মঙ্গলবার সকালে স্পেনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়। এদিন সকালের মঙ্গলবার কলকাতা বিমানবন্দর থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল মমতার। বিমান বেশ কিছুটা দেরি হওয়ার কারণে বিমানবন্দরে পৌঁছে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। পাঁচ বছর পর তাঁর বিদেশ যাত্রায় কেন স্পেনকে বেছে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী? এদিন তার উত্তরে তিনি জানান, প্রদীপে তেল ভরতেই তাঁর এই স্পেন সফর।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও জানান, স্পেন থেকে বার বার প্রতিনিধিরা বাংলায় এসেছেন। কিন্তু বাংলা থেকে কেউ আগে যেতে পারেননি। মমতা বলেন, ”স্পেন আমাদের এখানে বইমেলায় এসেছিল। ওখানে নির্মাণশিল্প-সহ ভাল ভাল কিছু শিল্প রয়েছে। ওরা বার বার আমাদের এখানে আসে, আমরা যাই না। ওদেরই আমন্ত্রণে আমরা যাচ্ছি। দেখা যাক কী হয়।”
আরও পড়ুনঃ “প্রতিহিংসার রাজনীতি”, ইন্ডিয়া জোটের দিন অভিষেককে তলব প্রসঙ্গের দাবি মমতার
বিদেশ থেকে কি বড় কোনও চমক নিয়ে আসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ”চমক তো পরে। প্রদীপ জ্বালানোর আগে প্রদীপে তো তেল ভরতে হয়। সেই জন্যই যাচ্ছি। সেই জন্য এই ছোট দেশটিকে বেছে নেওয়া।”
কলকাতার তিন ফুটবল ক্লাব ইস্ট বেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহামেডান স্পোর্টিংয়ের তরফে এক জন করে প্রতিনিধি মমতার সফরে থাকছেন। পরে লন্ডন থেকে এই প্রতিনিধি দলে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক তথা ক্রিকেট বোর্ডের প্রাক্তন প্রধান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। বিমানবন্দর থেকে সে কথা জানিয়েছেন মমতা।
কলকাতা থেকে মমতা প্রথমে দুবাই যাবেন। সেখানে বাণিজ্য সম্মেলন রয়েছে। প্রবাসীদের সঙ্গে বৈঠকও করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর যাবেন স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন রাজ্যের শিল্পপতিদের একটি প্রতিনিধিদল। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের আগে বিদেশি লগ্নি আনাই ১১ দিনের এই সফরের লক্ষ্য হতে চলেছে। মমতা ফিরবেন আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মমতার স্পেন সফর শুরু হবে ‘ফুটবল বৈঠক’ দিয়ে। ১৪ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার মাদ্রিদে লা লিগার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ার তেভাজ়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। বাংলার ফুটবলের উন্নতিকল্পে লা লিগার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি ‘মউ’ সাক্ষরিত হতে পারে। ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকতেই সৌরভ লন্ডন থেকে মাদ্রিদে আসবেন। মমতার সঙ্গে থাকছেন মোহনবাগানের ফুটবলকর্তা দেবাশিস দত্ত, ইস্টবেঙ্গলের রূপক সাহা এবং মহমেডানের ইশতিয়াক আহমেদ।
এর আগেও সিঙ্গাপুর এবং লন্ডনে এই ধরনের সফর করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মাঝে তাঁর শিকাগো এবং চিন সফরে ছাড়পত্র দেয়নি কেন্দ্র। যাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ হিসাবে বর্ণনা করেছিল তৃণমূল। এ বারেও অনেকে সেই আশঙ্কা করেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত মমতার বিদেশসফরের অনুমতি মিলেছে। মঙ্গলবার সকালে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিমানে উড়ে গেলেন মমতা।
২০২১ সালে বিপুল ভোটে জয়ের পর তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে মমতা বলেছিলেন, এ বার তাঁর ‘পাখির চোখ’ শিল্পায়ন। মূলত মাঝারি এবং বড় শিল্পের উপরেই গুরুত্ব দিতে চায় রাজ্য সরকার। নতুন নতুন আঙ্গিকেও বিনিয়োগ আনতে সচেষ্ট নবান্ন। ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক উপলক্ষে মমতা মুম্বই যাওয়ার অব্যবহিত আগে বাণিজ্যনগরীতে গিয়ে বণিকমহলের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থ এবং শিল্পমন্ত্রী তথা বর্তমান আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র। প্রশাসনের আশা, শিল্পায়নের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রীর স্পেন এবং দুবাই সফর আশাপ্রদ হবে।