চার বছরের ছেলের জবানবন্দিতে মায়ের মৃত্যুর কিনারা করল পুলিশ। নিজের চোখের সামনে মাকে খুন হতে দেখেছে পিসি আর পিসেমশাই এর হাতে। মাকে মেরে ঝুলিয়ে দিচ্ছে ওরা। চার বছরের শিশু অস্ফুট স্বরে সেই দিনের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তদন্তকারীদের কাছে বলতেই কিনারা হল বধূর মৃত্যুরহস্যের।
বুধবার নদিয়ার মুরুটিয়া থানার টেপিদহ এলাকার চৌধুরী পাড়ায় ওই বধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতের নাম খাদিজা বিবি (২০)। খাদিজার বাপের বাড়ির পরিবারের তরফ থেকে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে বৃহস্পতিবারই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতেরা খাদিজার শাশুড়ি আশানুর বিবি, ননদ রেক্সোনা বিবি ও ননদের স্বামী রাকিবুল শেখ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির উত্তর ঘোষপাড়ার বাসিন্দা খাদিজার ২০১৭ সালে মুরুটিয়ার মফিকুল মোল্লার সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে কেরলে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন মফিকুল। সম্প্রতি বাড়ি ফিরলেও, রবিবার আবার কেরলে কর্মস্থলে ফিরে যান তিনি। স্বামী ফিরে যাওয়ার পর রাকিবুলকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন খাদিজা। সেই মতোই স্ত্রী রেক্সোনাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন রাকিবুল। সেই সময় বাড়িতে খাদিজার চার বছরের ছেলে ছাড়া আর কেউ ছিল না। খাদিজার বাবা বজলুল শেখের অভিযোগ যে শাশুড়ি, ননদ ও তাঁর স্বামী রাকিবুল একসঙ্গে তাঁর মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে।
এই অভিযোগ নিয়ে বুধবার রাতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বজলুল। তার ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে খবর, খাদিজার চার বছরের ছেলে তদন্তকারীদের জানিয়েছে, সে যখন বাইরে খেলা করছিল, সেই সময় তার মাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে তার পিসি ও পিসেমশাই। তা দেখে চিৎকার করায় তাকেও মারধর করে রাকিবুল ও রেক্সোনা।খাদিজার ছেলের এই বয়ানই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য প্রমাণ বলে মনে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন – সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে একের পর এক শ্যামা পূজার মন্ডপ পরিদর্শনে ইটাহারের বিধায়ক
স্থানীয় সূত্র মারফত পুলিশ জানতে পারে যে খাদিজার সঙ্গে রাকিবুলের এক সময় প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাঁরা এক বার পালিয়েও গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য তাঁদের গ্রামে ফিরিয়ে এনে সালিশি সভা ডেকে তখনকার মতো সংসার বাঁচানো হয়। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, খাদিজা ও স্বামীর সম্পর্কের কথা জানতে পেরে রেক্সোনাই খুনের পরিকল্পনা করে।
স্ত্রীর কথাতেই খুন করে রাকিবুল। এই ঘটনা প্রসঙ্গে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পাল বলেন, ‘‘পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলার রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তিন জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’ ধৃত তিনজনকে তেহট্ট মহকুমা আদালতে পেশ করা হলে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
