হাওড়ার সুইমিং পুলে খুদে সাঁতারুর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ

হাওড়ার সুইমিং পুলে খুদে সাঁতারুর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ । হাওড়ার ডুমুরজলায় স্থানীয় ক্লাবের সুইমিং পুলে সাঁতার শিখতে গিয়ে জলে ডুবে ৯ বছরের শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই উঠে গিয়েছে বেশ কিছু প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠেছে ওই সুইমিং পুলের পরিকাঠামো নিয়েও। শুক্রবার সন্ধ্যে পৌনে ৬টা নাগাদ ওই ঘটনার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে ওই সুইমিং ক্লাব। চ্যাটার্জিহাট থানা সূত্রের খবর, শনিবার সকাল পর্যন্ত এই ঘটনায় থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।

 

এদিকে, শিশুর পরিবার ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে। শিশুদের সাঁতার শেখানোর ওই জায়গায় বেবিপুল কেন ছিলোনা, সেখানে জলের গভীরতাই বা কতটা ছিল, সেখানে সিসি ক্যামেরার নজরদারি কেন ছিলোনা এরকম বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে এই ঘটনায়। সুইমিং পুল চালাতে গেলে যা যা পরিকাঠামো থাকা দরকার তা ছিলোনা বলেই অভিযোগ উঠেছে। হাওড়ার ব্রজনাথ লাহিড়ী লেনের বাসিন্দা বিদীপ্তর পরিবারের অভিযোগ, বিদীপ্ত সাঁতারে নতুন শিক্ষার্থী। কিন্তু সে কখন জলের মধ্যে তলিয়ে গেল সেটা কেউই খেয়াল রাখার প্রয়োজন মনে করেনি। যখন খোঁজ পাওয়া যায় তখন অনেকটা জলই বিদীপ্তর পেটে ঢুকে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে ওই সুইমিং পুলের সম্পাদক তপন দাস জানান, ঘটনাটি দুঃখজনক। মর্মান্তিক। ১৯৮৩ সাল থেকে চলছে এই সুইমিং পুল।

 

এখনও পর্যন্ত কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। ক্লাবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট নজরদারির চেষ্টা করা হয়। এক্সট্রা নজরদারির জন্য সব প্রশিক্ষকের সঙ্গে একজন করে অভিভাবককে পুলের কাছে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। যে অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখে সংশোধন করার চেষ্টা করা হবে। এটা ন্যাচারাল সুইমিং পুল। এই পরিকাঠামো দেখেই অভিভাবকরা এখানে ভর্তি করেন। ঘটনার সময় অভিভাবকও নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, ওই সুইমিং পুলে নিয়মিত সাঁতার কাটতে আসা সুমিত সেন জানান, শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যচর্চা করতেই তিনি নিয়মিত এই সুইমিং পুলে আসেন। দু’বছর করোনার জন্য সুইমিং পুলটি বন্ধ হয়ে ছিল। আবার শুরু হয়েছে।

 

নিজেদের দায়িত্বেই তাঁরা এখানে আসেন। এবং জলে নামেন।  ১৫ বছর ধরে এখানে প্র্যাকটিস করছেন।  এখানকার কর্মীরা অত্যন্ত আন্তরিক। তবে, আধুনিক মানের সুইমিং মিল বলতে যা বোঝায় এটা সেই ধরনের সুইমিং পুল নয়। এটা একটা পুকুর। এর নিচে পরিষ্কার করে বালি ফেলে সাঁতার কাটার উপযুক্ত করা হয়েছে। তবে জল নোংরা। পরিকাঠামো দিক থেকে জলের মান খুব খারাপ। নিরাপত্তার জন্য সাঁতার প্রশিক্ষকরা ঠিকঠাক দেখভাল করছেন কিনা তা দেখতে হবে। তবে সবকিছু মেনে নিয়েই এখানে সাঁতার কাটতে আসেন তাঁরা।
সাঁতার কাটতে আসা সুপ্রিয় রায় জানান, এখানে প্র্যাকটিস করেন তিনি। এটা আদতে সুইমিং পুল নয়। এখানে সুইমিং পুলের কোনও সুযোগ সুবিধা নেই। এখানে বছরে একটা সময় জল ভরে দেয়। তারপর সারা বছর চলে।

 

এই পুলের গভীরতা পাঁচ ফুটের মতো। তবে যারা সাঁতার শেখা শুরু করে তাদের কম গভীর জলে সাঁতার শেখানো হয়। এখানকার জলের গুনমান খুব খারাপ। লাইফ বেল্টের কোনও সুবিধা নেই। সিসিটিভি দরকার। কিন্তু তা নেই। অপর এক ব্যক্তি জানান, জলে নামিয়ে দিয়ে প্রশিক্ষক অন্যদিকে চলে যান। বাচ্চা জল খেয়ে ফেলছে, ডুবে যাচ্ছে এটা ভালো লক্ষণ হতে পারে না। এমন ঘটনা এটা কোনও প্রশিক্ষণকেন্দ্রের পক্ষেই কাঙ্খিত নয়। সাঁতার শিখতে আসা এক বাচ্ছাকে গভীর জলে ছেড়ে দেওয়া হলই বা কি ভাবে ?

 

এদিকে, গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে প্রশিক্ষক কৃষ্ণ গোপাল রায় জানান, শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে বিকেল ৫টার লাস্ট ব্যাচে। তাদের বিকেল সাড়ে ৫টার সময় জলে নামানো হয়। সন্ধ্যে পৌনে ৬টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। উপুড় হয়ে বাচ্চাটাকে জলে ভাসছিল হঠাৎই ঘটনাটি ঘটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে জল থেকে তাকে তুলে নিয়ে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। তার শরীর থেকে প্রচুর জল বার করা হয়। সুইমিং পুলে জলের উচ্চতা ছিল প্রায় সাড়ে চার ফুট। আগামী দিনে আমরা চেষ্টা করব কিভাবে এটাকে আরো উন্নত করা যায়।

 

জুনিয়র প্রশিক্ষকরাও আপ্রাণ চেষ্টা করছে। জানা গেছে, এপ্রিল মাসে সুইমিংয়ে ভর্তি হয়েছিল বিদীপ্ত। ঘটনার সময় একসঙ্গে পুলে নেমেছিল প্রায় ৩৫ জন সাঁতারু। কিছুক্ষণ পরেই ঘটে যায় ওই ঘটনা। এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন মৃত শিশুর পরিবার। এদিকে, শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে এসে হাওড়া পুরনিগমের প্রশাসকমন্ডলীর চেয়ারপার্সন ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী বলেন, সুইমিং পুলে সাঁতার শিখতে এসে যে ঘটনা ঘটে গেছে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। স্বান্ত্বনা জানাবার কোনও ভাষা নেই।

আরও পড়ুন – গুলিতে খুন যুবক, তীব্র উত্তেজনা ভাটপাড়ার বাকরমহল্লায়

এটা এই অঞ্চলের একটা দীর্ঘদিনের সুইমিং পুল। প্রায় ১৯৮৩-৮৪ সাল থেকে এইখানে সাঁতার শেখানো হচ্ছে। হাওড়া পুরসভা থেকে আমরা বিষয়টা খতিয়ে দেখব। কিন্তু এই জমিটা এইচআইটি’র জমি। এটা কর্পোরেশনের জায়গা নয়। কিন্তু যেহেতু একটা এইরকম ঘটনা ঘটেছে এবং বিভিন্ন মহল থেকে নানা অভিযোগ আসছে তাই আমরা কর্পোরেশনের দিক থেকে অবশ্যই এই দিকগুলো দেখব। হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করতে হবে। কারণ এরাই লাইসেন্স দেন। এখন এনারা বিষয়টা কতখানি মনিটরিং করছেন সেটা দেখতে হবে। দেখতে হবে যে একসঙ্গে কতগুলো বাচ্চা জলে নামছে।

 

তখন কতগুলো ট্রেনার তাদের দেখাশোনা করছেন। এক্ষেত্রেও কোথাও গাফিলতি থাকলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেই বিষয়ে কোন প্রশ্নই নেই। এদিকে, এই ঘটনার বিষয়ে বাংলা দলের সাঁতার প্রশিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘোষ দাবি করেন, কিভাবে শিশু সাঁতারুর মৃত্যু হয়েছে সেটা আমরা জানি না। তবে অবশ্যই বাচ্চাদের সাঁতার শেখানোর জন্য নবিশ ট্যাঙ্ক থাকা দরকার। এবং এর মাধ্যমেই বাচ্চাদের প্রথমে সাঁতার শেখানো উচিত। সেটা পার করতে পারলে তারপরে তাকে বড় পুলে সাঁতার করতে দেওয়া উচিত। তবে কোনও জায়গায় যদি নবিশ ট্যাঙ্ক না থাকে, সেখানে অবশ্যই খুদে সাঁতারুদের জন্য প্রশিক্ষিত বেশি প্রশিক্ষক রাখা উচিত। সবসময় শিশু সাঁতারুদের নজরে রেখে সাঁতার শেখানো উচিত।