কলকাতা – ২০১৬ সালের এসএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগ বাতিল হওয়া শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের বিক্ষোভ ঘিরে ফের উত্তপ্ত বিকাশ ভবন চত্বর। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীরা বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পুলিশের উপস্থিতিতেই চলে স্লোগান-বিক্ষোভ।এই অবস্থান বিক্ষোভের মাঝেই বিকাশ ভবনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্ত। তাঁকে ঘিরে ‘চোর চোর’ স্লোগান তোলেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, আন্দোলনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন সব্যসাচী দত্ত। পাশাপাশি, চাকরিচ্যুতদের দাবি, ওএমআর শিটের ‘মিরর ইমেজ’ প্রকাশ করতে হবে এবং নতুন করে পরীক্ষায় বসতে তাঁরা রাজি নন, কারণ তাঁরা যোগ্য প্রার্থী।প্রসঙ্গত, ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল করে দেয়। বাতিল হয় ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে গঠিত প্যানেল। ১৭ এপ্রিলের আরেক রায়ে, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ‘টেইন্টেড’ ও ‘আনটেইন্টেড’ প্রার্থীদের পৃথকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘আনটেইন্টেড’ প্রার্থীরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষকতার কাজে বহাল থাকতে পারবেন, তবে তাঁরা কোনও বাড়তি সুবিধা পাবেন না।যাঁরা ‘গ্রুপ সি’ ও ‘গ্রুপ ডি’ পদে ছিলেন, তাঁরা এই সুবিধার আওতায় আসেন না। কারণ, আদালতের মতে, এই পদে নতুন নিয়োগ আবশ্যক। আগামী ৩১ মে-র মধ্যে এসএসসি-কে নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে বলে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে জানায়, সিবিআই তদন্তে পাওয়া তথ্যে দেখা গিয়েছে, অনেক প্রার্থী ওএমআর শিটে শূন্য নম্বর পাওয়ার পরেও নিয়োগ পেয়েছেন, আবার অনেকে প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরেও চাকরি পেয়েছেন—যা ‘অস্বচ্ছ’ বা ‘টেইন্টেড’ বলে চিহ্নিত করেছে আদালত।
বিক্ষোভকারীদের প্রশ্ন, যদি সরকার বা এসএসসি সময়মতো যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা আদালতে পেশ করত, তবে আজকের এই সংকট তৈরি হতো না। এখন যখন হাজার হাজার প্রার্থী জীবিকা হারিয়েছেন, তখন সরকার বলছে, ২১ এপ্রিলের মধ্যে তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব।প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিলেন, কলকাতা হাইকোর্টের চাকরি বাতিলের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করা যাবে না, শুধু কিছু পরিমার্জন সম্ভব। যাঁরা অন্য সরকারি চাকরি ছেড়ে শিক্ষক পদে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা পুরনো পদে ফিরে যেতে পারবেন এবং নতুন নিয়োগ পরীক্ষায় বয়স ছাড় পাবেন। বিশেষভাবে সক্ষম প্রার্থীদেরও বয়সে ছাড় থাকবে, তবে তাঁদের বেতন ফেরত দিতে হবে না। অযোগ্য প্রার্থীদের অবশ্যই বেতন ফেরত দিতে হবে।
