মালদহে এলেন কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে রাজ্যে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মালদহে এলেন কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি থেকে সড়কপথে সরাসরি মালদা এসে পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের তিন প্রতিনিধি। তাদের মধ্যে আছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিব শক্তি কান্তি সিং, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার এমএস চাহাত সিং এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেকশন অফিসার গৌরব আহুজা।
মালদহে পৌঁছে তারা জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সাথে বৈঠক করেন। এদিন রাত প্রায় আটটা মালদা জেলা প্রশাসনিক ভবনে জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া-সহ পদস্থ কর্তাদের উপস্থিতিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন কেন্দ্রের ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এদিন জেলা প্রশাসনিক ভবনে মালদহের জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলা শাসক, মালদার ১৫টি ব্লকের বিডিও ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রায় কয়েক ঘন্টা ধরে চলে এই বৈঠক। যদিও এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের কেউই সাংবাদিকদের সামনে কোনও মন্তব্য করেননি।
মালদহে রাত্রি যাপনের পর শুক্রবার সকলে তারা বেরিয়ে পড়েন মালদহের কালিয়াচকের উদ্দেশ্যে। মালদহের দুই অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) বৈভব চৌধুরী ও অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) জামিল ফতেমা জেবা। এবং সংশ্লিষ্ট বিডিওরা সঙ্গে নিয়ে আবাস দুর্নীতির তদন্তে নামেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের তিন সদস্য ।
প্রথমে তারা যান কালিয়াচক তিন নম্বর ব্লকের অন্তর্গত ভারত ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী চরিঅনন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কামারপাড়ায়।
খানে তাঁদের নজরে পড়ে, পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও অনেকের নাম এই প্রকল্পের উপভোক্তা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । এমনকী, সেই তালিকায় রয়েছেন এক রেশন ডিলারও ! পাশাপাশি এমন বাড়ি রয়েছে যেখানে রীতিমতো ট্রাক্টর এবং সিসিটিভি ঝুলছে তাদের নামও রয়েছে আবাস যোজনা তালিকায়। পাশাপাশি তারা যাদের নাম তালিকায় নেই এমন কিছু লোকের কাঁচা বাড়িতেও ঢুকে পড়েন। তাদের নাম নেই কেন সে ব্যাপারেও তারা খোঁজ খবর করেন। তারা দরখাস্ত করেননি কেন সেই বিষয়টিও জানতে চান।
চরি অনন্তপুর থেকে প্রতিনিধিদলটি কালিয়াচক-2 নম্বর ব্লকের বাঙ্গিটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের গোঁসাইহাট গ্রামে আসেন। এই গ্রামেরই বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন । তিনি কলেজে চাকরি করেন। দোতলা, ঝাঁ চকচকে পাকা বাড়ি। এত বড় বাড়ি দেখে চমকে যান তদন্তকারী আধিকারিকরা। কথা বলেন ওই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে । সেখান থেকে তাঁরা চলে যান ওই গ্রাম পঞ্চায়েতেরই ফিল্ড কলোনি এলাকায় । সেখানে এক কাঠ ব্যবসায়ী জরিপ শেখের নামে আবাস যোজনার ঘর বরাদ্দ হয়েছে ! ওই ব্যবসায়ীর তিনতলা বাড়ি দেখে হতভম্ব হয়ে যান সবাই !
কথা বলেন জরিপের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এখানেও বেশ কিছু কাঁচা বাড়িতে তারা ঢুকে পড়েন এবং খোঁজখবর নেন তাদের নাম তালিকায় নেই কেন এ বিষয়ে জানতে চান।
কালিয়াচক থেকে বেরিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলটি ইংরেজবাজার ব্লকের অমৃতি গ্রাম পঞ্চায়েতের কামাত গ্রামে চলে যায় । সেখানেও প্রতিনিধিদলের সদস্যদের চোখে এই কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে বিস্তর গরমিল তাদের চোখে পড়ে । তালিকায় নাম রয়েছে কাশু ঘোষের। অথচ তার দোতলা বাড়ি ।
আরও পড়ুন – জেলার সমস্ত স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ফেব্রুয়ারিতেই শেষ করার নির্দেশ
সেই সময় বাড়িতে মালিক ছিলেন না। তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকরা । যদিও পরে কাশু ঘোষের নাম তালিকা থেকে কেটে দেন বিডিও । কাশু ঘোষের স্ত্রী শ্যামা ঘোষের দাবি, “শুনেছিলাম আবাস যোজনায় আমাদের নাম ছিল । কিন্তু এখনও কিছু আসেনি । এই পরিবারের ছয় ভাই শ্রমিকের কাজ করে এই বাড়িটা বানিয়েছেন । সবাই খেটে খান । কেউ কোনও রাজনৈতিক দল করেন না। কামাত গ্রাম থেকে কেন্দ্রীয় দলটি মালদহ সার্কিট হাউসে ফিরে আসে।
সূত্রে জানা যায় প্রথম দিনের পরিদর্শনে তাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতা।গৃহহীন মানুষগুলির নাম আবাস যোজনার তালিকায় নেই। দোতালা তিনতলা যা চকচকে বাড়ি, মটর সাইকেল, ট্রাক্টর রয়েছে বাড়িতে অথচ তাদের নাম বহাল তবিয়তে ওই আবাস যোজনা তালিকায় রয়েছে এবং ইতিমধ্যে কেউ কেউ টাকাও পেয়ে গেছেন।