২০২৪-এ বিজেপি কেন্দ্রে সরকার গড়বে আসনও বাড়াবে, তৃণমূলের কি হবে !

২০২৪-এ বিজেপি কেন্দ্রে সরকার গড়বে আসনও বাড়াবে, তৃণমূলের কি হবে !

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

২০২৪-এ বিজেপি কেন্দ্রে সরকার গড়বে আসনও বাড়াবে, তৃণমূলের কি হবে ! একদা যে ভারতের বিস্তার ছিল অসীমায়িত। যার খাতি বিশ্বাস ও সংস্কৃতির মুলে ছিল ধর্মীয় নিরপেক্ষতা, সৌভাতৃত্ববোধ ও সহনশীলতা। যা ছিল এক অতুলনীয় মানব সভ্যতার পরকাস্টা,যা দেখিয়ে মনুষ্য সমাজকে আকৃষ্ট করেছিল বিপুলভাবে। যে দেশের ‘গান্ধীবাদ’ অহিংস রাজনীতি শিখিয়েছে বিশ্ববাসীকে, আজ সেই দেশে ধর্মীয় বিভাজনের আলোচনা মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধরে নেওয়া হচ্ছে তার নিরিখে আগামী লোকসভা নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমবেশী ১৫ মাস দুরে। কি হবে সারাদেশের ফলাফল তা নিয়ে মিডিয়ার জোতিষেরা ইতিমধ্যেই মঞ্চে নেমে পড়েছেন !

 

তারা কি তৎপর এটা জানতে যে আগামী নির্বাচনে কি হবে নরেন্দ্র মোদির সরকার ও তার দল বিজেপির ভবিষ্যত?
মমতা সরকারের পশ্চিমবঙ্গের চেহারাই বা কি হবে? কি হবে মমতার তৃণমূল দলের, আগামিকাল। এইসবের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তার দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক সফর করে ফিরলেন মেঘালয় থেকে। তারা দুজনেই সেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যাস্ত ছিলেন। দলকে জাতীয় দলের মর্যাদা দিতে এই তৎপরতা। যদিও সেই সাময়িক প্রচেষ্টা স্থয়িত্বলাভ করেনি। ফিরে এলেন খালি হাতে। এবার নজর ২০২৩ ও ২০২৪। প্রথমটি হল পঞ্চায়েত নির্বাচন, যার জন্য সরকারিভাবে কাজ শুরু হয়েছে। এই নির্বাচনে তৃণমূলের ফলাফল ‘পজিটিভ’ হবে নিশ্চিত। গতবার বিরোধীদের ৩৪ শতাংশ আসনে কোন প্রার্থী ছিল না। এবার তার শতাংশ বাড়বে বলে আশঙ্কা বিরোধীদের একাংশের। বিশেষত বাম-কংগ্রেসের। যদিও বিজেপি আশাবাদী । তারা রুখে দেবেন বলে হুঙ্কার দিয়েছেন।

 

উত্তরবঙ্গে কিছুটা লড়াই দিতে পারবে গেরুয়া শিবির। তবে বাকিটায় বিগ ‘জিরো’ হতেপারে। যদিও অভিষেক বলছেন পঞ্চায়েতে জোরজজোর জবরদস্তি চলবে না। অভিষেক জল মাপতে চাইছেন নিরপেক্ষ নির্বাচন করে। কিন্ত তা কেউ শুনবে বলে মনে হয়না। এ ক্ষেত্রেও দুইপক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছে জোরদার। ‘বিনাযুদ্ধে নাহি দিব সুচগ্র মেদিনী’-এই মনোভাব। কার্যত যা বিরোধীদের ফাঁকা আওয়াজ।
তবে বিজেপির আসন বাড়বে। বিভিন্ন সমীক্ষার ঈঙ্গিত সেদিকে। আমার রাজনৈতিক গবেষণা ও বিশ্লেষণ সেই দিকেরই অঙ্গুলি নির্দেশ করছে।
কিন্ত লোকসভায় তৃণমূলের কি হবে? সেটাও বড় বিষয়। তার আগে দেখা যাক সারা দেশের লোকসভার পরিস্থিতি কেমন হতে পারে আগামীর নির্বাচনে !

 

পন্ডিচেরি, আন্দামান নিকোবর, মিজোরাম, দাদরা ও নগর হাভেলি, নাগালান্ড, দামন ও দিউ, চন্ডিগড়, লাক্ষাদীপ, সিকিম এই ৯টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে ১টি করে লোকসভা আসন রয়েছ। পি সি পি নিউজের অতি সাম্প্রতি করা সমীক্ষানুসারে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে এ অঞ্চলগুলি বিজেপি জোট ‘নাশনাল ডেমোক্রেটিক আলায়েন্স’ বা এনডিএ’-র পক্ষে যাবে।
অরুণাচল, ত্রিপুরা, গোয়া, মেঘালয়, মণিপুর এই ৪টি রাজ্যে ২টি করে লোকসভার আসন রয়েছে। যার ১টি করে যাবে এনডিএ ও ১টি যাবে ইউপিএ জোটের দিকে। হিমাচল, উত্তরাখন্ড-এ যথাক্রমে ৪ ও ৫টি আসন। বেশীরভাগ এনডিএ’র পক্ষে যাবে বলে সমীক্ষার হিসাব বলছে।

জম্মু কাশ্মিরে মোট ৬টি আসন যার ২টি এনডিএ, ২টি ইউপিএ, ২টি স্থানীয় দলের পক্ষে যাবে। দিল্লির ৭টি আসন যাবে এনডিএ জোটের পক্ষে। হরিয়ানার বেশীরভাগ যাবে এনডিএর হাতে। এই রাজ্যর ১০ টির মধ্যে ৩টি আসন পেতে পারে ইউপিএ ৭টি এনডিএর হাতে। ছত্তিশগড় ১১টির মধ্যে এনডিএ ৮ টি, ইউপিএ ২ ও অন্যান্য ১টি।
পাঞ্জাবের ১৩টি আসনের ফলাফল হতে পারে ইউপিএ ৭ ও এনডিএ ৩, অন্যান্য ২টি। ঝাড়খণ্ড ও আসাম-এ ১৪টি করে আসন কিন্ত ফল বলছে আসামের ১২টি আসনে এনডিএ ঝড়। ঝাড়খণ্ডের ১০ টি আসন যাবে এনডিএতে। তেলেঙ্গনার ১৭টির মধ্যে ৬টি এনডিএ, ২টি ইউপিএ বাকিটা ৯ টি আর এস-এর পক্ষে। কেরল সবথেকে শিক্ষিত রাজ্য। এখানে বাম ও কংগ্রেসের সমানে সমানে লড়াই। এনডিএর কার্যত কোন পাত্তাই নেই।

 

২০টির মধ্যে ১৬টি ইউপিএ ৪টি এনডিএ তাও কষ্টকর হবে এনডির পক্ষে। উড়িষার ২১ এর মধ্যে ১৫টি ইউপিএ, ৩টি এনডিএ। অন্ধ্র ও রাজস্থানে ২৫টি করে আসন। যথাক্রমে ১৬ ও ২১ টি করে আসন এনডিএ পাবে বলে অনুমান। গুজরাটের ২৬টির পুরোটাই ২০১৯ বিজেপির ছিল। সদসমাপ্ত গুজরাট বিধানসভাগুলির নির্বাচনে তার পুনরাবৃত্তির কথাই বলছে। কর্ণাটক ২৮ ও মধ্যপ্রদেশে ২৮ টির মধ্যে এনডিএ ২৪টি করে, ৪টি করে ইউপিএর পক্ষে যাবে। দুটি রাজ্যেরই ট্রেন্ড এক। সমীক্ষার হিসাব বলছে তামিলনাড়ুর ৩৯ আসনে এনডিএ মাত্র ৬টি, ইউপিএ ২টি আর টিডিপি ৩১টি পেতে পারে। বিহারের ৪০টির মধ্যে ২৬টি এনডিএ, ১০টি জেডিইউ জোট পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

 

পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে এনডিএ পেতে পারে ১৬টি, ৪টি পাবে বাম-কংগ্রেস । এবং তৃণমূল ২২টি আসন পেতে পারে বলে পি সি পি নিউজের একমাসের মধ্যে করা সমীক্ষা বলছে। তৃণমূলের লাভ বা লোকসান কিছুই হল না। তবে বিজেপির ২টি আসন কমছে। দেখা যাচ্ছে এই রাজ্যে এনডিএর বর্তমান আসন ১৮টি থেকে ২টি কমছে। আর বামেরা শূন্য ছিল সেখানে তারা ওই বাড়তি ২ টি আসন পাচ্ছে। যদিও বিজেপির একাংশের দাবী তারা এবার ২৯টি আসন পাবে। আরেকটি অংশ মনে করছে ২২টি পাবে। গেরুয়া শিবির দুই ভাগে বিভক্ত। আগের থেকে ৪টি বেশী পাবে গেরুয়া শিবির। যদিও তৃণমূল মনে করে বড়জোর ৯ টি আসন পেতে পারে বিজেপি। তার একটিও বেশী পাবেনা।

 

মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের মধ্যে এনডিএ ৩২টি, ইউপিএ ৫টি, ও শিবসেনা ১১টি পেতে পারে। সবথেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ৮০ টি আসনের মধ্যে ৫৮টি পাবে এনডিএ, ৬ টি ইউপিএ ও ১৬ টি পাবে এসপি, বিএসপি ও অন্যান্য দল। উল্লেখ্য যে ২০১৯-এ এই বৃহত্তম রাজ্যে বিজেপি জিতেছিল ৬২টি আসন। বিএসপি ১০, এস পি-৫, এডিএস ২ ও কংগ্রেস ১টি মাত্র আসন পেয়েছিল। এবার দুটি আসন বিজেপি কম পেতে পারে। কংগ্রেস সারাদেশে গতবার পেয়েছিল ৪৪ টি। এটাই কংগ্রেসের ছিল সর্বনিম্ন আসন। এবার কংগ্রেসের আসন প্রায় দ্বিগুণ বাড়তে পারে। পেতে পারে ৮৩টি। ২০১৯ বিজেপির একক আসন ছিল ২৮২ টি, জোটের ৩৫৩টি আসন। এবার এই সংখ্যক আসন পাবেনা এনডিএ। বিজেপির বাড়বে, জোটসঙ্গীদের আসন কিছু কমবে।

 

যদিও সবথেকে আকর্ষনীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। বিজেপির চাঁদমারি হচ্ছ মমতা বানারজীর বাংলা। পিসি ভাইপোকে কোনঠাসা করতে সব ধরনের রাস্তা নেবার চেষ্টায় আছে গেরুয়া শিবির। কেননা এই দুজনেই প্রচণ্ড মোদি বিরোধী হিসাবে সুপরিচিত মুখ। অভিষেক এক নম্বর টার্গেট। বিরোধী দলনেতা ও পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু এই কাজটিতে মুখ্য ভূমিকায় আছেন। তার দেওয়া বিভিন্ন ‘তারিখ পে তারিখ’ আসলে ভাওতা বলে প্রমাণিত হলেও তার একটা রাজনৈতিক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। তার রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

 

কোনমতেই শুভেন্দু থামছেন না। পশ্চিমবঙ্গের তিরিশ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট বিজেপির প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এই ভোট ব্যাংকের নব্বুই শতাংশ মমতার পক্ষে যাবে বলে ধারনা। তার উপর এই মুহূর্তে সিএএ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার মমতার হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে যার ফলে মুসলিম ভোট মমতার আরও কাছাকাছি চলে এসেছে। সমীক্ষায় এসবই প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই মমতা ভাইপোকে নিয়ে মেঘালয়ে গিয়ে দলকে রাজ্যের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ত্রিপুরায় তাদের সংগঠন বেশ গড়ে উঠেছে। ফলে তৃতীয় রাজ্য হিসাবে মেঘালয়কে বেছে নিয়েছেন যার সর্বোচ্চ নেতৃত্বে থাকবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর মণিপুরের দিকেও ঝুকবেন। একটা সময়ে এখানে তৃণমূল বিধায়কেরা ছিলেন।

 

ফলে মেঘালয়ের পর তারা আরও এগোতে চান। তবে এক সঙ্গে দুই মাথা রাজ্য ছেড়ে যাওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।এমন কি ঘটনা ঘটল বা এমনকি জরুরি কারণ মেঘালয়ে দেখা দিল যে দুজনেরই সেখানে যেতে হল। আর এদিকে বগটুই কার্ডের প্রধান অভিযুক্ত লালন শেখ সিবিআই হেফাজতে আত্মহত্যা করল।। সিবিআই এর বিরুদ্ধে এমন ইসু পেয়েও তারা না থাকায় বিরোধিতা জোরালভাবে করা গেলনা। রাজনৈতিক ক্ষতি হল বলে মনে করছেন অনেকে। বিরোধীদের দাবী পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তৃণমূল দলের প্রকৃত কোন অস্তিত্ব নেই। তারা গেছেন ছুটি কাটাতে। কলকাতার চাপ সামলাতে। এখানকার মিডিয়ার লাগাতার বিষাক্ত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে সাময়িক পলায়ন।

 

পিসিপি নিউজের সমীক্ষার মতে ২০২৪-এ এনডিএ ভোট পেতে পারে ৫৯ শতাংশ ভোট, ১৫ শতাংশ যেতে পারে ইউপিএর দিকে। অন্যান্যরা পেতে পারে ২৫ শতাংশ ভোট। মোট ৫৪৩টি লোকসভার আসনের মধ্যে ৩৫০-৩৯৫টি এনডিএ পেতে পারে। ইউপিএ ৮৪, অন্যান্য ১৩৪টি আসন। তাই আগামী নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। ‘মোদি শাসন ও আচ্ছেদিনে’র প্রকৃত চিত্র ধরা পড়বে। প্রতিফলন হবে ইভিএম এর যান্ত্রিক বাক্সে। যদিও ‘ইভিএম’ নিয়েও উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন ও সন্দেহ। ।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top