বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হল ১০৮ পুরসভার নির্বাচন

বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হল ১০৮ পুরসভার নির্বাচন

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হল ১০৮ পুরসভার নির্বাচন । সিপিএম এবং ভাজপার বিক্ষিপ্ত গণ্ডোগোলের চেষ্টা বাদ দিলে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হল ১০৮ পুরসভার নির্বাচন। উত্তর থেকে দক্ষিন- সর্বত্র পুলিশের তৎপরতায় ভোট ছিল শান্তিপূর্ণ। রবিবার ভোট শুরুর ঘণ্টাখানেকের মধ‍্যে ভাটপাড়া, উত্তর ব‍্যারাকপুর, রাজপুর সোনারপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক বুথে ইভিএম ভেঙে গুণ্ডামি শুরু করে ভাজপা। উত্তর দমদম, কামারহাটিতে বহিরাগতদের নিয়ে এসে গণ্ডোগোল করার চেষ্টা করে সিপিএম। মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরের একাংশে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তৃণমূলের বুথ অফিসে হামলার অভিযোগ ওঠে। যদিও তৃণমূলের দাবি, ভোটে যেখানে সন্ত্রাস হয়েছে তার জন‍্য বিরোধীরা দায়ী। মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। একটি পুরসভাও জিততে পারবে না তারা। ভোট শেষে তাই তারা নাটক করছে।

বাঁকুড়া

বাঁকুড়ায় মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবেই শেষ হল তিন পুরসভার নির্বাচন। বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া জেলার বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী এই তিনটি পুরসভার কোথাও তেমন বড় ঘটনা ঘটেনি। সকালের দিকে ঠান্ডার আমেজ থাকায় অধিকাংশ বুথ ছিল একেবারে ফাঁকা। তবে বেলা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিটি বুথেই উৎসবের মেজাজে হাজির হন ভোটাররা। দিনের শেষে তিন পুরসভা মিলিয়ে ভোটদানের হার দাঁড়ায় আশি শতাংশের বেশি। এদিন যখনই কোনো বুথের সামনে জমায়েত তৈরী হয়েছে তখনই সেখানে হাজির হয়ে জমায়েত হঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এদিন বিকালে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার বলেন, ” বাঁকুড়ায় ভোট শান্তিপূর্ণ। মানুষ ভোট দিয়েছেন। আমরা আশাবাদী “। তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র বলেন, ” ভোট অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ হয়েছে। পুলিশ একেবারে নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়েছিল। বহু ক্ষেত্রে পুলিশ বিরোধীদের অভিযোগকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। আমরা একশো শতাংশ আশাবাদী”।

মুর্শিদাবাদ

অধীর চৌধুরীর ভোট করানোর পরিকল্পনা রুখে দিল তৃণমূল। কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া রবিবার পুরভোট সম্পন্ন হল শান্তিপূর্ণভাবেই। বিকেলের শেষ পাওয়া খবরে জানা যায় ৭৬ শতাংশের অধিক ভোট পোল হয়েছে। যদিও সদর শহর বহরমপুর ,জঙ্গিপুর, ধুলিয়ান কংগ্রেস ও বিজেপির সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূলের দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে। তারপর থেকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবে উঠে আসে বহরমপুর খাগড়া এলাকা। এখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী ঐ এলাকার ভোটার না হয়েও নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বুথ পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় তৃনমূলের কর্মী-সমর্থকরা তাকে রীতিমত ঘিরে ধরে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। পাল্টা অধীর চৌধুরী তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে বচসা শুরু করে দেয় সাংবাদিকদের সামনে। এরপরে পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসে প্রশাসনের কর্তারা।এ ব্যাপারে টাউন তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা প্রার্থী নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন,”অধীর রঞ্জন চৌধুরী ভালো করে বুঝে গিয়েছে কংগ্রেস বহরমপুর সহ অন্যান্য পুরো এলাকায় মুর্শিদাবাদে হেরে যেতে চলেছে, তাই বিজেপির কাঁধে ভর করে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক উত্তেজনা তৈরি করার জন্য”। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি কর্মীরা নিজেদের ভোট ব্যাংক হারিয়ে ফেলে এলাকায় কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোট করতে চাইছে।মানুষ তাদের সেই চক্রান্ত ধরে ফেলায় এদিন তারা উত্তেজনা তৈরি করতে কংগ্রেসের দুষ্কৃতীদের নিয়ে আসে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে”।

পূর্ব বর্ধমান

সংগঠন নেই। জেলার ৬ পুরসভায় খুঁজেই পাওয়া গেল না বিরোধীদের। পোলিং এজেন্ট দিতে না পেরে ভোটে ছাপ্পার অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। তবে এদিন ৬ পুরসভায় ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই মেটে। এদিন সকাল থেকেই ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা যায়। উৎসবের মেজাজে ভোট হয়। গুসকরা পৌরসভায় বিক্ষিপ্ত গন্ডগোল ছাড়া ভোট শান্তিতে মেটে। কাটোয়া পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মাসুদা খাতুন এদিন অভিযোগ তোলেন তার ওয়ার্ডের ৮১ ও ৮২ নম্বর বুথের সামনে নির্দিষ্ট দূরত্বে বুথ অফিস করতে দেয়নি কংগ্রেস আশ্রিত দুস্কৃতীরা। তবে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বর্ধমান পুরসভায় বিজেপি গননা কেন্দ্র বয়কট করলো। উৎসবের মেজাজে পূর্ব বর্ধমান জেলার এই ভোট হলেও ছন্দ পতন ঘটে বৃষ্টির জন্য। এদিন দুপুর দুটো নাগাদ ছন্দপতন ঘটায় হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি। প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে ঝড়বৃষ্টির জেরে লাইনে দাঁড়ানো ভোটাররা বিপাকে পড়েন।

হাওড়া

দু একটি‌ বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছাড়া মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটল উলুবেড়িয়া পুরসভার নির্বাচন প্রক্রিয়া। নির্বাচনে বিরোধীদের সেভাবে মাঠে না দেখা গেলেও এদিনের ভোটদানকে কেন্দ্র করে অভিযোগ , পাল্টা অভিযোগে সামিল হল তৃনমূল থেকে শুরু করে কংগ্রেস , বিজেপি , সিপি এম। যদিও শাসক দলের দাবি নির্বাচনের আগেই বলা হয়ছিল ৩২ টি ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত। আর সেটা আগেভাগেই বুঝতে পেরে বিরোধীরা মিথ্যা অভিযোগ করছে।এদিন সকাল থেকে উলুবেড়িয়া পুরসভার ৩২ টি ওয়ার্ডে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোটদান শুরু হলেও বেলা বাড়তেই বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে অভিযোগ তুলতে শুরু করে বিরোধীরা। এদিন সকাল থেকে বুথে ছিল ভোটারদের লম্বা লাইন। তবে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ভোটদানের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতন। এদিন দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন বুথ থেকে অভিযোগ আসতে শুরু করে। উলুবেড়িয়া পুরসভা ২৭ নং ওয়ার্ডের বিডিও অফিসের ২০৭ নং বুথে ইভিএম ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে কংগ্রেসের দিকে । যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে কংগ্রেসের প্রার্থী সেখ সুজাউদ্দিন। ইভিএম ভাঙচুরের ঘটনায় প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে ২০৭ নং বুথে ভোটদান পক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। ঘটনাস্হলে আসে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও কুইক রেসপন্স টিম। এরপর নতুন ইভিএম মেশিন এনে পুনরায় ভোটদান প্রক্রিয়া শুরু হয়।

কোচবিহার

বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছাড়া মোটের ওপর শান্তিপূর্ণভাবেই কোচবিহারে পাঁচটি পৌরসভা নির্বাচন সম্পন্ন হল। রবিবার ছুটির দিন সকাল থেকেই কোচবিহারের প্রত্যেকটি পৌরসভার ভোট গ্রহণ কেন্দ্র সাধারণ মানুষ তাদের নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে লম্বা লাইন দেন। সকাল বেলা ঠিক যেমন লাইন ছিল বেলা বাড়তেই লাইনটা আরো বেড়ে যায়। তবে তুফানগঞ্জ ও কোচবিহারে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর সামনে এসেছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মাথাভাঙ্গা মেখলিগঞ্জ কিংবা হলদিবাড়ি তে সেভাবে বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানা গেছে। কোচবিহার জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর প্রায় ৮১.৪১ শতাংশ ভোট কোচবিহার জেলায় পড়েছে।

মালদা

ইংলিশবাজার ও পুরাতন মালদা পুরসভায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ইংলিশবাজারে ভোট পড়েছে ৮০.‌২১ শতাংশ এবং পুরাতন মালদায় ভোট পড়েছে ৮৬.‌৮১ শতাংশ। এদিন সকালে ইংলিশবাজার পুরসভায় ৮ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণকে ঘিরে গন্ডগোল বাঁধে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এক বিজেপি পোলিং এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডেও বিজেপি পোলিং এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। বহিরাগতদের জটলার খবর পেয়ে ছুটে আসেন বিশেষ পর্যবেক্ষক মৌসমী চট্টরাজ চৌধুরি। তিনি এসে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনি এলাকার রামকিঙ্কর বালিকা বিদ্যালয় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোট চলাকালীন ভুয়ো ভোটের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় ওই ভুয়ো ভোটারকে পুলিশ আটক করে। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষ্ণ কালিতলা এলাকায় ছাপ্পা ভোট দিতে এসে ধরা পড়ে এক বহিরাগত যুবক। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top