কেদারনাথের আদলে মহাদেবের মন্দির গড়ার ভাবনা- আলোময় ঘরুই। বহু প্রাচীন মন্দির মা মনসার। ডিপিএল কলোনি গড়ে তোলার আগে ছিল ঘন জঙ্গল। সেখানেই বট, অশক্ত, বেল গাছ একইসঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছে লতায়-পাতায়। তার পাশেই বহু প্রাচীন এই মা মনসার মন্দির।
সেই সময়ে জঙ্গলে ঘেরা এই মন্দিরে আস্থা ছিল স্থানীয় বসবাসকারীদের। পরবর্তীতে ডিপিএল কারখানা স্থাপিত হয়। প্রয়োজন পরে কারখানার শ্রমিকদের জন্য বাসস্থানের। তৈরি হয় ডিপিএল টাউনশিপ। এরপরই রাজ্যের শাসনকাল চলতে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। দেবী মা মনসা, বাবা ভোলেনাথকে নিজের পাশে আনার চেষ্টা চালিয়ে যান।
দেবীর চেষ্টা বিফল করার সাধ্যি কার! বাবা ভোলেনাথ মা মনসার পাশেই নিজের স্থান গ্রহণ করেন। শুরু হয় পূজা অর্চনা। রাজ্যে শাসন ব্যাবস্থায় বদল হয় শাসকের। ক্ষমতায় আসে ‘মা মাটি মানুষের’ সরকার। বদল হয় ডিপিএল-এর শ্রমিক সংগঠনের নেতা। নেতৃত্বে আসেন তৃনমূল কংগ্রেসের আলোময় ঘরুই। সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলা তার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে বাধ সাধে মাঝে। শাসকদল তৃনমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর, অনেক নেতা হটাৎ করে গজিয়ে ওঠে রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মত ডিপিএল কারখানাতেও।
মাঝ পথে ২০১৮ থেকে ২০২২-এর এপ্রিল মাস পর্যন্ত নেতৃত্ব অন্যের কাছে যায়। ২০২২-এর মে মাসে ফের নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আলোময় ঘরুই। আলোময় ঘরুই জানান, ‘দলের নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকল তৃনমূল কর্মীদের বলেছেন, মানুষের সেবার কাজে যতটা সম্ভব নিজেকে নিযুক্ত করতে। এমন কাজের দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে যাতে বহুসংখ্যক মানুষ উপকৃত হন’। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘দিদির সেই কথা আমার মনে দাগ কেটেছিল সেইদিনই।
তাই, ২০১৩ সাল থেকে মা মনসার মন্দির সংস্কার এবং নতুন করে ‘বাবা কেদারনাথ ধাম’ মন্দিরের আদলে ডিপিএল বয়েজ স্কুলের পাশেই বর্তমানে আংশিক জঙ্গল এলাকায় মা মনসা মন্দিরের পাশে, মহাদেবের মন্দির গড়ে তোলার কাজ শুরু করি মানুষের জন্য। শুরু হয় ‘হর হর হর মাহাদেব সেবা শিবিরের’। ২০১৮ সাল পর্যন্ত কাজ চলে মন্দিরের। মাঝপথে নেতৃত্ব চলে যাওয়ার পর সেই সময়কালে মন্দির তৈরি কাজের গতি শ্লথ হয়। আবারও মন্দির গড়ার কাজ শুরু করা হবে ২০২৩ সাল থেকে’।
আলোময় ঘরুই বলেন, ‘বাবা কেদারনাথ ধাম’ মন্দিরের আদলে মন্দির তৈরির কাজের জন্য শ্বেত পাথর আনা হয়েছে রাজস্থানের জয়পুর থেকে। শুধু পাথর নয় কারিগর ও ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে আসা হয়েছে রাজস্থান থেকে। মন্দির চত্বরে গাঁথা হয়েছে গঙ্গা মাটির ইট। যা আনা হয়েছে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর গঙ্গা পার থেকে। শিবলিং এবং আনুশাঙ্গিক সমস্ত মূর্তি আনা হয়েছে বেনারসের বিশ্বনাথ ধাম থেকে। সম্পূর্ণ মন্দির তৈরিসহ মন্দির সংলগ্ন প্রায় ৮ বিঘা জমির ওপর বাগান, পূজারীদের থাকার বাসস্থান, ধর্মশালা তৈরি করতে খরচ পরবে আনুমানিক ১৫ কোটি টাকা।
যা বিভিন্ন ভক্তদের অনুদানে করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, মন্দির সহ চারিপাশের এলাকার উন্নয়নের কাজ সম্পূর্ণ হলে উপকৃত হবেন এলাকার বাসিন্দারা। আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। পাশেই দামোদর নদী থাকায় ‘তীর্থ ক্ষেত্র’ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল’। এর পাশাপাশি আলোময় ঘরুই বলেন, ‘১৯৮৭ সাল থেকে দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ডিপিএল-র কর্মী হিসেবে কাজ করার সুবাদে হলপ করে বলতে পারি, ডিপিএল নিয়ে বর্তমানে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ সত্য নয়। ডিপিএল নিজের খরচ নিজেই বহন করতে সক্ষম।
আরও পড়ুন – খেলার মাধ্যমে প্রয়াত খেলোয়াড়ের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি
বর্তমানে প্রয়োজন কয়লার পর্যাপ্ত যোগানের। অপর্যাপ্ত কয়লার যোগানের ফলে ডিপিএল-এর চালু দুটি ইউনিট ৭ নম্বর ও ৮ নম্বরের মধ্যে যে কোন একটি ইউনিট মাঝেমধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দুটি ইউনিট ঠিকমত চালু থাকলে, ডিপিএল নিজের খরচ নিজেই বহন করতে সক্ষম। তাই তিনি আবেদন করেন, ‘সকলকে ইতিবাচক দিকগুলি বিবেচনা করে ‘মা মাটি মানুষ’ সরকারের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে এগিয়ে আসতে হবে’।