পলিটিক্স ছেড়ে ১০০ দিনের টাকা ছাড়ুক কেন্দ্রঃ কড়া মুখ্যমন্ত্রী

পলিটিক্স ছেড়ে ১০০ দিনের টাকা ছাড়ুক কেন্দ্রঃ কড়া মুখ্যমন্ত্রী

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

পলিটিক্স ছেড়ে ১০০ দিনের টাকা ছাড়ুক কেন্দ্রঃ কড়া মুখ্যমন্ত্রী। সকাল থেকে টেনশন। টেনশনই টেনশন। সাংবাদিকদের মধ্যে এই টেনশন একদম সংক্রামিত। কেও কাউকে ছাড়ছে না। কখন হেলিপ্যাডে যাব। কখন সিএম সাগরে ল্যান্ড করবেন তা নিয়ে চলছে খোঁজখবর। আগের রাতের তথ্যানুযায়ি দুপুর বারোটায় মুখ্যমন্ত্রীর ল্যান্ড করার কথা। সেটাই এখন পর্যন্ত ফাইনাল।

 

সকালে টিফিন করতে করতেই দুপুরের খাবারের প্লান পাকা করতে করতে কি কি করণীয় তা অফিসের সঙ্গে ফোনাফুনি করে সকলেই ঠিক করে নিচ্ছেন। তথ্য দপ্তরের কর্মীরা খুব সাহায্য করেছেন। প্রতিটি মুহূর্তে খোঁজ খবর নিচ্ছেন, দিচ্ছেন। ব্রেকফাস্ট- লাঞ্চ- টিফিন- ডিনারের খোঁজ নিখুঁতভাবে দরজায় কড়া নেড়ে জানিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। কাউকেই অভিযোগ করার কোন সুযোগ দিচ্ছেন না। স্বয়ং জেলা তথ্যাধিকারিক তার জেলা ও মহকুমার টিম নিয়ে অপারেশন ‘গঙ্গাসাগর’ এ নেমে পড়েছেন। এরই মধ্যে এক সৌমকান্তি ছফুটের অ্যাপ্রেনটিস মহকুমা তথ্যাধিকারিকের ওপর দায় পড়েছে আমাদের ইকো পার্ক টুরিজম শেডের দায়িত্ব যেখানে আমাদের ঠাঁই হয়েছে।

 

এই পরীক্ষায় পাশ হলে কোথাও তিনি জেলা তথ্যাধিকারিকের পোস্টে গিয়ে গ্যাঁট হয়ে বসে পড়বেন। এটা তার ট্রেনিং হল হাতেকলমে। সাংবাদিকদের সামলানোর মত সাংঘাতিক কষ্টসাধ্য কাজ ভূভারতে আর নেই। আগুন লাগলে তা জল ঢেলে একেবারে নিভিয়ে ফেলা যায়। কিন্ত সাংবাদিকদের নয়। একবার লাগলে ধিকিধিকি জ্বলতেই থাকবে। এদিক দিয়ে বলে দিদি এদিক ফিরুন ছবি পাচ্ছিনা। ওদিক দিয়ে বলে দিদি সেদিক ফিরুন নতুবা ছবি পাচ্ছিনা। আবার সেদিক থেকে বলে এদিকে ছবি পাচ্ছিনা। তবে একদিনেই দিদি তথা মুখ্যমন্ত্রী পুষিয়ে দিয়েছেন। প্রতিটি জায়গায় দাঁড়িয়েছেন।

আরও পড়ুন – তথ্য চিত্রের মাধ্যমে ভারতের মুক্তি সংগ্রাম ও বাংলার ভূমিকার প্রদর্শনী

প্রচুর কথা বলেছেন। প্রচুর হেডলাইন দিয়েছেন। প্রচুর পেজ ওয়ান কপি দিয়েছেন। কেন্দ্রকে ধমকালেন। গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলা ঘোষণা না করলে তিনি নিজেই একটা কিছু বাবস্থা নেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিলেন । কেনই বা মেলার টাকা দেবেন না, কুম্ভ মেলা পায় যখন ! এই সাগরমেলায় আসেন সারাভারতের পুণ্যার্থীরা। কম করে এক হাজার কোটি খরচ। এক কোটি মানুষের যাতায়াত। তাই এই মেলার দায় কেন্দ্রীয় সরকারের নেওয়া উচিত। একশ দিনের টাকা দিন বলেও দাবড়ে দিলেন কেন্দ্রকে। সহসী মমতাই পারেন এমন করে ধমক দিতে। আর এভাবেই দিনের শেষে শেষমুহুর্তের চমক দিয়ে, দিনের ‘দি এন্ড’ করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

 

মিডিয়ার এত বড় ‘হেডলাইন’ প্রাপ্তি কম ভাগ্যের কথা নয়। কেন্দ্রের মোদি সরকারকে নাম না করে হুঁশিয়ারি দিলেন, রাজনীতি না করে একশ দিনের কাজের টাকা দিক মোদি, থুড়ি কেন্দ্র, এটা বলতে শক্ত কলজে লাগে। সাংবাদিকদের পাওয়ানা ষোল আনার পর আঠারো আনা হল। আজকের এক ঘন্টা সুমন আর সব বাংলা চ্যানেলের জব্বর হেডলাইন

 

। আগামিকাল সব বাংলা সংবাদপত্রের হেডলাইন ঠিক করে দিয়ে দিদি কপিলমুনির মন্দির প্রাঙ্গন ত্যাগ করলেন। সন্ধ্যায় সাগর মেলায় কেনাকাটা করে আরেক প্রস্ত সাংবাদিকদের স্পেশাল স্টোরির ভান্ডার পূর্ণ করে আজকের মত ঘুমাতে পাঠালেন আমাদের। আমাদের বলতে মিডিয়া গোষ্ঠীকে। রাতে বিশেষ দিদি ঘনিষ্ট সাংবাদিকদের বিশেষ কোন স্কুপ খবর দেবেন কিনা তা নিয়ে অনেকের মনে উৎকন্ঠা দেখা গেল। আগামীকালের কাগজ আর বিশেষ মিডিয়া দেখার আগে বোঝা যাবেনা কারকপালেকি বাঁশঅপেক। করে আছে।

 

সকালে দিদির হেলিকপ্টার ওড়া পর্যন্ত অপেক্ষা। তারপর আবার লাগেজ নিয়ে বাসের মধ্যে সিঁধে যাওয়া। তারপর যথারীতি কচুবড়িয়া হয়ে মুড়িগঙ্গার পারে লট এইটে গিয়ে লাক্সারী বাসে আশ্রয় নেওয়া। অপরাহ্নে নিজের ঘরে ফিরে মোটামুটি দুদিনের নির্ভেজাল অলস ছুটি কাটানো। আসলে হাংওভার কাটানো। তারপর তৃতীয় দিন থেকে যে কে সেই। আগের রোজনামচায় ফিরে যাওয়া। যত সহজে লেখা শেষ হল তত সহজে সবকিছুর রেশ কাটানো সহজ নয়। কিন্তু এতসবের মধ্যে একটি ‘মন ভার’ করা খবর আমাদের প্রিয় সাংবাদিক এবিপি আনন্দ-এর সুমন ঘড়াইয়ের সেলিব্রাল অ্যাটাক হয়েছে। তা, দ্রুত সেরে ওঠার কামনা করি। দীর্ঘদিনের পরিচয়।

 

একদা সহকর্মী। মুখ্যমন্ত্রী তখন সবে হেলিপ্যাড নেমে হেলিপাড লাউঞ্জে যাবার আগে অনেক গুলি প্রকল্প উদ্বোধন করলেন। তখনই তাকে সুমনের অসুস্থতার ঘটনাটি সাংবাদিকরাই জানান। মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গেই ‘এয়ার ‘আম্বাবুলেন্সে’এর বাবস্থা করে দেন। তাকে লিফট করে নিয়ে যাওয়া হল কলকাতায়। মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসার বাবস্থাও করে দেন। তারপর চলল একের পর এক কর্মসূচী শেষ করার পালা। শেষ হল বিকাল সাড়ে চারটেতে।

 

লাঞ্চ না করায় আমার তখন পেটে ছুঁচোয় ডন কষছে। সাড়ে পাঁচটায় টিফিন করে এই লিখতে বসা। ‘মুখোমুখি বসিবার কোন বনলতা সেন আমার নেই। তাই ফিরে যাবার আগের হেলিপাডে মুখ্যমন্ত্রীকে কলকাতায় ফেরার ছবি করে লাঞ্চ ও ফেরার বাস ধরার অধীর আগ্রহ নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া। সরি। তার আগে রাতের ডানহাতের কাজটা অবশ্যই সারব। দিনটিতে অনেক চাওয়া পাওয়ার হিসাব শেষে আবার ঘরে ফেরার আশায় উন্মুখ।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top