এবার আলিপুরদুয়ারেও লোকালয়ে দেখা মিললো ভাল্লুকের। জলপাইগুড়ির মেটেলি, নাগরাকাটার পর এবার আলিপুরদুয়ারেও লোকালয়ে ভাল্লুক বেড়িয়ে পড়ল। শুক্রবার সকালে আলিপুরদুয়ারের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল লাগোয়া মাঝের ডাবরি চাবাগানে ঢুকে পড়ে একটি ২-৩ বছর বয়সের ভাল্লুকের শাবক। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প কতৃপক্ষ জানিয়েছে ভাল্লুকটি একটি স্ত্রী ভাল্লুক।
তবে ভাল্লুকের হামলায় এদিন কেউ আহত বা নিহত হয় নি। এই ঘটনায় এদিন বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় ব্যাপক আতংক ছড়ায়। লোকালয়ে ভাল্লুক আসার খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশপাশের এলাকার লোকেরা ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে দেন। মাঝের ডাবরি চাবাগানে কাজে যোগ দিতে অস্বিকার করেন শ্রমিকরা। বাগান কতৃপক্ষ চা শ্রমিকদের বাগানের ১৩ নম্বর সেকশন থেকে সরিয়ে দূরে অন্যত্র পাতা তোলার কাজে লাগান।
জানা গিয়েছে এদিন সকাল আটটায় প্রথমে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে খবর আসে যে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের পশ্চিম বিভাগের চেকো বিটের জঙ্গলের কাছে একটি হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার প্রজাতির ভাল্লুক দেখা গেছে। এর কিছুক্ষন পরেই খবর আসে মাঝের ডাবরি চাবাগানের ১৩ নম্বর সেকশনে আলিপুরদুয়ার পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কাছেই একটি ভাল্লুক ঢুকে পরেছে। আতংকিত হয়ে চা শ্রমিকরা ১৩ নম্বর সেকশন ছেড়ে পালাতে শুরু করেন। ইতিমধ্যেই বনদফতরের ট্র্যাংকুলাইজেশন টিম ঘটনাস্থলে পৌছে যায়।
বন দফতরের চিকিতসক নিয়ে আরেকটি দল ঘটনাস্থলে পৌছায়। জানা যায় চাবাগানের ঝোপে লুকিয়ে রয়েছে ভাল্লুকটি। উচু জায়গা থেকে নজরদারি চালানোর জন্য বনদফতরের দুটো কুনকি হাতি নিয়ে বনকর্মীদের আরেকটি দল ঘটনাস্থলে পৌছায়। ইতিমধ্যেই ওই এলাকায় মানুষের ভীর বাড়তে থাকে। বেগতিক বুঝে জেলা প্রশাসনের কাছে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করার আবেদন জানায় বনদফতর।
আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক বিপ্লব সরকার ঘটনাস্থলে পৌছে চেকো, মাঝের ডাবরি চাবাগান ও পানিয়াল্গুড়ি গ্রামে ১৪৪ ধারা জারি করে। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে বনদফতর। এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। এমনকি এদিন ভাল্লুকের ছবি তুলতে ভাল্লুক লুকিয়ে থাকার ত্রিসীমানায় সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদেরও ঘেষতে দেওয়া হয় নি। অবশেষে হাতির পিঠে চরে উচু থেকে চাবাগানের ঝোপের ভেতর ভাল্লুকটি তাক করে ঘুম পাড়ানি গুলি করে দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিট নাগাদ ভাল্লুকটিকে কাবু করা হয়।
আর ও পড়ুন জীবনে অর্থের অভাব দূর করতে মেনে চলুন এই নীতি
চাবাগানের ঝোপের ভেতর কাবু হওয়া ভাল্লুকটিকে গাড়িতে তুলতেও এদিন ব্যাপক বেগ পান বনকর্মীরা। চাবাগানের ভেতরে হওয়ায় ওই এলাকায় কাছে কোন যানবাহন যেতে পারছিল না। হলুদ মোটা প্লাস্টিকের জালে জড়িয়ে ভাল্লুকটিকে হাতে তুলে প্রায় ৩০০ মিটার বয়ে এনে লোহার খাচায় ঢোকানো হয় কাবু হওয়া ভাল্লুকটিকে। লোহার খাচার ভেতরেই ঘুমে কাবু হওয়া ভাল্লুকের শরীরে জল ছিটিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন বনদফতরের পশু চিকিতসক।
আর ভাল্লুকের শরীরে জল ছিটিয়ে দিতেই হুশ ফিরে যায় ভাল্লুকটির। ততক্ষনে লোহার খাচার বন্দী সে। এর পর ভুটান পাহাড় লাগোয়া ভুটান ঘাটের কাছে ভাল্লুকটিকে বিকেল তিনটে নাগাদ জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। রীতিমতো গাড়িতে বসানো লোহার খাচার দরজা খুলতেও খাচা থেকে দৌড়ে পালায় ভাল্লুকটি । হাফ ছেড়ে বাচেন বন দফতরের কর্মীরা। একেবারে যুদ্ধ জয়ের আনন্দ নিয়ে ফিরে আসেন বনদফতরের কর্মী ও আধিকারিকরা। এই ঘটনায় কোন বন্যপ্রান ও মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয় নি।