অনাথ আশ্রম থেকে বিশ্বের অন্যতম ধনী হওয়ার গল্প! ১৯৪২ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবহে বিধ্বস্ত ইটালির মিলান শহর। নিজের চতুর্থ সন্তানের সঙ্গে রাস্তায় রাস্তায় দিন কাটাচ্ছিলেন বিধবা গ্রাজিয়া রোকো। চতুর্থ সন্তানের জন্মের পাঁচ মাস আগেই মারা গেছেন স্বামী। ছেলেকে খাওয়ানোর মতো ন্যূনতম অর্থটুকুও তার হাতে নেই। গ্রাজিয়া কারখানায় কাজ করে যা আয় করতেন, তাতে দু’বেলা দু’মুঠো খাবারও ঠিক করে জুটত না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ছেলেকে বাঁচাতে রেখে আসবেন অনাথ আশ্রমে। এর পরই সাত বছর বয়সি লিওনার্দো দেল ভেচিওকে নিয়ে শহরের ‘মার্টিনিট ইনস্টিটিউট’ অনাথ আশ্রমে পৌঁছন গ্রাজিয়া।
ছেলেকে আশ্রয় দেয়ার আবেদন জানান তিনি। গ্রাজিয়া একটি চিঠিও তুলে দেন অনাথ আশ্রম কর্তৃপক্ষের হাতে। তাতে লেখা, ‘আমার ছেলের যত্ন নেয়ার মতো কেউ নেই।’ দীর্ঘ দিন এই চিঠি অনাথ আশ্রমে লিওনার্দোর ফাইলবন্দি অবস্থায় ছিল। অনাথ আশ্রমে যাওয়ার পরের সাত বছর সেখানেই কাটান লিওনার্দো। রোজগারের আশায় মাত্র ১৪ বছর বয়সে অনাথ আশ্রম ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন লিওনার্দো। লক্ষ্য ছিল, দক্ষ কারিগর হয়ে ওঠা। সেই সময় আবার মায়ের সঙ্গে থাকা শুরু করেন তিনি।
রোজগারের তাগিদে একটি লোহার দোকানে কাজ শুরু করেন লিওনার্দো। কিছু বাড়তি রোজগারের জন্য তিনি সহকর্মীদের জন্য দুপুরের খাবার এনে দিতেন। লিওনার্দো এত দরিদ্র ছিলেন যে, দোকান থেকে কিছু কিনে খাওয়ার সামর্থ্যও ছিল না। তাই প্রতি দিন মায়ের রান্না করা বাঁধাকপির স্যুপ খেয়ে কাজ করতে আসতেন তিনি। তবে যে লিওনার্দোর মৃত্যু এড়াতে অনাথ আশ্রমের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল, সেই লিওনার্দো এখন ইটালির দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি।
বর্তমানে লিওনার্দো, ফরাসি-ইটালীয় চশমা প্রস্তুতকারী সংস্থা এসিলর লাক্সোটিকা এসএ-র প্রধান। লাক্সোটিকা, রে-ব্যান এবং ওকলে-র মতো চশমা প্রস্তুতকারী সংস্থার চশমারও ফ্রেম তৈরি করে। চোখের কৃত্রিম লেন্সও তৈরি করে এই সংস্থা। এ ছাড়াও বিবিধ বিলাসবহুল সামগ্রী এবং চিকিৎসা বিষয়ক প্রযুক্তির সংস্থাতেও লিওনার্দো বিনিয়োগ করেছেন। এক দিন খেতে না পাওয়া লিওনার্দো এখন হাজারও পরিবারের অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করেন। সারা পৃথিবীতে লাক্সোটিকার মোট ৮ হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে তার সংস্থার। সদ্য ৮৭ বছর বয়স পা দেয়া লিওনার্দোর চশমা সংস্থার মূল্য ৬৬০০ কোটি ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা)।
এই বয়সেও তার নতুন লক্ষ্য, এই সংস্থার মূল্য বাড়িয়ে ১০ হাজার কোটি ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় ৮ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি) করা। এত ধনী হওয়া সত্ত্বেও লিওনার্দো দীর্ঘ দিন আলোকবৃত্তের বাইরেই থেকেছেন। ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবন নিয়ে কথা বলতেও তিনি স্বচ্ছন্দ নন। সংস্থার উন্নতিই তার হয়ে কথা বলেও দাবি লিওনার্দোর। লিওনার্দোর দাবি, তিনি সব সময়ই যা করেন, সেরা হওয়ার চেষ্টা করেন। লিওনার্দো জানান, এক সময় দিনে ২০ ঘণ্টা করেও কাজ করেছেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম করতে গিয়ে কম বয়সে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বাম হাতের তর্জনীও হারিয়েছেন। তবে বর্তমানে কোটি কোটি টাকার সাম্রাজ্যের মালিক হওয়া সত্ত্বেও অনাথ আশ্রমে দেয়া মায়ের চিঠি এখনও সযত্নে রেখে দিয়েছেন লিওনার্দো।