কোটি টাকার ঘুষ চক্র ফাঁস, সিবিআই চার্জশিটে চাঞ্চল্যকর তথ্য!

কোটি টাকার ঘুষ চক্র ফাঁস, সিবিআই চার্জশিটে চাঞ্চল্যকর তথ্য!

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

পশ্চিমবঙ্গ- পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে নয়া মোড়। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই তাদের তৃতীয় অতিরিক্ত চার্জশিটে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে। অভিযোগ, পরীক্ষার্থীদের খালি খাতা জমা দিতে বলা হয়েছিল, অথচ তাঁরা পাশ করেছেন!



কিন্তু কিভাবে? গোপনে কোটি কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন হয়েছিল, যা এজেন্টদের ডায়েরিতে বিশদে লিপিবদ্ধ ছিল।



চার এজেন্টের ডায়েরিতে কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন: সিবিআইয়ের চার্জশিটে চারজন এজেন্ট- শেখ আব্দুল সালাম, বকুল বিশ্বাস, রৌসন আলম ও তৃস্তান মান্নার নাম উঠে এসেছে। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া ১০টি ডায়েরিতে বিশদে লেখা ছিল চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নেয়া ঘুষের হিসাব।



তদন্তকারীদের দাবি, এই টাকা প্রথমে অরুণ কুমার হাজরা ওরফে চিনু হাজরার কাছে যেত এবং সেখান থেকে তা পৌঁছত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র কাছে। কখনও সুজয়কৃষ্ণের বাড়িতে, কখনও ‘বেহালা উত্তরসূরি’ ক্লাবে, আবার কখনও ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর দফতরে টাকা লেনদেন চলত।



সাদা খাতা দিয়েও পাশ, ৭৮ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ: চার এজেন্টের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, চাকরিপ্রার্থীদের বলা হয়েছিল, লিখিত পরীক্ষার দিন খালি ওএমআর শিট জমা দিতে। পরীক্ষার পর ঘুষ দিলে তাঁদের পাশ করিয়ে চাকরি নিশ্চিত করা হবে।


সালাম নামের এক এজেন্ট জানিয়েছেন, উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় আট লক্ষ টাকা দাবি করা হয়েছিল। পরীক্ষার পরে এক প্রার্থীর বাদে সবাই পাশ করেন। প্রতি প্রার্থীর কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা করে ঘুষ নেয়া হয়। সিবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই চক্রটি ৭৮ কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন করেছিল। পরে চাকরি না পেয়ে কিছু টাকা ফেরতও দিতে হয়েছিল।


‘যুবরাজ’ পর্যন্ত পৌঁছেছিল টাকা? চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে ‘বস’ বলা হত এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘যুবরাজ’ বলে উল্লেখ করা হত। সুজয়কৃষ্ণ দাবি করতেন, তিনি ‘যুবরাজের’ ঘনিষ্ঠ। চাকরি না পাওয়া অনেক প্রার্থী টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাঁদের হুমকি দেয়া হত। কেউ কেউ টাকা ফেরত পেয়েছিলেন, আবার অনেকেই পাননি।



অপরাধ ঢাকতে প্রমাণ নষ্টের চেষ্টা: সালাম জানিয়েছেন, কুন্তল ঘোষ গ্রেফতার হওয়ার পর সুজয়কৃষ্ণ তাঁকে বারবার ফোন করে সমস্ত তথ্য মুছে ফেলার নির্দেশ দেন। সুজয়কৃষ্ণ নিজেও দুটি মোবাইল ফোন কালীঘাটের আদিগঙ্গায় ফেলে দেন।



১২৫ নম্বর পেলেন, অথচ সাদা খাতা জমা দিয়েছিলেন! তৃস্তান মান্না নামের এক এজেন্ট জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী উচ্চ প্রাথমিকে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন। তাঁকে পরীক্ষায় খালি ওএমআর শিট জমা দিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু পরে তিনি ১২৫ নম্বর পেয়েছিলেন! এই ঘটনার পর থেকেই অরুণ কুমার হাজরার উপর আরও ভরসা বাড়ে চাকরিপ্রার্থীদের।


চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশের পর কি পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রশাসন? সিবিআই ইতিমধ্যেই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেফতার করেছে। যদিও তিনি বর্তমানে অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্ত। চার্জশিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।



তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই চার্জশিটকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা হয়েছে। তবে সাদা খাতা জমা দিয়েও চাকরি পাওয়ার মতো ঘটনা যে পশ্চিমবঙ্গের নিয়োগ দুর্নীতির ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top