নিজস্ব সংবাদদাতা,বীরভূম,৯ ই আগস্ট : সিউড়ি পৌরসভার অন্তর্গত ১৪ নাম্বার ওয়ার্ডের বাড়ুইপাড়ায় অবস্থিত অঙ্গনারী কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে বাচ্চাদের নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ তুললো স্থানীয়রা। আর আজ এই অঙ্গনওয়ারী কেন্দ্র থেকে বাচ্চাদের দেওয়া হয় শুধু ভাত, সাথে আর কিছু নেই। এই ঘটনা জানাজানি হতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘক্ষন ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে আটক থাকেন ওই অঙ্গনওয়ারী কেন্দ্রের রাঁধুনি রূপা দত্ত, পরে ঘটনাস্থলে দিদিমণি মর্জিনা বিবি এলে উত্তেজিত জনতারা তার উপর চড়াও হয়।স্থানীয় এক শিশুর অভিভাবক মিঠু বাগদি জানান, “রান্না কোনদিনই স্বাস্থ্যকর থাকে না। কোনদিন সব্জিতে থাকে সবজির খোসা, কোন দিন ভাত একেবারে গলে যায়! মোটের উপর খাওয়া-দাওয়ার অযোগ্য এই সকল রান্না।”শুধু তাই নয় স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, “অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটির রান্নাঘর একেবারে অস্বাস্থ্যকর নোংরা আবর্জনার মধ্যে রয়েছে। রান্না করার জায়গার পাশেই রয়েছে গরু ছাগল বাঁধার জায়গা। খাওয়া-দাওয়া করানোর কোন জায়গা সবটাই নোংরাতে ভর্তি।”
অঙ্গনওয়াড়ি ওই কেন্দ্রে পড়াশোনার বিষয়েও বিস্তর অভিযোগ স্থানীয়দের। স্থানীয়দের বক্তব্য, “এখানে কোন দিন পড়াশোনা হয় না। দিদিমণি কেবল আসেন আর চলে যান। আর ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খাবার নিয়েই বাড়ি চলে যায়।”আজ সকালে স্থানীয় বাচ্চাদের পাতে শুধু ভাত দেওয়ার সময় এক অভিভাবক এসে বলেন, শুধু ভাত কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সানি ও অভিভাবকদের অভিযোগ, রাঁধুনি উত্তর দেয়, যা হয়েছে তাই নিতে হবে। এর থেকে বেশি কিছু নেই। আর এরপরই উত্তেজিত হয়ে ওঠে এলাকার বাসিন্দারা। দীর্ঘক্ষন ধরে আটকে রাখে রান্ধুনী রূপা দত্তকে। ঘটনাস্থলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দিদিমণি মর্জিনা বিবি পৌঁছালে তাকে মারধর করার অভিযোগ। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিম্নমানের রান্না নিয়ে রাঁধুনি রূপা দত্ত জানান, “আমাকে দিদিমণি যেমন রান্না করতে বলে গিয়েছেন আমি কেমন করেছি।” তবে এমন নিম্নমানের রান্না নিয়ে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের রাঁধুনি এবং দিদিমনিরও বিস্তর অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, “অফিস থেকে কোনরকম বিল পাওয়া যায়নি কয়েক মাস ধরে। এমনকি এখানে যে ভাড়া টুকু লাগে সেটুকু আমাদের দুজনকে দিতে হয়। বেতন পাইনি আমরা। আর এসব অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে অফিসকে জানানো সত্ত্বেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি।” তবে আজ শুধু ভাত রান্না করার কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিয়েছেন রাঁধুনি রূপা দত্ত।অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ প্রবীর বিশ্বাস ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুরো বিষয়টি দেখেন। এরপর তিনি জানান, “আমাদের একটি নির্দিষ্ট রেশন দেওয়া হয়, তার ভিত্তিতেই রান্না করার কথা কিন্তু ইনারা কেন এমন করছেন সেটা জানি না। ইনাদের অভিযোগ, বিল নাকি দেরিতে হয়েছে। কিন্তু তার জন্য তো সাধারন মানুষ ভুক্তভোগী হবেনা। আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করবো।”
এছাড়াও তিনি আরও জানান, “অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিষয়ে যে অভিযোগ রয়েছে তাও আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে মিউনিসিপালিটি এলাকার মধ্যে হওয়ায় আমাদের এর সুরাহা করতে বেশি সময় লাগছে।”
এদিকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নিয়ে একই অভিযোগ বীরভূমের মহঃবাজারের ভূতুরা গ্রামের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। সেখানেও বেশ কিছুক্ষণ তালাবন্ধ করে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের আটকে রাখে গ্রামবাসীরা। পরে ঠিক ঠাক খাবার দেওয়ার আশ্বাস এরপর তালাবন্ধ থেকে মুক্তি পায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা।