তাহলে কি বাজল ট্রামের বিদায়ঘণ্টা ? কি বলছে পরিবহন দফতর ?

তাহলে কি বাজল ট্রামের বিদায়ঘণ্টা ? কি বলছে পরিবহন দফতর ? বছরকয়েক আগে যখন নির্দিষ্ট সময় অন্তর ট্রাম ছাড়ত, তখন এসপ্লানেড থেকে শ্যামবাজার এবং খিদিরপুর রুটে দৈনিক পাঁচ-ছ’হাজার যাত্রী হত।শৌখিন ঐতিহ্য-যান, কফি শপ কিংবা ম্যাজিকের মঞ্চ হিসাবে আগামী দিনে কলকাতার ট্রামকে ব্যবহার করা হলেও, পথে হয়তো আর খুব বেশি ট্রাম দেখা যাবে না। চিৎপুর, গ্যালিফ স্ট্রিট কিংবা বইপাড়ায় লেগে থাকা ট্রামের অবশেষটুকু মুছে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। শহরের গতি বজায় রাখতেই নাকি ট্রামকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই কলকাতা পুরসভা ও পুলিশের পরামর্শ মেনে শহরের ব্যস্ত রাস্তায় আর ট্রাম চালাতে চায় না রাজ্য সরকার।

 

 

বি বা দী বাগে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ মিটে যাওয়ার মুখে। কিন্তু, বি বা দী বাগের বিভিন্ন ট্রাম রুট ফিরবে না বলেই ধরা যায়। যদিও ট্রামযাত্রীদের একাংশের মতে, বি বা দী বাগে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো স্টেশন থেকে কাছাকাছি একাধিক বাজারে যাতায়াত করার ক্ষেত্রে ট্রামই সুবিধাজনক হত। শিয়ালদহ এবং বেলগাছিয়া সেতুর স্বাস্থ্য নিয়ে জটিলতায় ওই রুটে ট্রাম বন্ধ। বেলগাছিয়া ডিপোয় প্রচুর সংখ্যক ট্রাম মজুত থাকলেও তাদের বেরোনোর উপায় নেই। পার্ক সার্কাস ডিপোও মা উড়ালপুলের কারণে অকেজো। মন্ত্রী জানান, ট্রামের জন্য নতুন পরিকাঠামো গড়ে তোলার কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই।

 

বছরকয়েক আগে যখন নির্দিষ্ট সময় অন্তর ট্রাম ছাড়ত, তখন এসপ্লানেড থেকে শ্যামবাজার এবং খিদিরপুর রুটে দৈনিক পাঁচ-ছ’হাজার যাত্রী হত বলে খবর। এখন টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ রুটে ট্রাম কিছুটা নিয়মিত চললেও এসপ্লানেড-গড়িয়াহাট রুটে ট্রামের সংখ্যা তুলনায় কম।

 

 

সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে অবশ্য একমত নন শহরের ট্রামপ্রেমীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, পৃথিবীর বহু শহরেই ফিরে আসছে পরিবেশবান্ধব আধুনিক ট্রাম। অথচ, কলকাতায় ১৫০ বছরের পরিকাঠামো ধ্বংসের মুখে। ‘কলকাতা ট্রাম ইউজ়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘ঐতিহ্যের নামে ট্রামের উপযোগিতা অস্বীকার করার চেষ্টা হচ্ছে। ট্রামকে ঐতিহ্যের পরিসরে বেঁধে রাখার বিরোধী আমরা। যুগোপযোগী করে তুলতে না পেরে তাকে ‘নন পারফর্মার’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। এই ব্যর্থতা তো প্রশাসনের। অথচ, তারাই ট্রামের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।’’

 

আরও পড়ুন –  বেআইনি নির্মাণ বিষয়ে পুরসভার বরো অফিসগুলির ভুমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কলকাতার…

পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, কলকাতায় ট্রাম রুটের সংখ্যা সাকুল্যে চারে নেমে আসতে পারে। এখন এসপ্লানেড-গড়িয়াহাট, টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ রুটে হাতে গোনা ট্রাম চলছে। ভবিষ্যতে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটে সমস্যা মিটলে এসপ্লানেড-শ্যামবাজার রুটও চালু হতে পারে। আমপানে তার ছিঁড়ে পড়ায় প্রায় তিন বছর ধরে খিদিরপুর-এসপ্লানেড রুট বন্ধ। মেরামতির জন্য অর্থ বরাদ্দ সংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও বরাত দিয়ে উপযুক্ত সংস্থা না মেলায় ওই রুট চালু করা যায়নি।

 

সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ট্রামের সার্ধশতবর্ষের উদ্‌যাপন শুরু হওয়ার আগেই বৃহস্পতিবার বালিগঞ্জে ‘ট্রাম ওয়ার্ল্ড কাফে’র উদ্বোধনে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শহরে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। অথচ, রাস্তা চওড়া হয়নি। পুরসভা ও পুলিশের মতে, বহু রাস্তায় এখন যানজটের কারণে ট্রাম চালানো সম্ভব নয়। তবে, ঐতিহ্য হিসাবে ট্রাম থাকবে। বাইরে থেকে যাঁরা আসবেন, তাঁদের জন্য ট্রামে চড়ার সুযোগ রেখেই ১৫০ বছরের উৎসব করব। কলকাতার যে সব রুট যানজটে বিপর্যস্ত হবে না, সেখানে ট্রাম চলবে। অন্যত্র ট্রামলাইন পিচ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে।’’