আন্তর্জাতিক বিয়ার দিবসে কলকাতায় কবে থেকে মদের প্রচলন শুরু? উল্লাসের আগে জানুন ‘বিয়ার কাহিনি’ , আজ আন্তর্জাতিক বিয়ার দিবস। বিয়ার নামের তুলনামূলক হালকা নেশার এই মদকে জনপ্রিয় করে তোলার উদ্দেশ্যে প্রতি বছর অগাস্ট মাসের প্রথম শুক্রবার দিনটাকে ‘আন্তর্জাতিক বিয়ার দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্রুজ শহরে বিয়ারপ্রেমীদের একটা ছোট্ট সংগঠনের উদ্যোগে বছর ১৫-১৬ আগে বিয়ার দিবস হিসেবে পালন করা আরম্ভ হয়েছিল। অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।
খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের মতো একেবারে প্রাথমিক চাহিদা না হলেও মদ জাতীয় নেশার দ্রব্য সভ্য মানুষের সমাজে বহু প্রাচীন কাল থেকেই সমাদার পেয়ে আসছে। পৃথিবীর সমস্ত প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসেই সুরাপানের নিদর্শন পাওয়া যায়। ভারতীয় উপমহাদেও তার ব্যতিক্রম নয়। ভারতীয় উপমহাদেশে মদের প্রচলন ঠিক কবে থেকে তা বলা কঠিন। কেউ কেউ বলেছেন নাকি চার হাজার পূর্ব-সাধারণাব্দেও উপমহাদেশে মদের প্রচলন ছিল! আলোচনা যখন বিয়ার নিয়ে তখন সে প্রসঙ্গেও কেউ কেউ বলেছেন, আর্যরা যে সুরা পান করত, তা নাকি একরকম বিয়ার জাতীয় পানীয়!
এমনটা মনে করার কারণ হল, বিয়ার তৈরি হয় চাল এবং যব জাতীয় শস্য থেকে। প্রাচীন গ্রন্থাদি থেকে আর্যদের সুরা প্রস্তুতের যতটুকু তথ্য পাওয়া যায়, সেখানে চাল-যবের মতো শস্যকণা থেকে সুরা তৈরি হত বলে বলা হয়েছে। তবে আর্যদের সুরা যে ঠিক বিয়ার জাতীয় পানীয় ছিল, এ সব তথ্য থেকে তা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। যেহেতু তেমন কোনও ইতিহাসভিত্তিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
আর বঙ্গদেশে মদের প্রচলন ঠিক কবে থেকে? সেটা অবশ্য পণ্ডিতেরা ঠিক বলতে পারেননি, তার কারণ সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীর আগের তেমন কোনও ইতিহাসই এই বঙ্গভূমির পাওয়া যায় না। গেলেও খুবই কম। তা থেকে যেখানে মদ্যপানেরই প্রমাণ দেওয়া কঠিন, সেখানে বিয়ারের মতো বিদেশি নেশার পানীয় কবে থেকে এলো তা বলা একেবারেই সম্ভব নয়।
কলকাতা শহর তথা বঙ্গদেশের মদ্যপানের ইতিহাসে সব থেকে স্বর্ণোজ্জ্বল সময় বোধ হয় অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দী। তার আগে বাঙালিরা মদ্যপান করত না, এমন নয়, করলেও তা সীমাবদ্ধ ছিল একেবারে উচ্চবিত্ত এবং দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষজনেদের মধ্যে। সাধারণ মানুষের মধ্যে লুকিয়ে-চুরিয়ে কেউ কেউ মদ বা ওই জাতীয় পানীয়ের প্রতি আগ্রহ দেখালেও সমাজের ভয়ে তা খুব ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারেনি।
আরও পড়ুন – মন্দারমনিতে গিয়ে হোটেলে ওঠার আগে সাবধান! বড় পদক্ষেপ নিল প্রশাসন
যতদূর জানা যায়, বিয়ার জাতীয় হালকা পানীয়ের উদ্ভব ইউরোপের মাটিতে। এ দেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যবসা করতে এসে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে সুরাজাতীয় মাদকও নিয়ে আসে বিক্রির জন্য। আঠারো শতকের গোড়ার দিকে শহর কলকাতায় প্রধানত ইউরোপিয়দের জন্য যে সব পাঞ্চ নামের পানশালা গজিয়ে উঠেছিল, সেখানে রাম, হুইস্কি, শেরির সঙ্গে বিয়ারও পাওয়া যেত।