শহর জুড়ে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে কড়াকড়ি প্রযোগ শিলিগুড়ি পুরোনিগমের

শহর জুড়ে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে কড়াকড়ি প্রযোগ শিলিগুড়ি পুরোনিগমের। পুরো নিগমের তরফে বেআইনী নির্মাণ নিয়ে পৃথক টাস্ক ফোর্স গঠন। নিজ নিজ ওয়ার্ডে বেআইনি নির্মাণের উপর নজরদারি চালাতে হবে কাউন্সিলরদের। নাগরিকদের উন্নয়ন কাজে বাধ সেধে বোর্ড বৈঠকে অংশ নিলেন না বিজেপি কাউন্সিলরেরা।

 

ওয়ার্ড ভিত্তিক বেআইনি নির্মাণ হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে পুরনিগমকে জানাবেন কাউন্সিলারেরা। সোমবার শিলিগুড়ি পুরো নিগমের সভা কক্ষে দ্বাদশ বোর্ড বৈঠক হয়। এদিন বঞ্চনার মনগড়া কাহিনী তৈরি করে বোর্ড বৈঠক কে বয়কট করে নাগরিকদের বঞ্চনার মুখে ফেললেন বিজেপির পাঁচ কাউন্সিলর। বিজেপির তরফে এডিট কোন কাউন্সিলর বোর্ড বৈঠকে অংশ নেননি। শুরু থেকেই এদিন বাম আমল থেকে দীর্ঘদিনের উদাসীনতার জেরে শহর জুড়ে গড়ে ওঠা বেআইনি নির্মাণের বিষয়টি শিরোনামে উঠে আসে। বেআইনি নির্মাণকে কেন্দ্র করে আলোচনা দীর্ঘায়িত হয়।

 

মেয়র নির্দেশ দেন শিলিগুড়ি ৪৭টি ওয়ার্ডে বেআইনি নির্মাণে নজরদারি চালানো হবে। কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে মেয়রের নির্দেশ প্রতিটি কাউন্সিলরকে নিজ নিজ ওয়ার্ডের বেআইনি নির্মাণের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। তার মন্তব্য বিশেষত ওয়ার্ডে বাণিজ্যিক বেআইনি নির্মাণ হলে তৎক্ষণাৎ করা জানাতে হবে কাউন্সিলরদের। এতে তৎক্ষণাৎ পুরো নিগম জরুরী পদক্ষেপ নিতে পারবে। সম্প্রতি শিলিগুড়ি শহরে দুটি বাণিজ্যিক বহুতল নির্মীয়মানে নির্মাণ কাজ চলাকালীন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দুই শ্রমিকের। এ বিষয়ে বিস্তারিত টেকনিক্যাল টিমের তদন্ত রিপোর্ট এদিন বোর্ড বৈঠকে পেশ করা হয়।

 

মেয়র গৌতম দেব সাফ জানিয়ে দেন ৪০ ও ৪২নাম্বার ওয়ার্ডে নির্মিয়মানের শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনার জন্য টাস্ক ফোর্স দেখছে। বোর্ড বৈঠক থেকে মেয়রের কড়া ঘোষণা কোনো বেআইনি নির্মাণ বাঞ্চনিয় নয়। তিনি বাম আমলের বেয়ান নির্মাণ নিয়ে উদাসীনতার দিকে আঙুল তুলে বলেন এতদিন দীর্ঘ সময় বামেরা ছিল সে সময়তেই শহর জুড়ে নির্মাণ হয়েছে। তার পরিসংখ্যান সামনে রাখা হবে। আমরা এই কয়েকদিনে বহু বেআইনি নির্মাণ ভেঙেছি।৪২,১৭ ভাঙা হয়েছে।১৭নাম্বার ওয়ার্ডে পরিজনেদের আবেদনের পরও আইনকে শিরোধ্যার্য করে ভেঙে ফেলা হয়েছে বেআইনী নির্মাণ। বিরোধী সিপিএমের নুরুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে মেয়র বলেন আপনাদের সময় যে অসুবিধা তৈরি হয়েছে শহরে।

 

এদিন বোর্ড বৈঠকে বিতর্কিত দীর্ঘ ২০০৪সালের বহুতল নির্মাণ নিয়ে পুনরায় রাজ্যের বিবেচনার জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন মেয়র। মেয়র এদিন সদনে সকলের সম্মুখে বলেন বিধান মার্কেটের সাথী ট্রেডার্স এর বিতর্কিত নির্মাণ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। পি আই এল একটি মামলার হিয়ারিং চলছে। অপর একটি মামলায় আদালত ওই নির্মীয়মানের বেশ কিছু অংশ ত্রুটিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে। মেয়র জানান আদালতের নির্দেশ মেনেই এই নিৰ্মীয়মান পরিকল্পনার পুনঃবিবেচনার জন্য স্টেট কন্সিডারেশনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

 

রাজ্যের বিল্ডিং কনসিডারেশন ডিপার্টমেন্টে রয়েছে তারা বিষয়টি দেখবে। অপ্রাসঙ্গিকভাবে এদিন বোর্ড বৈঠকে সিপিআইএম কাউন্সিলর জয় চক্রবর্তী স্বচ্ছতা নিরিখে করা অনলাইন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য পেশ করেন। তার দাবি অনলাইনে নাকি নির্মীয়মানের মালিকপক্ষের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিরোধীদের জবাবে মেয়র গৌতম দেব পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

 

দেখা যায় দুই হাজার কুড়ি থেকে ২১ সাল পর্যন্ত বামেদের এক বছরের সময়কালে বিল্ডিং প্ল্যান পাশ হয়েছে মাত্র ২৮১ টি। সেখানে এক বছর সময়ে ৩০ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরো নিগমের তৃণমূল বোর্ড ৪৭৫ টি বিল্ডিং প্ল্যান পাস করেছে। একইসঙ্গে এ দিন মেয়র প্রশাসক বোর্ডের সময়কালের হিসেব ও তুলে ধরে বলেন ২০২১ সালে জানুয়ারি মাস থেকে বিওএ থাকাকালীন ছয় মাসের মধ্যে সে বছরের ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ পর্যন্ত ৪৪১ টি বিল্ডিং প্ল্যান পাস করেছে তৃণমূলের প্রশাসক বোর্ড। এদিকে এদিনের বোর্ড বৈঠকে শিলিগুড়ি পুরোনিগমের ২৪নম্বর ওয়ার্ডে ভবঘুরেদের জন্য একটি দোতলা নাইট শেল্টার তৈরীর পরিকল্পনা পাশ করা হয়

 

। যা দীর্ঘ দিন ধরে শিলিগুড়ির মতো শহরে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তা ছিল।যদিও অনুমোদিত অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে এদিন বোর্ড বৈঠকে কিছু জানানো হয়নি। ফেব্রুয়ারি মাসের ১০থেকে ১২ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনদিন ব্যাপী মেয়র’স কাপ ভলিবলের ঘোষণা হয়। এরপরই তৃনমূলের ৩৬নাম্বার ওয়ার্ডের দলীয় কাউন্সিলর রঞ্জন শীল সরব হতেই ভলিবল কাপের অনুমোদিত ৯ লক্ষ ৮৮হাজার টাকার বরাদ্দ পুনরায় বিবেচনার কথা জানান মেয়র। পাঁচ লক্ষ টাকার মধ্যে সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান সমাপন এর নির্দেশ দেন মেয়র গৌতম দেব। এদিকে, এদিন বনাঞ্চল এলাকায় আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নগর-সম্প্রসারণের প্রবণতার বিষয়টিও উঠে আসে।

 

মেয়র জানান শিলিগুড়ি শহরে বৈকন্ঠপুর বনাঞ্চল এবং মহানন্দা অভয়ারণ্য ঘেসা কিছু বসতি রয়েছে। আদালতের নির্দেশ সর্বাধিক। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের উপস্থিতিতে রাজ্য মুখ্য বনপাল বনদপ্তর, ও অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে শাসকের মারফত একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। মেয়র বলেন রাজ্যের উচ্চ পর্যায়ে আলাপ আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে এদিন শিলিগুড়ি পুরো নিগমের তরফে পথ কুকুরদের নির্বীজকরণের বিষয়টিও বোর্ড বৈঠকে উঠে আসে।

 

বিভাগীয় মেয়র পারিষদ সিক্তাদে বসু রায় বলেন চলতি মাসে ২৯ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ৭৬ টি পথকুকুরকে নির্বীজকরণ করা হবে। প্রতি মাসে দুটি করে ক্যাম্প করে পথ কুকুদের নির্বিজকরন করবে পুরনিগম। এদিন বোর্ড বৈঠক শেষে সম নতুন বছরের উপহার হিসেবে সমস্ত কাউন্সিলরদের ব্লেজার প্রদানের কথা জানান মেয়র এবং ১৩ জন কাউন্সিলরকে ব্লেজার তুলে দেন। মেয়র গৌতম দেব জানান এক একটি কাউন্সিলরদের সাত থেকে আট হাজার টাকা।

 

আরও পড়ুন – এবার বিজেপি গতবারের থেকে বেশি আসনে জয় পাবে, আত্মবিশ্বাসী হিমন্ত বিশ্বশর্মা

এদিকে এদিন বিজেপির বোর্ড বৈঠক বয়কট নিয়ে মেয়র গৌতম দেব বলেন-সদনে আসবে কি আসবে না সেটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত আমার বলার কিছু নেই তবে ওরা যদি প্রশ্ন না তোলে মোশন না দেয়, রেসুলিয়েশন না দেয় তাহলে কি করার আছে। তিনি বলেন বিজেপি কাউন্সিলরেরা নতুন তাদের প্রশিক্ষনের প্রয়োজন। তাদের বুঝতে হবে একটা চিঠি দিয়ে দিলেই তা তৎক্ষণাৎ কাজ হবে এমনটা নয়। তাদের ওয়ার্ডে কাজ হয়েছে কিনা তা রিপোর্ট কার্ডেই আমরা প্রকাশ্যে আনব।