
করোনার (Corona) তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আতঙ্ক ক্রমশ বেড়েছে। তবে করোনার দ্বিতীয় বর্ষে অক্সিজেনের হাহাকার, হাসপাতালে শয্যার অভাবে অকালে প্রাণ হারানোর খবর দেখেও কোনও শিক্ষা নেননি সাধারণ মানুষ! আতঙ্কে থাকলেও, উৎসবের আনন্দে ইতিমধ্যেই শপিং মল, দোকান, বাজার, রেস্তোরাঁয় ঢুঁ দিচ্ছেন কম, বেশি সকলে। কেউ কেউ মাস্ক ছাড়াই রাজপথে আনন্দের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এর মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন জানিয়েছেন, ভারতে অতিমারি (Corona) একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে গিয়েছে। ফলে, এই খবরে আনন্দ আরও দ্বিগুণ হওয়ারই কথা। কিন্তু আনন্দের মাঝে দোরগোড়ায় এসে গেছে করোনার তৃতীয় ঢেউ।
অতিমারির (Corona) শেষের আনন্দ না তৃতীয় ঢেউ-এর আতঙ্ক! সাধারণ মানুষ নিজেরাও ভীষণ দ্বিধাবিভক্ত। এই পরিস্থিতিতে aajkaal.in কে চিকিৎসক সুমন পোদ্দার বলছেন, ‘একথা ঠিক, যে মহামারির শেষপর্যায়ে শুধু ভারত নয়, গোটা পৃথিবীই চলে এসেছে। আগামী বছর মার্চ মাস পর্যন্ত এই পরিস্থিতি থাকবে। তারপর স্বাভাবিক হয়ে যাবে, অর্থাৎ সাধারণ জ্বর, ফ্লু-র মতোই কোভিড হয়ে উঠবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
আর ও পড়ুন ভুল থেকে শিখতে শিখতে এগিয়ে যেতে চান শিল্পা শেট্টি (Shilpa Shetty)
অতিমারী পরিস্থিতি কেটে গেলেও করোনা ভাইরাস থাকবেই। তৃতীয় ঢেউ আসবেই। তবে এর ভয়াবহতা আগের তুলনায় বেশি না কম, তা কেউ শুরুতে সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারবেন না। বতর্মান পরিস্থিতিতে অধিকাংশ ভারতীয়ই একটি অথবা দুটি টিকা নিয়ে ফেলেছেন।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য কর্মীদের টিকাকরণ মার্চ মাসেই সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ফলে বিশেষত যাঁরা সেই সময়েই দুটি টিকা নিয়ে ফেলেছিলেন, তাঁদের ইমিউনিটি এখন কমের দিকে। অথচ ভারতে এখনও পর্যন্ত বুস্টার ডোজ চালু হয়নি। এমনকি শিশুদের টিকাকরণও শুরু হয়নি।
যার ফলে ডেল্টা প্রজাতির সংক্রমণের আতঙ্ক থাকা স্বাভাবিক। কারণ এই প্রজাতি কিন্তু অ্যান্টিবডির প্রাচীর ভেঙেই সংক্রমণ ঘটাতে পারে। সেকারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিজ্ঞানীর কথার ভুল ব্যখ্যা করে মাস্ক ছাড়া ঘুরতে শুরু করলে পরিস্থিতি দ্বিতীয় ঢেউ-এর থেকেও খারাপ হতে পারে। তাই অতিমারী শেষপর্যায়ে চলে এলেও, করোনার সুরক্ষাবিধি এখনও দীর্ঘদিন পর্যন্ত মেনে চলতে হবে।’
অক্টোবরেই শিখরে পৌঁছবে করোনার তৃতীয় ঢেউ। তার মাঝেই কি পুজোয় ঠাকুর দেখতে বেরোবেন ভাবছেন! চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানাচ্ছেন, ‘কোভিড নিয়ে কোনও গবেষণার সম্পূর্ণ ফল এখনও পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছয়নি। শুরুতে বলা হয়েছিল আগস্টে আছড়ে পড়বে তৃতীয় তরঙ্গ। অথচ ভারতের কোভিড গ্রাফ এখনও পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেই দেখা যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে বিবৃতি জারি করলেও সাধারণ মানুষকে মাথায় রাখতে হবে, কোভিড কিন্তু সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যায়নি। এবং এর ভয়াবহতা যেকোনও সময় বাড়তে পারে। কোভিড গ্রাফ নিয়ন্ত্রণে এলে কেরল, মহারাষ্ট্রের চিত্র কিন্তু একেবারেই অন্যরকম। ফলে উদাসীনতার কোনও জায়গা নেই। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও রাজনৈতিক নেতারা জনসমাগমের ডাক দিচ্ছেন কথায় কথায়।
আর জনসমাগম মানেই করোনা সংক্রমণ বাড়বে। ফলে বিভিন্ন ক্লাবের কর্তারা যদি এই সময় শিশুসুলভ আচরণ করেন, এবং পুজোয় ভিড় বাড়ানোর পরিস্থিতি তৈরি করেন, তাহলে দ্বিতীয় তরঙ্গের থেকেও পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। ফলে এখন থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করে সুরক্ষাবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেব।’
১. বাড়ির বাইরে পা রাখতে হলে স্যানিটাইজার সঙ্গে নিয়ে যান।
২. শপিং মলের কোনও দোকানে ট্রায়াল রুমে ঢুকলে অবশ্যই স্যানিটাইজার স্প্রে করে নিন।
৩. শপিং মলের কোনও দোকানে ঢোকার পরেও মাস্ক পরে থাকুন।
৪. গড়িয়াহাট, হাতিবাগান, নিউ মার্কেটে গেলে ভিড় এড়িয়ে চলুন।
৫. রাস্তার পাশের কোনও দোকানের কিছু কিনলেও স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন সঙ্গে সঙ্গে।
৬. শপিং শেষে রেস্তোরাঁয় খেতে গেলেও সাবধানতা অবলম্বন করুন।