল না হওয়ায় তা হয়নি।
মেয়র বলেন একই দিনে রিচার নাগরিক সংবর্ধনার মঞ্চ থেকেই জাতীয় স্তরের ক্রিকেট টিমের খেলোয়াড় শিলিগুড়ির ছেলে ঋদ্ধিমান সাহাকেও সংবর্ধিত করতে চাই। তার রিচা ও পরিবারকে অভিনন্দন জানিয়ে মেয়র বলেন- বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি অনূর্ধ্ব ১৯ এর এই জয়ে রিচার একটা ভূমিকা আছে। সম্ভবত অনূর্ধ্ব ১৯শে এটাই ওর শেষ খেলা। ও অনেক দূর যাবে। এরপর সিনিয়র দলে খেলবে। এদিকে ২০২০সালে সিনিয়র দলের সদস্য হয়ে কুড়ি-কুড়ি বিশ্বকাপের ফাইনালে মাঠে নেমেছিল রিচা।সেবারে অবশ্য রানার্স হয়েই ফিরতে হয়। এদিন বোর্ড বৈঠকে রাজনৈতিক দূরত্ব ভেদাভেদ ঘুচিয়ে দেয় ঘরে মেয়ে রিচার এই সফলতা।
বোর্ড বৈঠকে কাউন্সিলর মিলি সিনহার তরফে রিচাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন এর প্রস্তাব পেশ করা হয়। তৃণমূল কাউন্সিলরদের পাশাপাশি বামেরাও সমর্থন জানান। ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার বলেন রিচা শিলিগুড়ির গর্ব। সে শহরে ফেরে নি এখনও তবে রত্নগর্ভা তাঁর মাকে আমরা সম্মান ও অভিনন্দন জানাতে চাই। এদিকে চার বছর বয়স মেয়ের খেলায় হাতে খড়ি তাই তখন থেকেই ক্রিকেটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলেন মা স্বপ্না দেবীও। সকাল থেকে এদিন সংর্বধনা সাক্ষাৎকার দেন মেয়ের অনুপস্থিতিতে মা স্বপ্না ঘোষ। বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ কলকাতায় রয়েছেন। পচেশস্ট্রুমে থেকে কয়েকশো যোজন দূরত্বে শিলিগুড়িতে রিচার বাড়িতে সকাল থেকে মা স্বপ্না দেবী এবং কাকা ভাই বোন পরিবারের সকলে উষ্ণ অভিনন্দনে ভাসতে লাগেন।
ক্রীড়া প্রেমী, বিশিষ্ট বর্গ থেকে সাধারণ নাগরিকদের ফুলের তোড়ায় ঢেকে যায় সুভাষপল্লীর ঘোষ বাড়িতে। রিচার মা স্বপ্না দেবী জানান- মেয়েরা নাচ গান শেখে সেখানে কিনা ক্রিকেটের মত ছেলেদের খেলা, ছোটবেলায় মেয়েকে হাত ধরে ক্রিকেট কোচিংয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তে শুনতে হয়েছে এমন অনেক তির্যক মন্তব্য। তাই আজ গর্বের হাসি স্বপ্ন দেবীর মুখে। তিনি বলেন এর ২০১৬সালে ক্রিকেটের বাংলার দলে সুযোগ পায় মেয়ে। এরপর ২০২০ সালে ভারতীয় মহিলাদের জাতীয় ক্রিকেটের সিনিয়র দলের হয়ে ও খেলেছে। সেবারে রানার্স হয় দল।
এবারে অনূর্ধ্ব ১৯ টি ২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়ার সময় থেকেই মেয়ে বিশ্বকাপকে কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখতে পারবে একটা আশা ছিল। তাঁর মা বলেন সিলেকশনের পর থেকেই ঈশ্বরের কাছে লাগাতার এই দিনটির প্রার্থনা করেছি। তাই টিভির পর্দায় চোখ রাখলেও চাপা টেনশন ছিলই মায়ের স্বপ্না ঘোষের মনে। তবে এবারে দলের সঙ্গে জয়ের হাসি ফুটেছে মেয়ের মুখেও। এ বয়সেই মেয়ের ট্রফির সারিতে এবারে স্থান পাবে বিশ্বকাপের মেডেল। স্বপ্না ঘোষের গলা বুজে আসে উচ্ছ্বাসে। তিনি বলেন মেয়েকে কখন কাছে পাবো সেটাই অপেক্ষা। বিশ্বসেরার দলের সদস্য মেয়ে ঘরে ফিরলেই তার মনপসন্দ খাবার ফ্রায়েড রাইস চিলি চিকেন সহ নানা পদ রেঁধে খাওয়াবেন মা।
আরও পড়ুন – এবার বিজেপি গতবারের থেকে বেশি আসনে জয় পাবে, আত্মবিশ্বাসী হিমন্ত বিশ্বশর্মা
অপরদিকে রিচার সাফল্যের সঙ্গেই শিলিগুড়ির মাটিতে ক্রিকেটের সম্ভাবনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে শহরে অত্যন্ত পক্ষে একটি প্র্যাকটিস স্টেডিয়ামের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উঠে আসছে। ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি মহানাগরীক গৌতম দেব একটি ছোট স্টেডিয়ামের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন। মেয়র বলেন শহরে নিয়মিত প্র্যাকটিসেই জন্য আউটডোর ক্রিকেট গ্রাউন্ড অথবা ছোটো ক্রিকেট স্টেডিয়াম খুবই প্রয়োজন। আমরা এ বিষয়ে চেষ্টা করছি। ভাসছে শহর। ভাসছে শহর। ভাসছে শহর