গ্রাম বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি

গ্রাম বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি। আজ পৌষ সংক্রান্তি বাঙালির ঘরে ঘরে একদিকে যেমন লক্ষ্মীপুজো, এই সময় যে লক্ষ্মীপূজো হয়, তা উঠান লক্ষ্মী নামে পরিচিত , এই লক্ষ্মী পুজো ধান দিয়ে করা হয় অঘ্রান মাসে যে ধান উঠে সেই ধানের প্রথম ধানকে এই পুজোতে লাগানো হয়। প্রতি পরিবারের বাঙালি কে এই পুজোয় বিভিন্ন নিয়মের মধ্যে চলতে হয়।

 

কোন কোন জায়গায় সারারাত ধরে জেগে থাকেন মানুষ , তার উদ্দেশ্য কখন শিয়াল ডাকবে, শিয়াল ডাকলে তবেই উঠোন লক্ষীকে তোলা হয় ঘরের ভেতর। অনেক জায়গায় স্থানীয় নাম শিয়াল ডাকা লক্ষ্মীপূজো। তবে আজকাল আর এই জিনিস অনেক গ্রামেই দেখা যায় না।

 

অনেক গ্রামেতেই শিয়াল দেখা যায় না, বা শিয়ালের ডাক শোনাও যায় না, দেখা যায় শুধু পেঁচা তাও পেঁচা বিলুপ্তির পথে, তবুও এই পেঁচা ডাকলেই লক্ষ্মী পুজোর সমাপন করা হয়। অন্যদিকে এই দিনটি তেমনি পিঠে পুলি তৈরীর বিশেষ দিন। বছরের এই দিনটির জন্য উৎসুক হয়ে থাকে বাঙালির প্রাণ, পিঠে পুলি খাওয়ার জন্য ।গ্রামের বিশেষত, বয়স্ক মহিলারা সংক্রান্তির বেশ কিছুদিন আগে থেকে ঢেকি নামক এক যন্ত্রে চালগুড়ো করতে দেখা যেত বহুকাল আগে, এই ঢেঁকি তে চাল গুঁড়ো করতে হলে কমপক্ষে তিনজন লাগে, একজন ঢেঁকিতে পা দিত, একজন চাল দিতো, একজন চাল গুঁড়ো হবার পর তুলে নিতেন।

আরও পড়ুন – প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সদর দফতরেই বড়সড় কেলেঙ্কারি ফাঁস!

এবং এই যন্ত্র থেকেই তৈরি হতো গুড়ি নামক বস্তু, এই গুড়ি দিয়েই তৈরি হয় নানা রকমের পিঠে পুলি। এই যন্ত্রটির নাম ঢেঁকি, এই ঢেঁকি দিয়ে আগেকার সময় ধান ভাঙ্গা হতো , চাল গুঁড়ো করা হতো। কিন্তু আমরা আধুনিক হচ্ছি, আজ, আর ওই ঢেকির প্রয়োজন হয় না ঢেকি নামক বস্তুটি গ্রাম বাংলার বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে বসেছে। আগে গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ঢেঁকি দেখা যেত, গ্রাম বাংলার বুকে।

 

এবং সারা রাত ধরে জেগে বাড়ির বয়স্ক মহিলারা চাল গুঁড়ো করতেন, আর শোনা যেতো ঢেঁকির ক্যাঁচ কোঁচ শব্দ কিন্তু হায়, আজকে আর তার কোন অস্তিত্বই নেই তার। কিছু কিছু একদম প্রত্যন্ত গ্রামে কয়েকটি থানার মধ্যে হয়তো একটি ঢেঁকি, কোন ও ভাগ্যবানের বাড়িতে রয়েছে ঠিকই ,তবে তার আর কদর নেই। নেই নিয়মিত ব্যবহার, কেবলমাত্র তাকে ব্যবহার করা হয় বছরে পাঁচ সাত টি দিন অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তির আগে ক’টি দিন এই ঢেঁকির ব্যবহার করা হয়। বয়স্ক মহিলাদের মুখে শোনা গেছে ঢেঁকি ছাটা, চালের গুড়ি দিয়ে সমস্ত রকম পিঠে খুব সুস্বাদু ও সুন্দর হয়।

 

এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেকেই ঢেঁকির নাম শোনেননি। তারা চালের গুড়ি বলতে বোঝেন গমকলের মধ্যে চাল দিয়ে গুড়ি তৈরি। তারা ঢেঁকির কদরও বোঝেন না , নামও হয়তো অনেকে শোনেননি। আর অনেক বাড়িতে এখন আর কষ্ট করে পিঠে তৈরিও করতে দেখা যায় না এখন দোকানে রেডিমেড পিঠে খেয়েই অভ্যস্ত আমরা। গ্রাম বাংলার বুক থেকে সত্যিই হারিয়ে যাচ্ছে অনেক প্রাচীন ঐতিহ্য তার মধ্যে ঢেঁকি অন্যতম একটি।