সেলিম-অধীরের গলায়ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের দিন অভিষেককে ইডির তলব, কটাক্ষের সুর অধীর-সেলিমের গলায়

ইডির তলবের জন্য ইন্ডিয়া জোটের প্রথম বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি তৃণমূল কংগ্রসের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এর ফলে যেখানে সর্ব ভারতীয় দল তার পাশে দাঁড়িয়েছে সেখান রাজ্যের সেলিম-অধীরের গলায় কটাক্ষের সুর।

 

প্রসঙ্গত, সিপিএম ইন্ডিয়া জোটের জন্য এখনও কাউকে মনোনীত না করায় কমিটিতে এবং বুধবারের বৈঠকে তাদের কেউ ছিলেন না। এ দিন কলকাতায় অভিষেক প্রসঙ্গে বেসুরো ছিলেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। তেমন কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা কে সি বেণুগোপাল কমিটির বিবৃতি পড়ে শোনালেও অধীর চৌধুরীর সুর ছিল ভিন্ন।

আরও পড়ুনঃ এগিয়ে আসতে পারে ২০২৪- এর লোকসভা নির্বাচন

বুধবার বিকেলে দিল্লিতে শরদ পওয়ারের বাসভবনে সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠক বসেছিল। এ দিনই স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইডি অভিষেককে ডেকে পাঠিয়েছিল। তৃণমূলের তরফে বৈঠকে কেউ হাজির ছিলেন না। বৈঠকের আগেই উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে না, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে এসে ইন্ডিয়ার সমন্বয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিক। ওঁকে আজ ইডি সমন পাঠিয়েছে। আমরা ওঁর আসন ফাঁকা রেখে দিয়ে বার্তা দেব, যে কী ভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইন্ডিয়া-র সদস্যদের হেনস্থা করছে।’’

 

বৈঠকের পর সমন্বয় কমিটির বিবৃতির গোড়াতেই বলা হয়, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি, কারণ তাঁকে ইডি ডেকে পাঠিয়েছে, যা বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতির ফল।’ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপাল সেই বিবৃতি পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির প্রতিহিংসা রাজনীতির ফলেই ইডি অভিষেককে সমন পাঠিয়েছে।’’

 

বৈঠকের পর দিল্লির বিমানবন্দরে শরদ পওয়ারের সঙ্গে রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের দেখা হয়। পওয়ার যাচ্ছিলেন পুণে। ডেরেক কলকাতায় ফিরছিলেন। পওয়ার তাঁকে বলেন, যৌথ বিবৃতির গোড়াতেই অভিষেকের প্রসঙ্গ রয়েছে। সেটা নিশ্চয় ডেরেক দেখেছেন। অভিষেক ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদের পরে বেরিয়েছেন কি না, সে বিষয়েও খোঁজ নেন শরদ।

 

‘ইন্ডিয়া’-র সমন্বয় কমিটি এ ভাবে অভিষেকের পাশে দাঁড়ানোয় অস্বস্তিতে পড়েছে সিপিএম। বিরোধী শিবিরের বাকি সবাই অভিষেকের পাশে দাঁড়ানোয় একমাত্র সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্যই বেসুরে বেজেছে। তাদের পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে তৈরি ইন্ডিয়া-র সমন্বয় কমিটির কারও দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হলে, বিজেপি সুযোগ পেয়ে যেতে পারে। এ নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত। বাম শরিক সিপিআইয়ের ডি রাজা অবশ্য বৈঠকে ছিলেন। বিরোধী নেতাদের দাবি, সকলের ঐকমত্যেই যৌথ বিবৃতি তৈরি হয়েছে। সেখানে অভিষেকের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়েও সকলে একমত হয়েছেন।

 

তৃণমূল শিবির ঠিক এটাই চেয়েছিল। অভিষেককে ইন্ডিয়া-র সমন্বয় কমিটিতে রেখে তৃণমূলের কৌশল ছিল, এর পরে অভিষেকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা পদক্ষেপ করলে তা বিরোধী জোটের সমন্বয় কমিটির সদস্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরা যাবে। সমন্বয় কমিটির বৈঠকের দিনই ইডি অভিষেককে সমন পাঠানোয় সেই সুযোগ তৈরি হয়ে যায়।

 

এ দিন কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও অভিষেককে তলব এবং কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের মনোভাব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ সেটা কংগ্রেসের নেতৃত্ব জানবেন। আমরা জানি, এটা আদালতের হস্তক্ষেপে হচ্ছে। এ তদন্তের দাবি পশ্চিমবঙ্গের বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষ করেছে। আমরা চেয়েছি সিবিআই তদন্ত হোক, চোরদের ধরা হোক, দুর্নীতিগ্রস্তদের ধরা হোক। বিচার হওয়া দরকার। আমরা পশ্চিমবঙ্গে যারা কংগ্রেস করি, আমরা তা জানি, সেখান থেকে আমাদের সরে যাওয়ার প্রশ্ন নেই।’’

 

বৈঠকে অভিষেকের আসন ফাঁকা থাকবে শুনে মহম্মদ সেলিম ঠাট্টার সুরে বলেছিলেন, আসন ফাঁকা থাকবে, না কি আসনে পাদুক রাখা থাকবে, তা রাউতই বলতে পারবেন! অভিষেক জেলে গেলে পাকাপাকি ভাবে আসন ফাঁকা থাকবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সেলিম।

en.wikipedia.org

en.wikipedia.org