পুরুলিয়া – একচিলতে উঠোন। প্রাচীরের গায়ে একটি আম গাছ। বৃহস্পতিবার দুপুরে কাঠের কফিনটা যখন সেই আমগাছের তলায় এনে রাখা হল, তখন আশপাশে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। নেতা, মন্ত্রী থেকে পরিজনেরা একে একে ফুলের মালা দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছেন কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় নিহত মণীশরঞ্জন মিশ্রকে (৪২)।নেতাদের ভিড় কিছুটা পাতলা হতেই ঘরের ভিতর থেকে বেরিয়ে এল মণীশের ১৩ বছরের ছেলে সায়ন। কফিনের কাছে যাওয়া মাত্রই আর্তনাদ করে উঠল, ‘পাপা… পাপা তুমি ওঠো…।’ নিস্তব্ধতা ভেঙে খানখান। সদ্য পিতৃহারা বালককে বুকে টেনে নিলেন পুরুলিয়ার পুলিস সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরেই রাঁচি এয়ারপোর্ট থেকে সড়কপথে পুরুলিয়ার ঝালদার পুরাতন বাঘমুন্ডি রোডের বাড়িতে এসে পৌঁছয় মণীশের কফিনবন্দি দেহ। তার আগে থেকেই গোটা শহরের মানুষ এসে জমেছিল মণীশের বাড়ির বাইরে। মণীশের মৃতদেহ ঢুকতেই কান্নার রোল ওঠে। পরিবার জানিয়েছে, মণীশ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি (ইন্টিলেনজেন্স ব্যুরো)-র সেকশন অফিসার। হায়দরাবাদে কর্মরত মণীশ সম্প্রতি স্ত্রী, ১৩ বছরের ছেলে ও সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে বৈসরনে পরিবার নিয়ে খোশ মেজাজেই সময় কাটাচ্ছিলেন মণীশ। হঠাৎ করেই জঙ্গি হানা। একেবারে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে মণীশের মাথায় গুলি করে জঙ্গিরা। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় মুখমণ্ডল। চোখের সামনেই স্বামীর রক্তাক্ত নিথর দেহ দেখে অজ্ঞান হয়ে যান জয়া। বুধবার শ্রীনগরেরই একটি হাসপাতলে ভর্তি ছিলেন জয়া। তাঁর ছেলেমেয়েরা ছিল আইবি-র তত্ত্বাবধানে। এদিন সকালে রাঁচি এয়ারপোর্টে আসেন তাঁরা। এয়ারপোর্টে নামামাত্র ফের স্বামীর মৃত্যুশোকে জ্ঞান হারান জয়া। সেখানের একটি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় জয়াকে। কিছুটা সুস্থ হলে স্বামীর কফিন বহনকারী অ্যাম্বুল্যান্সের পিছু পিছু একটি গাড়িতে করে তাঁরা ঝালদার বাড়িতে এসে পৌঁছান। ঝালদায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নামার মতো শক্তি ছিল না মণীশের স্ত্রীর। স্ট্রেচারে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ঘরের ভিতরে।
এদিকে, ছেলের অপেক্ষায় গত দু’ রাত ঘুমোননি মণীশের মা আশাদেবী, বাবা মঙ্গলেশ মিশ্র। কফিন খোলার পর চিরনিদ্রিত সন্তানের দেহ দেখার পর আশাদেবী আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারলেন না। টলে পড়ে যাওয়ার মুখে তাঁকে ধরে ফেললেন প্রতিবেশীরা। এদিকে, কেঁদে কেঁদে চোখের জল শুকিয়ে গিয়েছে মঙ্গলেশের। ছেলের মৃতদেহের মাথার গোড়ায় চুপচাপ গালে হাত দিয়ে বসে ছিলেন তিনি। কফিন ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন মণীশের দুই ভাই। ছোটবেলার বন্ধু থেকে প্রতিবেশীরাও এদিন ভেঙে পড়েছিলেন কান্নায়। ‘
