ভিন রাজ্যের মাখনা ফাটা শ্রমিকদের ছট পূজা পালনে আলোক সয্যায় সজ্জিত হয় হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রতিটি ঘাট। যেখানে কর্ম সেখানেই ধর্ম। বিগত পনেরো বছর ধরে বিহারের দাঁড়ভাঙা জেলার হিন্দু ধর্মের বানপাই সম্প্রদায়ের প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক অর্থ উপার্জনের জন্য প্রতিবছর মালদার জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরে এসে বসবাস করে। আর এখানেই জাঁকজমক ভাবে খুব ধুমধাম করে প্রতিবছরই তারা ছট পূজা পালন করে। ফলে হরিশচন্দ্রপুরের অধিকাংশ ঘাটই আলোকসজ্জায় আলোকিত হয়।
মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর মাখনা চাষের উৎপত্তিস্থল। মাখনা চাষ হলো একটি আর্থিক লাভজনক ব্যবসা। হরিশ্চন্দ্রপুরের অধিকাংশ চাষী রায় ১৫ বছর ধরে মাখনা চাষ করে আসছে। মাখনা ফল চাষ করার পর জল থেকে তুলে শুকিয়ে আগুনে গরম করে ফাটাতে হয় ফলে তৈরি হয় লাউয়া। তারপর চলে যায় বিভিন্ন দেশেও বিদেশে। যার দ্বারা প্রচুর মুনাফা পেয়ে থাকে মাখনা ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এই মাখনা ফাটানোর জন্য ভিন রাজ্য থেকে আনতে হয় শ্রমিকদের। ফলে বছরের প্রায় আট মাসই অস্থায়ী ভাবে ঘর তৈরি করে সপরিবারই থাকে হরিশ্চন্দ্রপুরে। তাই হরিশ্চন্দ্রপুরের বাঙালি মাখনা চাষিরা ও সহযোগিতা করে থাকে তাদের ছট পূজা পালনে। দারভাঙ্গা বাসীদের কাছে এই ছট পূজায় হল প্রধান উৎসব।
আরও পড়ুন – পদ্মা পারের হাওয়ায় উত্তাল গঙ্গা পারের কলকাতা
শঙ্কর সাহানি জানান ছট উত্সব এমন একটি কঠিন ও ঐতিহ্যশালী উত্সব, যেখানে কোনও প্রতিমা বা মূর্তি পুজো করা হয় না। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী এই উত্সব চলে চারদিন ধরে। সন্তানের স্বাস্থ্য, সাফল্য, দীর্ঘায়ুর জন্য এক কঠোর উপবাস পালন করা হয়ে এই পবিত্র পুজোয়। প্রসঙ্গত, এই পুজো পরিবারের মহিলারাই শুধু নয়, পুরুষরাও সমানেভাবে সন্তানের মঙ্গলকামনায় উপবাস করতে পারে। ছট উত্সবের প্রথম দিনে স্নান, দ্বিতীয় দিনে খরনা ও তৃতীয় দিনে সূর্যাস্তের আগে অর্ঘ্য দান ও চতুর্থ দিনে ভোরে সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করে সকলকে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
এই নিয়মগুলি পালনের পরই উপবাস ভঙ্গ করা যায়। তার আগে উপবাস ভঙ্গ করলে পরিবার ও সন্তানের উপর কুনজর ও অশুভ প্রভাব পড়ে বলে মনে করা হয়।
প্রশাসনিক দিক থেকেও কড়া ব্যবস্থা এবং সম্পূর্ণ সহযোগিতা করা হয় বলে জানান শংকর সাহানি। তিনি আরও জানান বাঙ্গালীদের মাঝে থেকেও হিন্দু-মুসলিম ঐক্যবদ্ধভাবে সব রকম সহযোগিতা করে থাকে ছট পূজা পালনে।