মোহনবাগানের সংবর্ধনা মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে মাইক কাড়তে গেলেন টুটু বসু

মোহনবাগানের সংবর্ধনা মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে মাইক কাড়তে গেলেন টুটু বসু ,আগে থেকেই ঠিক ছিল, সোমবার মোহনবাগান তাঁবুতে মুখ্যমন্ত্রী আসবেন বেলা ১২টায়। সবুজ-মেরুন সভাপতি সকাল ১১টা থেকেই মঞ্চে উঠে পড়েন! তার পরেও তিনি যা করেছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে মোহন-বিতর্ক। এমনিতেই তাঁর মুখের আগল খুব একটা নেই। দল, মত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং মঞ্চ নির্বিশেষে তিনি অনর্গল। বহু বছর আগে একই মঞ্চে এক হাতে অমিতাভ বচ্চনের হাত খামচে ধরে অন্য হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘কচি করে কিছু দিয়ে যাও গুরু!’’ অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ‘বাংলার জামাই’ খানিক অপ্রতিভ হয়েছিলেন। তবে ‘কচি করে’ কিছু দিতে চাননি। অকুস্থলে হাজির টুটুবাবুর কিছু হিতৈষী বিড়ম্বিত হয়েছিলেন। কিছু হিতৈষী জনান্তিকে বলেছিলেন, ‘‘আইন করে টুটু’দার কথা বলা বন্ধ করে দেওয়া উচিত!’’ কিন্তু তিনি, মোহনবাগানের সভাপতি এবং রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ টুটু বসু আর কবে ওসবের তোয়াক্কা করলেন!

 

 

 

 

 

মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের রেওয়াজ মেনে মঞ্চে সকলের জন্য নাম লেখা নির্দিষ্ট আসন ছিল। টুটু দ্রুত মঞ্চে উঠে একটি চেয়ারে বসে পড়েন। মোহনবাগানের ফুটবল সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে (বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি ঘটনাচক্রে মুখ্যমন্ত্রী ভাই) প্রথমে দেখা যায় টুটুর পাশের চেয়ারে বসে কিছু একটা বোঝাচ্ছেন। তবে তাতে কাজ হয়নি। এরপর বাবুন এবং মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত কিছু চেয়ার নতুন ভাবে এদিক-ওদিক করতে থাকেন।

 

 

 

বস্তুত, বক্তার তালিকাতেও টুটুর নাম ছিল না। কিন্তু তিনি কার্যত মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নিয়ে নাতিদীর্ঘ একটি বক্তৃতা পেশ করেন। মাইক হাতে নিয়েই টুটু প্রশংসা করতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই বাবুনের। পরিবারের সদস্যের বেলাগাম প্রশংসা শুনে দৃশ্যতই মমতা খানিক বিরক্ত হন। টুটু অবশ্য সেসব দিকে নজর না দিয়ে বলতে থাকেন, ‘‘আমি একটা সিক্রেট কথা বলব? দিদির একটা ভাই আছে। স্বপন। ওর নাম বাবুন। আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে দিদি আমায় ডেকে বললেন, টুটু’দা, আমি চাই না আমার এই ভাইটা রাজনীতি করুক। একে আপনি মোহনবাগানে নিয়ে যান। এ মাঠের ছেলে।’’ টুটু যখন এই বক্তব্য পেশ করছেন, মুখ্যমন্ত্রী চোখেমুখে তখন স্পষ্টই বিরক্তি। কিন্তু টুটু বলতে থাকেন

 

 

 

 

 

মুখ্যমন্ত্রী যখন মাইক্রোফোন-হাতে ভাষণ দিচ্ছেন, তখন টুটু আবার হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে মমতার কাছে চলে যান। মুখ্যমন্ত্রী ‘নমস্কার’ শব্দটি বলামাত্রই টুটু মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে মাইকটি কেড়ে নিতে যান। সঙ্গে আব্দার জোড়েন, ‘‘একটা গান হবে না? একটা গান, একটা গান।’’

 

 

 

বিড়ম্বিত মমতা বলেন, ‘‘আরে না-না-না-না।’’ অবস্থা বুঝে চেয়ার ছেড়ে উঠে আসেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ। তিনি প্রায় জড়িয়ে ধরে টুটুকে বিরত রাখেন। তখনকার মতো কিছুটা শান্তও করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলতে শুরু করেন। তাঁর বক্তৃতার সময় অবশ্য টুটু শান্তই ছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের শেষদিকে আবার তিনি তেড়েফুঁড়ে ওঠেন। বলে ওঠেন, ‘‘একটা গান হয়ে যাক’’। মুখ্যমন্ত্রী দৃশ্যতই কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘‘গলা বসে গিয়েছে। এখন গান হবে না।’’

 

 

 

পাছে আবার ছিটকে বেরিয়ে ডি বক্সে পৌঁছে যান, তাই অরূপ সারাক্ষণই ‘কড়া ডিফেন্ডার’-এর ভূমিকায় আগলে রেখেছিলেন টুটুকে। ফলে তিনি আর মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিতে আসতে পারেননি। শেষদিকে মমতাও টুটুর দিকে তাকিয়ে ‘জয় বাংলা, জয় মোহনবাগান’ স্লোগান দিতে থাকেন। সম্ভবত ফুটবলের প্রাচীন পন্থা ‘অফেন্স ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স’ মেনে। শেষে মোহনবাগান সভাপতিকে একটি স্কোয়ার পাসে ঠেলে দেন অরূপের দিকেই,— ‘‘আচ্ছা টুটুদা কী বলছে দেখো।’’

 

 

 

 

আরও পড়ুন –

 

 

মুখ্যমন্ত্রী তার কোনও জবাব দেননি। আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে মোহনবাগান তাঁবুতে ফুটবলারদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই মঞ্চেও যাবতীয় নজর কেড়ে নিয়েছেন টুটুই। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দেওয়ার সময় টুটু তাঁর হাত থেকে মাইক্রোফোনটিও কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন। একেবারে শেষমুহূর্তে ‘গোললাইন সেভ’ করেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তবে গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীকে দৃশ্যতই খানিক বিরক্ত এবং ক্ষুন্ন দেখিয়েছিল।