পড়াশোনা সাফল্যের জন্য এবার পুরস্কার পেতে চলেছে অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূম জেলা। জেলার পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করা সংক্রান্ত প্রকল্প ‘আনন্দ পাঠ’ এবার স্কচ অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই বীরভূম জেলা প্রশাসনকে ই-মেইল করে জানিয়েছে স্কচ অ্যাওয়ার্ড-এর আয়োজকেরা। তেমনটাই খবর নবান্ন সূত্রের।
আরও পড়ুন: সুর বদলে মোদীর সঙ্গে মৈত্রী চাইলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী
পথ দেখাচ্ছে বীরভূম জেলা। এবার মিলল স্বীকৃতিও। বীরভূমের পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে, যে সকল পরিবারের শিশুদের গৃহশিক্ষক দেওয়া সম্ভব নয় এবং করোনা উত্তর সময়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষাগত যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তা দূর করতে বীরভূম জেলা প্রশাসনের তরফে একটি মানবিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
সূত্রের খবর, বীরভূম জেলার অপেক্ষাকৃত সামাজিক, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলিকে চিহ্নিত শুরু হয়েছিল এই আনন্দ পাঠের প্রয়াস। এখানে প্রত্যেক পিছিয়ে পড়া পরিবারের প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী, যাঁরা লেখাপড়ায় কোনও সহায়তা পায় না, সেইসব শিশুদের নিয়মিত লেখাপড়ার অভ্যাস তৈরি করানোর চেষ্টা করানো এই প্রকল্পে। বিদ্যালয়ের পাঠক্রম নিয়ে, বিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে সেইসব দেবশিশুদের মানসিক শারীরিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যেই গৃহীত হয়েছিল ‘আনন্দ পাঠ’ প্রকল্প।
জেলা প্রশাসনের দাবি, এই আনন্দপাঠ কোনও সমান্তরাল শিক্ষা ব্যবস্থা নয়। বরং, শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার একান্ত সহায়ক প্রচেষ্টা। মূলত, এই আনন্দ পাঠ প্রকল্পের একাধিক উদ্দেশ্য রয়েছে:
১) পিছিয়ে পড়া গ্রাম বা পাড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে মুক্ত প্রকৃতিতে খেলতে খেলতে, ছড়া বলতে বলতে, পাখির ডাক শুনতে শুনতে, প্রকৃতিকে চিনতে চিনতে বন্ধুত্বের মাধ্যমে লেখাপড়ার একটি অভ্যাস তৈরি করা।
২)লেখাপড়া সম্পর্কে ভীতি ও উদাসীনতা দূর করে, একটি আনন্দদায়ক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা যেখানে শিশুরা অন্তরের আহ্বানে ছুটে আসবে।
৩)লেখাপড়া ছাড়া অন্যান্য নান্দনিক বিষয়ের উপর যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করা।
৪)শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ এবং বাড়িতে শিক্ষার ধারাবাহিকতা সুনিশ্চিত করা।
পিছিয়ে পড়া গ্রাম পাড়া তে বসছে এই আনন্দ পাঠের আসর। সকাল ৭- ৯ টা এবং বিকেল ৪- ৬টা পর্যন্ত পাঠদান চলছে। আনন্দপাঠ দান করছেন ওই পাড়ার একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিউনিটি শিক্ষক।
এছাড়া, নান্দনিক পাঠদানের জন্য থাকছেন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক। আনন্দ পাঠের মাধ্যমে লেখাপড়ার সর্বাঙ্গীণ বিকাশের সাথে সাথে শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার অন্বেষণ ও তার বিকাশ ঘটানো অন্যতম উদ্দেশ্য। এছাড়া, বিশেষভাবে সক্ষম শিশুরা যাতে শিক্ষার মূলধারাই সম্পৃক্ত হতে পারে তার জন্যও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিশুরা যাতে সব ধরনের সরকারি সুবিধা পাই তা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে আনন্দ পাঠের মাধ্যমে।
লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রকৃতি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চেতনার জাগরণ তৈরি করা, শিল্প সংস্কৃতিতে প্রতিভা সম্পন্ন শিশুদের সুযোগ করে দেওয়া এর উদ্দেশ্য। আনন্দপাঠে শ্রেণি ভিত্তিক নয়, বৌদ্ধিক ও মানসিক স্তরের উপর ভিত্তি করেই ক্লাস নেওয়া হয়। বেস লাইন সার্ভের মাধ্যমে কোন শিশু কোন স্তরে আছে, তা দেখে তার উপর ভিত্তি করে তাকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়া হয়।
এটি বিদ্যালয় শিক্ষার কোনও বিকল্প মাধ্যম নয়, বরং বিদ্যালয় শিক্ষার পরিপূরক একটি ব্যবস্থা। এর ফলে স্কুলে অনুপস্থিতির সংখ্যা কমেছে যেমন তেমনি বেড়েছে শিশুদের সক্রিয়তা। নবান্ন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই জেলার এই প্রকল্প শীঘ্রই দিল্লিতে পুরস্কৃত হতে চলেছে।