কামদুনি মামলায় মুক্তি পেয়েছে চার জন অভিযুক্ত। এরপর থেকে কার্যত আতঙ্কে রয়েছেন কামদুনির প্রতিবাদী টুম্পা কয়াল এবং মৌসুমী কয়াল। সেই মর্মে এবার দিল্লি গিয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছে স্মারকলিপি জমা দিলেন কামদুনির মৌসুমী কয়াল, টুম্পা কয়াল-সহ প্রতিবাদীরা। স্মারকলিপিতে জানালেন, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে কামদুনি ধর্ষণকাণ্ডে চার জন জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাই স্থানীয় প্রতিবাদীরা আতঙ্কিত। হুমকিও পাচ্ছেন তাঁরা।
আরও পড়ুনঃ সল্টলেকে বিজেপির রাজ্য দফতরের মেন গেটের সামনে বিক্ষোভ বারাসাতের বিজেপি কর্মীদের
এই ঘটনার জেরে রাজ্য সরকারের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কামদুনির বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য জাতীয় মহিলা কমিশনকে একটি দল পাঠানোর অনুরোধও করেছেন প্রতিবাদীরা। বৃহস্পতিবার দিল্লি গিয়ে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মার সঙ্গে দেখা করলেন মৌসুমী, টুম্পারা। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। জাতীয় মহিলা কমিশনে স্মারকলিপি জমা করেন প্রতিবাদীরা।
সেই স্মারক লিপিতে জানান হয়, ২০১৩ সালের ৭ জুন কলেজ থেকে ফেরার পথে কামদুনির ২০ বছরের তরুণীকে অপহরণ করেন কয়েক জন। একটি কারখানায় নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। এর পর তাঁর গলা কেটে দেহে ফেলে চলে যায় অপরাধীরা। ২০১৬ সালে দায়রা আদালত আনসার আলি, সইফুল আলি, আমিনুল আলিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। বাকি তিন জন ইমানুল ইসলাম, আমিনুর ইসলাম, ভোলা নস্করকে যাবজ্জীবন দেয়। ২০২৩ সালের ৬ অক্টোবর হাই কোর্ট মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাহার করে আনসার এবং সইফুলের সাজা বদলে আমৃত্যু যাবজ্জীবন দেয়। নিম্ন আদালতে আর এক ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিনুল বেকসুর খালাস পেয়েছেন। অন্য দিকে, নিম্ন আদালতে আমৃত্যু জেলের সাজাপ্রাপ্ত ইমানুল, আমিনুর এবং ভোলানাথ নস্করও ১০ বছর জেল খাটার কারণে খালাস পেয়েছেন হাই কোর্ট থেকে।
প্রতিবাদীরা জানিয়েছেন, হাই কোর্টের এই রায়ে তাঁরা ‘সন্তুষ্ট নন’। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন। স্মারকলিপিতে আরও জানানো হয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই করা হয়েছিল, তাঁরা জেল থেকে ছাড়া পাওয়ায় আতঙ্কিত প্রতিবাদীরা। তাঁরা মনে করছেন, তাঁদের ক্ষতি করা হতে পারে। তাঁরা হুমকি পাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন। এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও স্মারকলিপিতে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রতিবাদীরা। তাঁরা অনুরোধ করেছেন, কামদুনির বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য প্রতিনিধি দল পাঠানো হোক।
সংবাদমাধ্যমের কাছেও মৌসুমী একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কামদুনিকাণ্ডে অভিযুক্তেরা জেল থেকে মুক্তি পাওয়ায় গ্রামে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মেয়েরা ঘর থেকে বার হতে ভয় পাচ্ছেন। রাজ্য সরকারের দিকেও আঙুল তুলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের গাফিলতিতেই তাঁরা বিচার থেকে বঞ্চিত। তাই তাঁরা তাঁদের মতো উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজয় চক বা যন্তর মন্তরে সুবিচারের দাবিতে ধর্নায় বসার কথা মৌসুমী, টুম্পাদের। ধর্নায় হাজির থাকতে পারেন নির্ভয়ার মা।