স্বাধীনতা সংগ্ৰামী প্রতিষ্ঠিত শক্তি আবাহনের শতবর্ষে বাঙালপুর বয়েজ ক্লাব । প্রত্যেক পূজা আয়োজনে সূত্রপাতের ক্ষেত্রে কিছু কার্যকারন তথা পটভূমি থাকে।এই পূজা সৃষ্টির পটভূমি সম্পর্কে জানা যায়, কোন ক্লাব, সংগঠনের দ্বারা এই পূজার সূত্রপাত হয় নি।এতদাঞ্জলের কিছু উৎসাহী ব্যক্তিদের উদ্যোগেই এই পূজার সূত্রপাত হয়।গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার বাঙালপুরের পাড়ায় পাড়ায় চলত কুস্তি,লাঠিখেলার মতো শরীর চর্চার আখড়া।বাঙালপুর ঘাঁটি পাড়ার আখড়ায় নিয়মিত সদস্য ছিলেন জীবন ঘাঁটি, জীবন বসু,মম্মথ ঘোষ,প্রভাস ঘোষ,কেষ্ট বসু,প্রভাত ঘোষ,সাতকড়ি ঘোষ,সনৎ বসু (সোনু) ঘোষ, ভোলানাথ ঘোষ প্রমূখ ব্যক্তিগণ।শরীর চর্চার পাশাপাশি তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল এলাকায় একটি কালীপূজা সংগঠিত করার।শরীর চর্চার সাথে সাথে নিজেদের মনোবল বৃদ্ধিই ছিল এর উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন – সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে একের পর এক শ্যামা পূজার মন্ডপ পরিদর্শনে ইটাহারের বিধায়ক
১৯২১ সালে যখন কালীপূজার সূচনাপর্ব চলছে, সারাদেশ ব্যাপী তখন গান্ধিজীর ডাকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছে।বাঙালপুর গ্ৰামের বিভূতি ঘোষ গান্ধিজীর এই আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে এতদাঞ্জলের মানুষদের সংগঠিত করার কাজ শুরু করলেন। তাঁর উপর দায়িত্ব ছিল ছাত্র সংগঠন তৈরি করে গান্ধিজীর সত্যাগ্ৰহী আদর্শ তুলে ধরা। সেই উদ্দেশ্যে তিনি গ্ৰামের ছাত্র – যুবদের নিয়ে বাঙালপুরে প্রশিক্ষন শিবির শুরু করলেন। সেই সঙ্গে বাগনানের বিভিন্ন অংশের সত্যাগ্ৰহীদের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব ও ছিল তার উপর।সত্যাগ্ৰহীদের অনুপ্রাণিত করার জন্য তিনি বিভিন্ন যাত্রাপালা রচনা করেগ্ৰামে গ্ৰামে মঞ্চস্থ করেন।
সত্যাগ্ৰহীরা যেমন শরীর চর্চায় মগ্ন থাকতেন, সেই সঙ্গে চলত মনোবল বৃদ্ধির জন্য মাতৃ আরাধনা। আসলে সেই সময় ব্রিটিশ শাসিত বাংলা তথা ভারতে কালী উপাসনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।পরাধীন জাতির অন্তরের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ কালীর দৃপ্ত ব্যক্তিত্বকে অনুসরণ করতে চাইতো। স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ হিসাবে শক্তি আরাধনা তথা কালী উপাসনার প্রচলন সেই কারণে? তাঁদের কাছে শক্তি আরাধনার তাৎপর্যই হল দেশমাতৃকার আরাধনা।দেশ মাতৃকার প্রতি ভক্তি নিবেদনের উদ্দেশ্যেই বিভূতি ঘোষ ও তাঁর অনুগামীরা এই পূজায় যোগদান করলেন। স্বাধীনতা সংগ্ৰামী বিভূতি ঘোষ ও তাঁর সহযোগীদের এই পূজায় অংশগ্রহণ শতাব্দী প্রাচীন এই পূজার ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।
দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ঘাঁটি পাড়ায় এই পূজা চলার পর পূজা পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। স্থানাভাবজনিত সমস্যার কারণেই পূজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সেই সময় বাঙালপুর বয়েজ ক্লাব এর সদস্য – সদস্যরা এই পূজা পরিচালনার সম্পুর্ন দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং পূজাটি বয়েজ ক্লাব সংলগ্ন মাঠে স্থানান্তরিত হয়। সেই থেকেই এই পূজা বাঙালপুর বয়েজ ক্লাব এর পরিচালনায় হয়ে আসছে,যা আজ শতবর্ষের আলোকে আলোকিত।
বিগত দশ বছর যাবৎ সাবেকিয়ানার সাথে সাথে মন্ডপ সজ্জায় সংযোজিত হয়েছে নানাবিধ থিম।এই থিম ভিত্তিক পূজা আয়োজনের ক্ষেত্রে তপন ঘোষ এর উদ্দোগের কথা অবশ্যই বলতে হয়। তার হাত ধরেই এই থিম ভিত্তিক মন্ডপ সজ্জার পরিকল্পনা ও বাস্তবরুপায়ন সম্ভব হয়েছে।
থিম ভিত্তিক মন্ডপ সজ্জার ক্ষেত্রে জমিদার বাড়ি, ঐতিহাসিক স্মৃতি সৌধ জিগুরাট,রবীন্দ্রসদন,ত্রিনয়নী, চিড়িয়াখানা,গান্ধিজীর স্মৃতি ধন্য সবরমতি আশ্রম,গ্ৰাম বাংলার চন্ডীমন্ডপ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। থিম ভিত্তিক পূজা আয়োজনে এই পূজার ব্যপ্তিকে আর ও সুদূর প্রসারিত করেছে।বিগত বছরে মন্ডপ সজ্জার ক্ষেত্রে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল ২০১৯ সালে ৯৬ তম বর্ষে সবরমতি আশ্রমের আদলে মণ্ডপ সজ্জা। এই বছর টি ছিল গান্ধিজীর জম্ম সার্ধশত জম্ম বর্ষ ।
এ বছরে বাঙালপুর বয়েজ ক্লাব এর মন্ডপের বিষয় ভাবনা ‘ মা আসছে মাটির টানে ‘। আসলে মাটির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক। এই মানুষ গুলির দৈনন্দিন জীবন চর্চা, তাদের সুখ – দুঃখ এবং সামান্য মাটিকে নিয়ে তাদের কর্মকৌশলে অসামান্য শিল্প কর্মের রূপ দেওয়ার মধ্যে তাদের সৃষ্টির সার্থকতা।
পরিবেশ বান্ধব জিনিস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মন্ডপ। অসামান্য ভাবনায় অনবদ্য শৈপ্লিক কার্যাবলীর মধ্য দিয়ে বাংলার মাটির শিল্পকে ও শৈপ্লিক কার্যাবলীর মধ্য দিয়ে বাংলার মাটির শিল্পকে ও শিল্পীদের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছেন বাঙালপুর বয়েজ ক্লাব।মন্ডপ জুড়ে মাটির ছোঁয়া।মন্ডপের এক প্রান্তে তুলে ধরা হয়েছে কুমোর পাড়ার হাঁড়ি – কলসি তৈরির দৈনন্দিন চিত্রকে।আবার মন্ডপের অন্য প্রান্তে তুলে ধরা হয়েছে ঠাকুর গড়ার ভাবনাকে।মন্ডপ জুড়ে মাটির অভাবনীয় শিল্…