“বিজেপি শকুনের জাত । অপদার্থ একটা দল জুটেছে । মনে হয় কবে এরা দেশ থেকে বিদায় নেবে । কেন্দ্রের সরকার একশো দিনের টাকা দিচ্ছে না । পাঁচ মাস ধরে সেই টাকা বন্ধ হয়ে পলড়ে আছে । এদিকে রেল , সেল , বীমা সব বিক্রি করে দিচ্ছে । গম দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে । এর বিরুদ্ধে আমাদের আরো নিবিড় প্রচারে নামতে হবে । জুনের পাঁচ ও ছয় এই দুদিন আমাদের দলের কর্মীরা বুথে বুথে ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল করে আওয়াজ তুলুন হয় একশো দিনের টাকা দাও নাহলে বিদায় নাও” ।
বুধবার বাঁকুড়ার সতীঘাটে দলীয় কর্মী সম্মেলনে যোগ দিয়ে এই ভাষাতেই বিজেপি ও কেন্দ্রের সরকারকে একযোগে কড়া সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এদিনের কর্মী সম্মেলনের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একযোগে আন্দোলনে নামার ডাকও দেন মুখ্যমন্ত্রী । পেট্রো পণ্য ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়েও এদিনের মঞ্চ থেকে সরব হতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে । তিনি বলেন, “ ভোটের আগে বাড়িতে বাড়িতে উজালা যোজনার গ্যাস দিয়েছিল বিজেপি সরকার । মা বোনেরা ভেবেছিলেন কতই না ভালো হল । উজালা আসলে ধোকালা ও হাওয়ালা । এখন মা বোনেদের আতশো টাকা দিয়ে সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে । স্টোভে রান্না করে খাবেন তারও উপায় নেই ।
কারন কেরোসিনের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে । অগত্যা ফের হেঁসেলে কাঠের আগুন জ্বালাতে হচ্ছে” । কর্মসঙ্গস্থানের প্রশ্নেও এদিন কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, “ সম্প্রতি কেন্দ্রের সরকার রেলের হাজার হাজার শূন্যপদ বাতিল করেছে । দেশের মোট ৪০ শতাংশ চাকরী কেড়ে নিয়েছে বিজেপি । সেখানে আমাদের রাজ্যের জঙ্গলমহলের বড়জোড়া , বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে । এতে লক্ষ লক্ষ বেকারের চাকরী হবে । আমি আগেই বলেছিলাম নোটবন্দী কোনো কাজে লাগবে না । এখন বিভিন্ন সংস্থা রিপোর্ট দিচ্ছে নোটবন্দী করে আসলে ক্ষতিই হয়েছে । বিজেপি কয়লা ও গরু কান্ডে সিবিআই ও ইডির নোটিশ পাঠাচ্ছে । আমি বলবে নোট বন্দীর ভেজাল টাকা কোথায় গেল তার আগে জবাব দাও ।
জবাব তোমাকে দিতেই হবে , নইলে গদি ছাড়তে হবে” । বাঁকুড়া জেলায় বিগত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে তৃনমূলের আশানুরূপ ফল না হওয়ার কথা কর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন দলের কর্মীদের উদ্যেশ্যে বলেন, লোকসভায় বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় আমরা হেরেছিলাম । বিধানসভাতেও ভালো ফল না হলেও আমরা সরকার গড়েছি । ভালো ফল না হওয়ায় আমার মন খারাপ হয়েছিল । এই অবস্থাতেও আমি যদি এই জেলাতে আসতে পারি তাহলে আপনারা কেন পারবেন না । গত এক বছর আপনারা হয়তো মন খারাপ করে কোনো কাজ করেননি । এখন আপনার ফের মানুষের দরজায় দরজায় যান । দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে যান ।
সেখানে আধিকারিকদের বিরক্ত না করে একটা টুল নিয়ে বসে পড়ুন । মানুষের ফর্মগুলো পূরন করে দিন । তাহলেই দেখবেন মানুষ আপনাকে ধন্যবাদ , দুয়া , জোহার জানাচ্ছে । মনে রাখবেন আমরা ছিলাম , আমরা আছি , আমরাই থাকব । এই লড়াইয়ের নাম তৃনমূল । তৃনমূল কারো কাছে মাথা নোয়ায় না । রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো তৃনমূল মাথা উঁচু করে বাঁচে” । মাওবাদী প্রসঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একসময় বাঁকুড়া , পুরুলিয়া , ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর রক্তে ভেসে যেত । সেই জেলাগুলিতে এখন শান্তি ফিরেছে ।
আরও পড়ুন – পান চাষিদের পাশে দাঁড়াতে এবার উদ্যোগ নিল হাওড়া জেলা পরিষদ
এতে পুলিশ ও প্রশাসনের যেমন ভূমিকা আছে তেমনই আমার দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষেরও ভূমিকা রয়েছে” । কে কে র মৃত্যু সংবাদ শোনার পর এদিনের কর্মীসভায় মাত্র কুড়ি মিনিটের বক্তব্য রেখে মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে চড়ে অন্ডালের উদ্যেশ্যে রওনা দেন । বক্তব্যের শুরুতেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ বলিউডের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী কে কে কে আমরা হারিয়েছি । তাঁর স্ত্রীর সাথে আমার টেলিফোনে কথা হয়েছে । শিল্পীকে শেষ দেখার চেষ্টা করছি আমি । তাই সভা সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে । কখনো কখনো এটা করতে হয়” ।