নীল বাতির গাড়ি চড়ে শুটিংয়ে সাংসদ-অভিনেতা নুসরত? আইন কি বলছে? বিপাকে সাংসদ-অভিনেতা নুসরত জাহান। হচ্ছে বিস্তর সমালোচনা। নেপথ্যে এক নীল রঙের বাতি লাগানো গাড়ি। ঠিক কী ঘটেছে? সোমবার সকালে শহরের রাস্তায় পাপারাৎজির ক্যামেরায় বন্দি হন নুসরত জাহান ও যশ দাশগুপ্ত। ‘টলিউড অনলাইন’ নামক এক ‘প্যাপ অ্যাকাউন্ট’ থেকে নুসরত-যশের একটি ভিডিয়োও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে নীল রঙের বাতি লাগানো একটি গাড়ির (মডেল: ফর্চুনার) ডান দিক থেকে প্রথমে যশকে নামতে দেখা যায়। এর পরে দেখা যায়, নুসরতও ওই গাড়ি থেকে নেমে আসেন (ওই গাড়ির নম্বর প্লেটে লেখা রয়েছে: ডব্লিইবি১০৬৬৫২)। পাপারাৎজির ক্যামেরা দেখে হাসিমুখে এগিয়ে যান দু’জনেই। এর পরেই খানিক এগিয়ে ভ্যানিটি ভ্যানে ওঠেন যশ ও নুসরত। কোথায় ঘটেছে এই ঘটনা?
পাপারাৎজি অ্যাকাউন্টের তরফে দাবি করা হয়েছে, যশ-নুসরত এসেছেন তাঁদের প্রযোজিত ছবি ‘মেন্টাল’-এর শুটিংয়ে। গাড়ি থেকে নেমে ভ্যানিটি ভ্যানে উঠে পড়া সেই ইঙ্গিতই করছে বলে দাবি নেটিজেনদের একটা বড় অংশের। নুসরতের হাতে ছিল স্পাইরাল বাইন্ডিংয়ের একটি খাতা। যা দেখে অনুমান, সেটি চিত্রনাট্যের খাতা। নেটিজ়েনদের রশ্ন, “নুসরত জাহানের রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও নীল বাতির গাড়ি ব্যক্তিগত কারণে ব্যবহার কি আদপে নিয়মভঙ্গ নয়?”
নুসরত জাহানের কি আদৌ নীলবাতি লাগানো গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়ানোর অধিকার আছে? পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহন দপ্তরের তরফে জারি করা ২০১৪ সালের ১৯ জুনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৪ ধরনের বাতি লাগানো গাড়ি রাজ্য জুড়ে ঘুরে বেড়ায়। সেগুলি হল: (১) ফ্ল্যাশার-যুক্ত লালবাতির গাড়ি, (২) ফ্ল্যাশার-বিহীন লালবাতির গাড়ি, (৩) ফ্ল্যাশার-যুক্ত নীলবাতির গাড়ি ও (৪) ফ্ল্যাশার-বিহীন নীলবাতির গাড়ি। ফ্ল্যাশার-যুক্ত লালবাতির গাড়ি ব্যবহারের অধিকার রয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, রাজ্যপাল, ক্যাবিনেট মন্ত্রী, বিধানসভার স্পিকার ও বিরোধী দলনেতার। ফ্ল্যাশার-বিহীন লালবাতির গাড়ি চড়ার অধিকারী কারা? বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার, রাজ্য সরকারের মুখ্য সচিব, কলকাতা পুরসভার মেয়র ও রাজ্য সরকারের প্রতিমন্ত্রীরা। ফ্ল্যাশার-যুক্ত নীলবাতির গাড়ি ব্যবহারের অধিকারী পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডভোকেট জেনারেল, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল, রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার, জন-পরিষেবা কমিশনের চেয়ারম্যান, সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ও সংসদ বিষয়ক সচিব।
অন্যদিকে, ফ্ল্যাশার-বিহীন নীলবাতির গাড়ি ব্যবহারের অধিকার রয়েছে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব, মানবধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা, পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল ও অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল, কলকাতা পুলিশ কমিশনার, ডিভিশনাল কমিশনাররা থকে শুরু করে রাজ্যের তথ্য কমিশনার, জেলা আদালতের বিচারপতিরা, জেলাশাসক ও এসপি, জেলাশাসক ও এসপি ও কলকাতা পুরসভার মিউনিসিপাল কমিশনার এবং উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের চেয়ারম্যানের। নুসরত রাজ্যসভার সাংসদ (Member of Parliament)। ২০১৪ সালের ১৯ জুনের ওই বিজ্ঞপ্তি অন্তত বলছে, তাঁর কোনও ধরনের বাতি লাগানো গাড়ি ব্যবহারেরই অধিকার নেই। সে ক্ষেত্রে তিনি যদি সত্যিই নীল বাতির গাড়ি চড়ে শুটিংয়ে আসেন (অর্থাৎ যদি ওই নীল বাতি-লাগানো গাড়িটি ‘মেন্টাল’ ছবিটির শুটিংয়ে স্বার্থে ব্যবহার না-করা হয়ে থাকে), তা কি আইন-বিরুদ্ধ নয়? উত্তর, ‘হ্যাঁ’ হলেও নুসরত আপাতত চুপই।
আরও পড়ুন – কড়া পদক্ষেপ! গাড়িচালকদের লাইসেন্স সাসপেন্ড করতে পারবেন SI-রা
প্রসঙ্গত, বাতি-লাগানো গাড়িকে কেন্দ্র করে জনমানসে যে ধারণা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত, তা হল: রাস্তাঘাটে বিশেষ সুবিধে ভোগ। ভিড় রাস্তায় আগে ছেড়ে দেওয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক সুবিধেরই অধিকারী হন এই ধরনের বাতি-লাগানো গাড়ির অধিকারীরা। তবে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কারণে এই ধরনের গাড়ির ব্যবহার সরকারি নিয়মের পরিপন্থী।