নিজস্ব সংবাদদাতা,বীরভূম, ১ লা সেপ্টেম্বর : পথ চলা শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। সেই থেকে স্বপ্নের জালবোনা শুরু উখড়ার বাসিন্দা মিলন বাদ্যকরের। ক্যারেটের প্রতিটি পর্যায় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে শেষ করে আজ তিনি সেকেণ্ড ডিগ্রি ব্ল্যাক বেল্টের অধিকারী। যিনি ২০০৭ সালে ফাষ্ট ডিগ্রি ব্ল্যাক বেল্ট এবং ২০১৭ সালে এই সেকেণ্ড ডিগ্রি ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করেন।মিলন বাবুর কাছ থেকে জানা গিয়েছে, চাকরি বাকরি করার কোনদিন ইচ্ছা জাগেনি যেমন তাঁর, ঠিক তেমনই চাকরী করার কোনদিন সুযোগও হয়নি। আর এজন্য কোনদিন আক্ষেপও করেননি। কেননা ২০০৮ সাল থেকে কচিকাঁচা শতাধিক ছেলে মেয়ে যুবক যুবতীকে তিনি ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছেন। শুধু বর্ধমানই নয়, এমনকি বীরভূমের একাধিক জায়গায়ও তিনি প্রশিক্ষণ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। নিজ হাতে শিখিয়ে চলেছেন মেয়েদের আত্মরক্ষার বিভিন্ন কৌশল।
বর্তমানে এই পেশার ওপর ভর দিয়েই তাঁর সংসার চালানো। মিলন বাবুর পরিবারে রয়েছেন পিতা মাতা, স্ত্রী এবং সন্তান। এতদিন প্রশিক্ষণ দেবার এবং ডিগ্রি অর্জনের সুবাদে আজ তিনি wko shinkyokushinkai এর ভারতের একজন অন্যতম প্রতিনিধি এবং পশ্চিমবঙ্গের ব্রাঞ্চ চিপ। তবে প্রদীপের আলো যতটাই ছড়িয়ে পড়ুক না কেন, প্রদীপের তলাটা অন্ধকারই। ঠিক তেমন আজ শতাধিক ছেলেমেয়েকে প্রশিক্ষণ দেবার একজন সফল কারিগর হলেও মিলনবাবুর নিজের অবস্থা তীরে এসে তরী ডোবার মত। হ্যাঁ! কেননা এই পর্যায়ের একজন ট্রেনি নিজের কেরিয়ারে স্বপ্ন দেখেন প্রতিপক্ষকে কাহিল করে চাম্পিয়নশিপে নিজের অধিকার বুঝে নেবার এবং আরও খেতাব অর্জন করার। মিলনবাবুর ক্ষেত্রেও সে সুযোগের হাতছানি রয়েছে কিন্তু সুযোগ নেই তাতে সাড়া দেবার। কেননা আর্থিক অসুবিধার শিকলে মিলনবাবুর হাত পা আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা।মিলনবাবুর বাবা একজন গাড়িচালক। ছেলের কেরিয়ার আজ স্বপ্নের দোরগোড়ায় দেখেও কিছু করার নেই গর্বিত পিতার। যে বাবা মায়ের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে আজ এই ক্যারাটে জগতে প্রবেশ মিলনবাবুর।
চলতি বছরের ১০, ১১ এবং ১২ই নভেম্বর ওপেন ওয়েট ওয়ার্ল্ড টুনামেন্ট অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জাপানে। যেখানে মিলনবাবু যাবার সুযোগ পেয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের দুইজন বঙ্গসন্তান এই প্রতিযোগিতায় যাবার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু এখানে প্রধান অন্তরায় আর্থিক অস্বচ্ছলতা। ওখানে থাকা খাওয়া ফ্রি হলেও যাওয়া আসার খরচ যোগানের মত ক্ষমতা মিলন বাবুর নেই। কাজেই অপরজন যেতে পারলেও মিলনবাবু যেতে পারছেন না। আর আক্ষেপের সুরে ক্যারাটে শিক্ষক মিলন বাবু বললেন , “এতদিন যে খেতাব অর্জনের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম আজ টাকা পয়সার জন্য পেরে উঠছি না। বন্ধু বান্ধব পাড়া প্রতিবেশী সকলকেই সাহায্য চেয়েছি কিন্তু আশার বাণী কেও শোনায়নি। তাই পাসপোর্ট থাকতেও সম্ভবত যাওয়া হচ্ছে না।” তবে এরপরেও হাল ছাড়তে নারাজ তিনি। দিনকয়েক আগে ‘দিদিকে বলো’ তে ফোন করে সাহায্যের আর্তিও করেছেন। সাহায্যর আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাতে সময় যে বড় কম। তাই এখন যাওয়া হবে কিনা একমাত্র ভাগ্য এবং ভগবানের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন মিলনবাবু। আর সময়ই বলবে এই বঙ্গসন্তানের কেরিয়ারে নতুন পালক জুটবে কি না!