রাজ্য ভাগ নিয়ে শুভেন্দুকে সমর্থন দিলীপের, কী বার্তা দিলেন বিজেপির সহ-সভাপতি? বিধানসভার অধিবেশনে পৃথক রাজ্যের দাবিতে গণভোট চেয়েছিলেন বিজেপি বিধায়ক। তার উল্টো সুর শোনা যায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গলায়। তাঁর পাশে দাঁড়ালেন দিলীপ ঘোষ।বিধানসভায় রাজ্য ভাগ বিতর্ক এক সূত্রে বেঁধে দিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। সোমবার বিধানসভায় গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে গণভোট চেয়ে বসেন কার্শিয়ীঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপদ শর্মা। কিন্তু সেই বক্তব্যের উল্টো সুর শোনা যায় শুভেন্দুর গলায়। মঙ্গলবার সেই একই বক্তব্যের অনুরণন ঘটেছে দিলীপ-কণ্ঠেও। তবে রাজ্যভাগের প্রসঙ্গ তুলতে উত্তরবঙ্গের মানুষ কেন ‘বাধ্য’ হচ্ছেন, কৌশলে সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের মুখে বাংলা ভাগের দাবি নতুন নয়। এর আগে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সরব হয়েছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ থেকে নিশীথ প্রামাণিকেরা। আবার একই দলে শোনা গিয়েছে ঐক্যবদ্ধ বঙ্গের বার্তাও। সোমবার যেমন ঘটেছে বিধানসভায়। যাকে ‘রাজনৈতিক ভণ্ডামি’ বলেই মনে করছে তৃণমূল। সোমবার রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় যেমন বলেন, ‘‘বিজেপি দ্বিধাবিভক্ত। এক অংশ বাংলার বিভাজন চায়নি। আবার অন্য অংশ বাংলা বিভাগের কথা বলেছে। ভিতরেও বলেছে, বাইরেও বলেছে। এটা ওদের রাজনৈতিক গেম।’’
চলতি অধিবেশনে বিধানসভায় ‘বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব’ আনা হবে বলে আগেই স্থির করেছিল শাসক তৃণমূল। সেই প্রস্তাব পাশ হয়েছে সোমবার। কিন্তু অধিবেশনে পৃথক রাজ্যের দাবিতে গণভোট চেয়ে ‘চমক’ দেন কার্শিয়াঙের বিজেপি বিধায়ক। যদিও দলীয় বিধায়কের ওই বক্তব্যের সম্পূর্ণ উল্টো সুর শোনা যায় শুভেন্দুর গলায়। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘আমরা বাংলা ভাগের পক্ষে নই। এক পশ্চিমবঙ্গ, শ্রেষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গ। এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত। কিন্তু উত্তরবঙ্গের অনুন্নয়ন নিয়ে সমস্যা নিরসন করতে হবে।’’ খতিয়ান তুলে ধরে পাহাড়ে উন্নয়ন পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ করেন শুভেন্দু। মঙ্গলবার তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে নিউ জলপাইগুড়িতে দিলীপ বলেন, ‘‘বিজেপির নীতি স্পষ্ট। একটাই বাংলা। তাকে আমরা সোনার বাংলা বানাব।’’ একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তিতে দিলীপের আবার বক্তব্য, ‘‘বিজেপি কোনও ধোঁয়াশায় থাকে না। খোলা আকাশের নীচে থাকে। পরিষ্কার নীতি আছে।’’
তবে বিধানসভায় ‘বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব’ পাশ নিয়ে দিলীপের বক্তব্য, ‘‘এ সব নাটক চলছে। বিধানসভায় কোনও কাজ নেই। উন্নয়ন নেই, টাকা নেই। তাই সময় কাটাচ্ছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।’’ কংগ্রেস, সিপিএম এবং তৃণমূলের জমানায় পাহাড়ের মানুষ ‘বঞ্চিত’ বলেও অভিযোগ করেছেন দিলীপ। পাশাপাশিই কৌশলী মন্তব্য করেছেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের মানুষ প্রশ্ন করুন, তাঁরা কেন এই ধরনের কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন।’’গত কয়েক বছরে পাহাড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটেছে। পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণ ঘন ঘন বদল নিয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছেন দিলীপ, ‘‘পাহাড়ের রাজনীতি হচ্ছে সুবিধার রাজনীতি। যে দিকে সুবিধা, যে দিকে ক্ষমতা, লোকে সে দিকে যায়। সেই জন্য ওখানকার ছোট ছোট পার্টি, ছোট ছোট নেতা এমন করতেই থাকেন। মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুশকিল হচ্ছে, কখন কার সঙ্গে থাকবেন ঠিক করতে পারেন না। যার উপরে ভরসা করলেন, সে-ই ধোঁকা দিয়ে দিল।’’ আগামী দিনে পাহাড়ে আরও নেতার উত্থান হবে বলেও মনে করেন দিলীপ।
আরও পড়ুন – উদ্ধবপন্থী বিধায়কের ছেলের বিরুদ্ধে পুলিশে মামলা দায়ের করেছেন সোনু নিগাম । কী…
বিজেপির অন্দরের সমীকরণে শুভেন্দু-দিলীপ ভিন্ন মেরুতে বলেই দলের নেতা-কর্মীদের বড় অংশ জানেন। বস্তুত, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই দু’জনের সম্পর্ক ‘মধুর’। সম্প্রতি খড়্গপুরের বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূলে যোগদানের জল্পনা প্রসঙ্গেও শুভেন্দু এবং দিলীপের পরস্পরবিরোধী ভূমিকা সারা রাজ্যের নজরে এসেছিল। দিলীপ যখন হিরণের সম্ভাব্য বিজেপি-ত্যাগকে গুরুত্ব দিতে চাননি, তখন শুভেন্দু নিজে হিরণের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শেষ পর্যন্ত হিরণ বিজেপি ছাড়েননি। এখনও পর্যন্ত। কিন্তু বাংলা ভাগের প্রশ্নে দিলীপ শুভেন্দুর সুরেই সুর মিলিয়েছেন। যা থেকে স্পষ্ট, এই বিষয়টিতে দুই নেতা একমত। যা ‘বিরল’ বলে জানাচ্ছেন রাজ্য বিজেপির একাংশ।