রাজ্যের বানভাসি পরিস্থিতিতে ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন চালু করল নবান্ন

ভিআইপিদের জন্য যেন কোনও রাস্তা বন্ধ না করা হয়, বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

লাগাতার ভারী বৃষ্টির ফলে বানভাসি পরিস্থিতি গোটা রাজ্য জুড়ে। বাংলার পাশাপাশি পড়শি রাজ্য বিহার ও ঝাড়খন্ডেরও লাগাতার বৃষ্টির ফলে জল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে ডিভিসি। অন্যদিকে  সিকিমে বাঁধ ভেঙে পড়ায় ভয়াল রূপ ধারণ করেছে তিস্তাও। আর এর ফলে পুজোর আগে দুর্যোগ নেমে এসেছে গোটা বাংলায়। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ইতিমধ্যেই উদ্ধারকার্য শুরু হয়েছে। নামানো হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। সরকারের তরফে আপদকালীন হেল্পলাইন নম্বরও চালু করা হয়েছে। বিপদ এড়াতে এবং আগামী কয়েক দিন সতর্ক থাকতে বিদ্যুত্‍ এবং স্বাস্থ্য দফতরের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে বলে জানালেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ মহুয়াকে চ্যাংদোলা, মোদীকে আক্রমণ তৃণমূলের সায়ন্তিকার

এদিন নবান্নে  মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। পায়ে চোট লাগায় বৈঠকে সশরীরে হাজির হতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে সারা ক্ষণ ফোনে ছিলেন তিনি। ফোনেই এদিন সতর্কবার্তা দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সিকিমে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির পর বিপর্যয় নেমে এসেছে। জাতীয় সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পং। জলস্তর নামলে তবেই তিস্তার বাঁধ মেরামতের কাজে হাত দেওয়া যাবে। আপাতত মানুষ জনকে উদ্ধার করা প্রয়োজন। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার থেকে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। কথা হয়েছে অনীত থাপার সঙ্গে। সেনার সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাদের সবরকমের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আমরা।”

 

এদিন মমতা জানিয়েছেন, একদিকে ডিভিসি জল ছেড়েছে, পাঞ্চেত, মুকুটমণিপুর থেকেও জল ছাড়া হচ্ছে, নইলে বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ১ লক্ষ ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে কমাতে বলা হয়েছে। ওই জল এসে পৌঁছতে সময় লাগে তিন দিন। সেই জলই ধীরে ধীরে উদয়নারায়ণপুর, খানাকুল, ঘাটালে ঢুকতে শুরু করেছে। রাজ্য সরকারের আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি এবং মন্ত্রীরা বিপর্যস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শনে যাবেন এবং উদয়ন গুহ, রবি ঘোষরা ইতিমধ্যেই বেরিয়ে পড়েছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।

 

ছোটের কারণে ঘর বন্দি থাকলেও ২৪ ঘন্টা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন তিনি। নীচু জায়গা থেকে মানুষ জনকে রাজ্যের ত্রাণ শিবিরে চলে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন। নদী এবং সমুদ্রে যেতে বারণ করেছেন সকলকে। বিদ্যুত্‍ দফতর এবং স্বাস্থ্য দফতরকে সতর্ক করা হয়েছে রাজ্যের তরফে। আপাতত তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও সতর্ক করেছেন। জমা জলে বিদ্যুতের তার পড়ে থাকলে বিদ্যুত্‍স্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

 

এদিন মমতা বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ আসলে নৌকার মতো, নদীবেষ্টিত রাজ্য। বিহার, ঝাড়খণ্ড, সিকিম জল ছাড়লে আমরা ডুবে যাই। এখনও পর্যন্ত মালদা ঠিক আছে। বৃষ্টি কমে গেলে ভাল, নইলে আরও বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনের তরফে কোথাও, কোনও গাফিলতি থাকা চলবে না। পুলিশের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। ত্রাণসামগ্রী থেকে সব বন্দোবস্ত করে রেখেছে সরকার। খোলা হয়েছে ত্রাণশিবির। পুজোর আগে কষ্ট হচ্ছে। গ্রামের মানুষেরা দু’পয়সা বাড়তি রোজগারের আশায় থাকেন। তাঁদের ব্যবসা মার খাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করার সাহস আমাদের নেই। এই সনময়ে সকলকে একজোট হয়ে, ভালবাসা দিয়ে পরস্পরকে রক্ষা করতে হবে।”

en.wikipedia.org