৩০০ কোটি টাকা ‘ফিজ’ !!! আজ থেকে প্রায় ৬১ বছর আগেকার কথা। ১৯৬১ সালের ৬ অগস্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জে এফ কেনেডির সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাত্কারে বসেছেন পশ্চিমবঙ্গের তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধানচন্দ্র রায়। সম্পূর্ণ ঘটনা বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত আছে নিউ ইয়র্ক টাইমসে। টুকটাক কথাবার্তা হচ্ছে। হঠাত্ই ডঃ রায় প্রশ্ন করলেন, ‘আচ্ছা, আপনার কি বেশ কিছুদিন ধরে পিঠটা খুব ব্যথা করছে?’ প্রশ্ন শুনেই চমকে উঠলেন প্রেসিডেন্ট কেনেডি। বিস্ময়ের সুরে বললেন, ‘ঠিক বলেছেন তো!
বেশ যন্ত্রণা পিঠে। কিন্তু আপনি কীভাবে জানলেন?’ উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী হালকা হেসে জানালেন, ‘পেশায় আমি একজন চিকিত্সক। তবে নেশায় আমি রাজনীতিবিদ।’ তাঁর উত্তর শুনে তখন আরও অবাক কেনেডি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিন্তু আপনি তো আমার রোগ পরীক্ষাও করেননি। এভাবে দেখে কী করে বলে দিলেন?’ উত্তরে স্রেফ হাসতে থাকেন বিধানচন্দ্র রায়। তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিজের সমস্ত প্রেসক্রিপশন, মেডিকেল হিস্ট্রি, টেস্ট রিপোর্ট এনে দেখান প্রেসিডেন্ট।
সেগুলি দেখে ডঃ রায় বেশ অসন্তুষ্ট হন। তারপর তিনি নিজে কিছু ওষুধ লিখে দেন। তারপর বলেন, ‘এই আমি ওষুধ লিখে দিলাম। আগামী এক বছরের মধ্যে যদি কোমরে ব্যথা না সারে, তাহলে আমি নিজে আবার আসব আপনার কাছে, তাও আবার নিজে খরচ করে।’ জে এফ কেনেডি পুরো ব্যাপারটায় বেশ মজা পেলেন। খুশিও হলেন অনেক। এরপর বেরিয়ে আসছেন বিধানচন্দ্র রায়, এমন সময়ে হঠাত্ দাঁড়িয়ে পড়লেন।
আরও পড়ুন – কয়লা পাচার ও বেআইনিভাবে মজুতের অভিযোগে বীরভূমে গ্রেফতার ৬
বললেন, ‘আচ্ছা আমার ডাক্তারির পারিশ্রমিক?’ প্রশ্ন শুনে যারপনাই অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সত্যিই তো, চিকিত্সককে তো তাঁর ফিজ দেওয়া উচিত্! একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চই, আপনার ফি কত টাকা?’ আর তখনই ডঃ বিধানচন্দ্র রায় যেটা করে বসলেন, তা কল্পানতীত। বের করলেন তাঁর কলকাতার উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যান। জানালেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তাঁর রাজ্যের ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন।
ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রচেষ্টায় অবাক হয়ে গেলেন প্রেসিডেন্ট কেনেডি। সঙ্গে সঙ্গেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সহায়তায় কলকাতার উন্নয়নের পরিকল্পনার সমীক্ষা করা হবে বলে জানালেন। এরপর বাকিটা সোনালি অক্ষরে লেখা ইতিহাস। গঠিত হল ক্যালকাটা মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন (পরে টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্ট)। এর অধীনে টাউনশিপ, স্কুল, হাসপাতাল, মিউনিসিপ্যাল ম্যানেজমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন- কী না হয়নি!