বিজেপির বিরুদ্ধে, ইন্ডিয়া জোটের সমর্থনে একসঙ্গে মমতা-সেলিম-অভিষেক-অধীরের ব্যানার বাংলায়

বিজেপির বিরুদ্ধে, ইন্ডিয়া জোটের সমর্থনে একসঙ্গে মমতা-সেলিম-অভিষেক-অধীরের ব্যানার বাংলায়

বছর ঘুরতেই লোকসভা নির্বাচন। আর তার আগে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোমর বাঁধছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তৈরি হয়েছে ইন্ডিয়া জোট। এক ছাতার তলায় আসছে তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম-সহ অন্যান্য দলগুলি। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। বাধ সাধছে প্রাদেশিক রাজনীতির সমীকরণ। বিশেষ করে বাংলা, পঞ্জাব, দিল্লি, কেরলের মতো রাজ্যগুলিতে। বাংলায় যেমন মহম্মদ সেলিম-অধীর চৌধুরীদের অবস্থান স্পষ্ট, বিজেপি ও তৃণমূলকে এক পংক্তিতে রেখে উভয়ের বিরুদ্ধেই লড়াই জারি তাঁদের। রাজ্য রাজনীতির এমন সমীকরণ ঘিরে যখন প্রশ্ন উঠছে চব্বিশের রোডম্যাপ ঘিরে, তখন নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিচ্ছে ইন্ডিয়া জোটের সমর্থনে ব্যানার। মমতা-অভিষেক-সনিয়া-রাহুল-সেলিম-সুজন সক্কলের মুখ একসঙ্গে শোভা পাচ্ছে ব্যানারে।

আরও পড়ুনঃ কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েনের মাঝেই অর্থ কমিশনের ১৭০০ কোটি টাকা পেল রাজ্য

বাংলার রাজনীতিতে এমন ছবি বিরল। তৃণমূল-বাম-কংগ্রেস সব দলের নেতাদের মুখ একসঙ্গে। এক ব্যানারে। শুধু তাই নয়, একই ব্যানারে লেখা রয়েছে ‘ইনক্লাব’, ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিও। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে সামিল হওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে সেখানে। হুগলি জেলার বিভিন্ন জায়গায় এমন ব্যানার লাগানো হয়েছে। চাঁপদানী, ভদ্রেশ্বর, পোলবা-সহ অনেক জায়গায় দেখা গিয়েছে মমতা-সেলিম-অধীরদের ছবি নিয়ে এই ব্যানার। কিন্তু কারা ছড়াল এসব? ব্যানার দেখে তা বোঝার উপায় নেই। কারণ, কোনও দল বা কোনও সংগঠনের নাম সেখানে উল্লেখ নেই। শুধু ইন্ডিয়ার সমর্থনে প্রচার করা হয়েছে। আর এই নিয়েই জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে জেলা রাজনীতির অন্দর মহলে।

 

জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব বলছে, কারা এই ব্যানার ছড়িয়েছে তা তাদের জানা নেই। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইন বলছেন, ‘ইন্ডিয়া জোট শক্তিশালী হোক, এটা আমরা সবাই চাই। বিজেপিকে আটকাতে হলে ইন্ডিয়া জোটকে শক্তিশালী করতে হবে। তবে এই পোস্টার বা ব্যানার কারা লাগাচ্ছে, সেটা আমাদের জানা নেই।’ ‘ইনক্লাব’ ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান একসঙ্গে এক ব্য়ানারে থাকা নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না তিনি। বলছেন, ‘যখন সব দলগুলি একত্রিত হবে, সেক্ষেত্রে কী স্লোগান হবে, কী লেখা হবে, সেটা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু এটা কারা লিখেছে, সেটা আমাদের জানা নেই।’

 

ইন্ডিয়া জোটের সমর্থনে এই পোস্টারের দায় নিতে নারাজ বামেরাও। সিপিএম জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলছেন, ‘আমাদের নেতৃত্বের অনুমতি ছাড়া ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি, যেখানে এই ধরনের পোস্টার দেখবে, যেন সেগুলি ছিঁড়ে দেওয়া হয়।’ কংগ্রেসের হুগলি জেলা সহসভাপতি দেবব্রত চট্টোপাধ্য়ায় কিন্তু ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বিষয়ে কিছুটা নমনীয়। কংগ্রেস ও সিপিএমের দলীয় কর্মীদের বিভ্রান্ত করতেই এই ব্যানার ছড়ানো হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। আর এসবের জন্য সরাসরি বিজেপির দিকেই আঙুল তুলছেন দেবব্রতবাবু। বলছেন, ‘ইন্ডিয়া জোট হওয়ার পর বিজেপি ভয় পেয়ে গিয়েছে। যাতে এই সমঝোতা ভেঙে যায়, সেই চেষ্টা করছে বিজেপি। সিপিএম ও কংগ্রেস কর্মীদের বিভ্রান্ত করে নিজেদের হাত শক্ত করার চেষ্টা করছে বিজেপি। বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগাচ্ছে।’ ইন্ডিয়া জোটের কোনও দল এই ব্যানার ছাপায়নি বলেই মনে করছেন কংগ্রেসের জেলা সহসভাপতি।

 

এদিকে ব্যানার বিতর্কে বিজেপি আবার খোঁচা দিতে শুরু করেছে তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেসকে। পদ্ম শিবিরের হুগলি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউ বলছেন, ‘বেঙ্গালুরুতে যখন এদের শীর্ষ নেতৃত্বরা বৈঠক করেছিল, তখনই রাজ্যের মানুষের কাছে এদের আসল ছবি পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। এদের দিল্লিতে একরকম মুখোশ, পশ্চিমবঙ্গে আরেকরকম মুখোশ। এই ব্যানার নিয়ে সাধারণ মানুষের এতটুকু মাথাব্যথা নেই।’

en.wikipedia.org