কলকাতা: বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে নেই পর্যাপ্ত লোকবল বা পরিকাঠামো—এই যুক্তি তুলে ধরে কলকাতা হাইকোর্টে নিজেদের অসহায়তার কথা জানাল দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসন ও পূর্ব কলকাতা ওয়েটল্যান্ডস ম্যানেজমেন্ট অথরিটি। তাঁদের এই বক্তব্যে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। তাঁর সরাসরি প্রশ্ন, ‘‘তাহলে কি বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে হাইকোর্ট লোক জোগাড় করবে?’’
আদালতে জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, কলকাতা পুরসভার তুলনায় তাদের লোকবল ও প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো অনেকটাই দুর্বল। সেই কারণে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজে তারা বড়সড় পদক্ষেপ নিতে পারছে না। তাদের দাবি, এই ধরনের অভিযানে কলকাতা পুরসভা বা অন্য দক্ষ সংস্থাগুলিকেও যুক্ত করা হোক।
জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ৫৬০টি বেআইনি নির্মাণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০টি নির্মাণ ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়েছে। বাকি বিপুল সংখ্যক নির্মাণ ভাঙার কাজ থমকে রয়েছে পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে।
অন্যদিকে, পূর্ব কলকাতা ওয়েটল্যান্ডস ম্যানেজমেন্ট অথরিটির তরফে জানানো হয়েছে, পূর্ব কলকাতার জলাভূমি বুজিয়ে গড়ে ওঠা বেআইনি নির্মাণগুলি চিহ্নিত করতেও জনবলের ঘাটতি রয়েছে। তবে এই পরিস্থিতিতেও হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী দুই সংস্থাকে নিয়ে একটি যৌথ ভিজিটের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিচারপতি অমৃতা সিনহা এদিন স্পষ্ট ভাষায় বলেন, দুই সংস্থার কেউই নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারছে না। তাঁদের বক্তব্যে একপ্রকার অসহায়তা ফুটে উঠেছে। তিনি নির্দেশ দেন, আগে সমস্ত বেআইনি নির্মাণ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে। কোথায়, কতগুলি অবৈধ নির্মাণ রয়েছে, তার একটি তালিকা তৈরি করে ৫ আগস্টের মধ্যে ওয়েটল্যান্ডস ম্যানেজমেন্ট অথরিটির কাছে জমা দিতে হবে। ওই দিনই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
প্রসঙ্গত, পূর্ব কলকাতা জলাভূমির পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে একাধিক বেআইনি নির্মাণ ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে এবং সেগুলিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। তবে বাস্তবে সেই নির্দেশ কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের অপারগতার জন্য। ফলে বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করা ও পরিবেশ রক্ষা—এই দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে আদালতের উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।
