পারলে একটু কাঁদুন! কাউকে কাঁদতে দেখলেই প্রথমই যে চিন্তাটা মাথায় আসে, তা হল নিশ্চয় মানুষটা খুব কষ্টে আছে, তাই তো সময় নষ্ট না তার কান্না থামাতে আমরা লেগে পড়ি। সান্ত্বনা দিতে থাকি। কিন্তু সান্ত্বনা না দিয়ে তাঁকে যদি কাঁদতেই বলা হয়? বিষয়টা একটু আশ্চর্য লাগে বইকি। কিন্তু ঘটনা তেমনই। আপনি হয়ত ভাববেন পাগল হয়ে গেছে নাকি! না একটু আধটু পাগল হলেই কি !
আর কেন এমনটা বলছি জানেন? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কাঁদার সময় আমাদের শরীরের একাধিক উপকার হয়ে থাকে, যা নানবিধ রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে কেউ যখন কান্নাকাটি করে তখন আমাদের শরীরের অন্দরে নানা পরিবর্তন হতে থাকে, যে কারণে নানা সুফল পাওয়া যায়। কান্না শুধু আপনার আবেগকে প্রশমিতই করে না – কঠিন সময়গুলো পার করার জন্য মানুষের শরীরকে তৈরি করে।মানুষ যখন অসহায় বোধ করে, তখন বেশি কাঁদে। কেঁদে যদি অবস্থার উন্নতি ঘটে, তখন সে স্বস্তি বোধ করে।
১। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কাঁদলে চোখ শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় ৷ জীবাণুর হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায় ৷ চোখের জলে লিসোজাইম নামের এক উপাদান থাকে। এটি অধিকাংশ জীবাণুকে মেরে দেয় ৷ ধুলো ও ধোঁয়া থেকে চোখে যে নোংরা জমে চোখের জল তা পরিষ্কার করে দেয়। আর মনোবৈজ্ঞানিকেরা জানাচ্ছেন, কাঁদার পরে মানুষ মানসিক ভাবে অনেক হালকা হয়ে যান।
২। নানাভাবে, নানা কারণে সারা দিন ধরে আমাদের রক্তে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান মিশতে থাকে। এইসব ক্ষতিকর উপাদানগুলিকে যদি দেহ থেকে বার না করে দেওয়া যায়, তাহলে শরীরের উপর মারাত্নক কুপ্রভাব পরে। কাঁদার সময় শরীরে উপস্থিত এইসব টক্সিক উপাদান চোখের জলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোনও ধরনের শারীরিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।।
৩। কাঁদার সময় আমাদের মনের চঞ্চলতা কমে যেতে শুরু করে। ফলে সুখ হোক কী দুঃখ, যে কারণেই চোখে জল আসুক না কেন, মনের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে কোনও কষ্টই হয় না। তাই তো কান্নার পর আমাদের এতটা হলকা লাগে। মনে হয় বুকে আটকে থাকা একটা বড় আকারের পাথর যেন নেমে গেল।
৪। সময় চোখের জলের সঙ্গে লাইসোজাইম নামে একটি রাসায়নিকও শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। এই উপাদানটি ৫-১০ মিনিটের মধ্যে আমাদের শরীরে উপস্থিত প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ জীবাণুদের মেরে ফেলে। ফলে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
৫। কান্নার সময় “প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভ সিস্টেম” অ্যাকটিভেট হয়ে যায়। আর এমনটা হওয়ার কারণে সমস্ত ধরনের ব্যথা, যন্ত্রণা এবং শারীরিক কষ্ট কমে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীর একেবারে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। আসলে মনের কষ্টে চোখের পাতা যখন জলে ভরে যায়, তখন আমাদের কারও পক্ষেই শরীরের এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলি খেয়াল করা সম্ভব হয় ওঠে না। কিন্তু বাস্তবে কিন্তু এমনটা হয়ে থাকে।
আর ও পড়ুন পথ কুকুরের লেজে বাজি বেঁধে উল্লাস, আটক ৯ জন
৬। কান্নাকাটি করার সময় ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড থেকে বেরতে থাকা জল, চোখের অন্দরে জমে থাকা ময়লা বার করে দেয়। সেই সঙ্গে আইবল এবং আইলিডকে এত মাত্রায় লুব্রিকেট করে দেয় যে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, আরেকভাবে কান্নার সময় আমাদের চোখের উপকার হয়ে থাকে। সেটা কিভাবে? চোখের জল, চোখের অন্দরে থাকা একাধিক মিউকাস মেমব্রেনকে তরতাজা করে দেয়। ফলে দৃষ্টিশক্তির বেড়ে যেতে একেবারে সময়ই লাগে না।